বৃষ্টিশেষে দেখা মিলবে শীতের

63

পৌষের শুরুতেই বঙ্গোপসাগরের ভারতীয় উপকূলে অপস্রিয়মান ঘূর্ণিঝড় ‘ফেথাই’-এর প্রভাবে চট্টগ্রামসহ দেশের অধিকাংশ জেলায় অব্যাহত থাকা হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত আজ বুধবার থেকে কমে আসতে পারে। গতকাল মঙ্গলবার প্রভাবজনিত এই বৃষ্টির রেশ এবং কবলিত এলাকা কিছুটা বেড়েছে। আর বৃষ্টিশেষেই দেখা মিলবে শীতের। মেঘ কেটে গিয়ে কমতে থাকবে রাত ও দিনের তাপমাত্রা। এমনকি, চলতি ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে একটি মৃদু বা মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।
এদিকে, আবহাওয়ার দীর্ঘমেয়াদি (ত্রৈমাসিক) পূর্বাভাসের বরাত দিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ পূর্বদেশকে বলেন, ‘এখন রাতের তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে কমছে। যার ধারাবাহিকতায় ডিসেম্বর মাসের শেষার্ধে দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে একটি মৃদু বা মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল
ও মধ্যাঞ্চলে একটি মাঝারি বা তীব্র ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। অন্যান্য স্থানে এক থেকে দুটি মৃদু বা মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। এই সময়ে তাপমাত্রার পারদ ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে নেমে যেতে পারে। পৌষ মাসের শেষার্ধ ও মাঘ মাসের প্রথমার্ধ মিলে হবে জানুয়ারি মাস।’
প্রসঙ্গত, চার থেকে ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ, ছয় থেকে আট ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে মাঝারি এবং আট থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ হিসেবে গণ্য করা হয়। বাংলা বর্ষপঞ্জিকার ষড়ঋতুর হিসেবে কাগজে-কলমে পঞ্চম ঋতু শীত শুরু হয় পৌষ মাসে। আর ঋতু বৈচিত্র্যের নিজস্বতায় শীত থাকে মাঘ মাস পর্যন্ত। কিন্তু, প্রকৃতিতে এর আগে-পরেও শীতের আমেজ অনুভূত হয়। সাধারণত নভেম্বর-ডিসেম্বর হল, বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির মৌসুম। এই ঝড় প্রবল হলে জান-মাল-ফসলের ব্যাপক ক্ষতির কারণ হয়। আর ফেথাই-এর মত হলে দু-এক দিনের জন্য জনজীবনে কিছুটা সমস্যা সৃষ্টি করে। বৃষ্টি বেশি হলে পাকা ধানের কিছু ক্ষতি হয়। পাশাপাশি রবিশস্যের মাঠ অনেক সমৃদ্ধ হয়। মৌসুমি শাকসবজির ফলন বাড়ে। ঘূর্ণিঝড় ফেথাই জনজীবনে তেমন কোনো সমস্যা সৃষ্টি করেনি।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্র থেকে সর্বশেষ আবহাওয়া পরিস্থিতি নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত সুস্পষ্ট লঘুচাপটি উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় লঘুচাপ আকারে অবস্থান করছে। এটি আরও বৃষ্টি ঝরিয়ে ল্ডমান্বয়ে দুর্বল ও গুরুত্বহীন হতে পারে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্র বন্দরসমূহের উপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরসমূহকে তি নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে। কারণ, উত্তর বঙ্গোপসাগর যথেষ্ট উত্তাল রয়েছে।
অপরদিকে, সারাদেশে এখন শীতের আগমনী বার্তার পাশাপাশি বইছে নির্বাচনী আমেজ। প্রচার-প্রচারণার উত্তাপ আর প্রতিশ্রæতির জোয়ারে ভাসছে সাধারণ ভোটাররা। নির্বাচনী তফসিলে আগামী ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ করার দিন ধার্য রয়েছে। ওইদিন কেমন হতে পারে দেশে আবহাওয়া পরিস্থিতি? ভোটরঙ্গের নানা কৌতুহলের সাথে প্রকৃতির সম্ভাব্য গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে জানতে চাইলে সার্ক আবহাওয়া সাবেক বিজ্ঞানী আবহাওয়াবিদ আব্দুল মান্নান পূর্বদেশকে বলেন, গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে উপকূলীয় এলাকায় মেঘ-বৃষ্টির প্রবণতার পর তাপমাত্রা কমতে থাকবে। আমরা আশা করছি, ১৯ ডিসেম্বরের পর পৌষের আকাশে রোদের ঝিলিকের পাশাপাশি দিন ও রাতের তাপমাত্রা কমে যাবে। এসময় দেশের কিছু কিছু অঞ্চলে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বইতে পারে। আগামী ৩০ ডিসেম্বর ভোটের দিন সারাদেশে শীত থাকবে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত কুয়াশায় ঢাকা থাকতে পারে অধিকাংশ অঞ্চল। সূর্যের কিরণ ছড়িয়ে পড়া সাপেক্ষে প্রকৃতি কুয়াশার চাদরও গুটিয়ে নেবে।
শীতকালে তাপমাত্রা কমে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে আবহাওয়া অধিদপ্তরের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ আরিফ হোসেন জানান, বাংলাদেশের অবস্থান বিষুব রেখার উত্তরে। কিন্তু শীতকালে অবস্থান পরিবর্তন করে সূর্য বিষুব রেখার দক্ষিণে চলে যায়। এখন সূর্যের দক্ষিণায়ন চলছে। ২৩ সেপ্টেম্বরের পর থেকে সূর্যের দক্ষিণায়ন শুরু হয়। সূর্য বাংলাদেশ ও হিমালয় অঞ্চলের ওপর থেকে দক্ষিণে সরে গিয়ে শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর বরাবর থাকবে। এতে বাংলাদেশসহ হিমালয়ের দিকে সূর্যের তাপটা কম পড়ে। হিমালয় পর্বতমালার কারণে সেখানকার পুরো ঠান্ডা বাতাস আমাদের এখানে আসে না। এটা যদি আমাদের দেশে আসত, তাহলে এখানেও আমেরিকার মত বরফ পড়ত। বাধা পেয়ে হিমালয় পর্বতমালার দক্ষিণ দিক দিয়ে অল্প একটু প্রবাহিত হয়। শীতকালে অবস্থান পরিবর্তন করে সূর্য বিষুব রেখার দক্ষিণে চলে যাওয়ায় ওই সময়ে বাংলাদেশে দিনের পরিধি ছোট হয়। আর রাত হয় দীর্ঘ।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের উত্তরে হিমালয় পর্বতমালা। সেখান থেকে বরফশীতল বায়ু বাধা ডিঙিয়ে এ দেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। কখনও কখনও তা তীব্র শীতের অনুভূতি নিয়ে শৈত্যপ্রবাহে পরিণত হয়। সাধারণত মাঘ মাসেই হাড়কাঁপানো শীতের দেখা মেলে।
অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা ছয়টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘন্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায়; ঢাকা, বরিশাল ও ময়মনসিংহ বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং খুলনা, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের দুই-এক জায়গায় হালকা থেকে মাঝারি ধরণের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা এক থেকে তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস হ্রাস পেতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা এক থেকে দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেতে পারে। গতকাল মঙ্গলবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩২ দশমিক চার ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে সীমান্তবর্তী কক্সবাজার জেলার টেকনাফে। আর সর্বনি¤œ ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে ঢাকা অঞ্চলের নিকলীতে। সর্বোচ্চ ৫১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে সিলেটের শ্রীমঙ্গলে।