বৃষ্টির কারণে বেড়েছে আমের দাম

169

সারাদেশে টানা বৃষ্টিপাতের কারণে বেড়ে গেছে সব ধরনের ফলের দাম। চট্টগ্রামের ফলমন্ডির ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে আমসহ অন্যান্য ফলের দাম একটু বাড়তি। হঠাৎ করে ফলের মূল্য বৃদ্ধিতে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ের ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে বাকবিতন্ডার ঘটনাও ঘটছে। বিশেষ এখন আমের ধুম মৌসুম চললেও গত দুই-একদিনের মধ্যে আমের মূল্য বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে।
গতকাল শুক্রবার সরেজমিনে নগরীর বিআরটিসি এলাকায় অবস্থিত বৃহত ফলের আড়ৎ (ফলমÐি) এ গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন জাতের আমের পসরা সাজিয়ে ক্রেতার অপেক্ষায় পাইকারি ব্যবসায়িরা। চার রকমের আম তথা ফজলী, রূপালী, আশ্বিনি এবং লক্ষণভোগ বিক্রি করছেন তারা। ব্যবসায়ীরা জানান, পাইকারি পর্যায়ে ফজলী আম বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায় যা খুচরা পর্যায়ে ৮০ থেকে ৯০ টাকা। রূপালি (যাকে আম্রপালিও) পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৯০ টাকায় যা খুচরা পর্যায়ে ১১০ থেকে ১২০ টাকা।
আশ্বিনি’র পাইকারি দর ২৫ থেকে ৩৫ টাকা, যা খুচরা পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। আর লক্ষণভোগ বা লগ্না পাইকারি ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে যা খুচরা পর্যায়ে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
তবে খুচরা বিক্রেতা এবং সাধারণ ক্রেতাদের অভিযোগ, অতিরিক্ত দাম রাখার অভিপ্রায়ে আম সংরক্ষণ করে রাখছেন পাইকারী বিক্রেতাদের কেউ কেউ। ফল কিনতে আসা খুচরা ব্যবসায়ী আল আমিন জানান, গত সপ্তাহে যে আম ৫০ টাকার মধ্যে কিনেছিলাম সেটি আজ (শুক্রবার) কিনতে হচ্ছে ৮০-৯০ টাকায়। তাহলে আমরা কি বিক্রি করবো? পাবলিক (সাধারণ ক্রেতা) বেশি দাম দিয়ে আম নিতে চায় না।
আরেক বিক্রেতা মোশাররফ বলেন, বৃষ্টির মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য মন্দা যাচ্ছে। তার উপরে এতো দাম। কিভাবে কি করবো বুঝতে পারছি না।
ক্রেতাদের সাথে কথা বললে মেহনুর জান্নাত নামে এক গৃহিণী পূর্বদেশকে জানান, প্রতিদিন বাসায় একটা না একটা ফল রাখতেই হয়। পরিবারের অন্যান্যদের পাশাপাশি বাচ্চাদের ফল খাওয়ানোর অভ্যাস করছি। কিন্তু যে হারে দাম বাড়ছে সামনের দিনগুলোতে ফল কিনে বাচ্চাদের খাওয়াতে পারবো কি না জানি না।
উল কিনতে আসা মো. ছাবের হোসেন জানান, ‘কি ফল কিনবো ভাই। দিন দিন দাম বেড়ে যায়। গতকাল এক রেইট আজকে আরেক রেইট। আ¤্রপালি কিনতে আসছি। তিনদিন আগে নিলাম ৫০ টাকায়, আর আজকে নিচ্ছি ৮০ টাকায়, তাও নাকি একদাম। তারা বলছে পাইকারি বেশি দামে কিনতে হচ্ছে বিধায় খুচরা পর্যায়েও তারা বেশি নিচ্ছে’।
ফলমÐি ব্যবসায়ী সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আলমগীর জানান, সড়ক পথে ফল বাজারে আসছে কম। অনেক দূর থেকে ফল আনতে হয় বিধায় বৃষ্টি-বাদলের সময় কেউ রিস্ক নিতে চায় না। আমাদেরও বেশি দামে কিনতে হচ্ছে বিধায় সামান্য লাভ করে আমরাও বিক্রি করে দিচ্ছি। কিছু কিছু ফলের ক্ষেত্রে আমাদেরকে কমিশন দেয়। যেমন, আমি যে আমদানিকারকের কাছ থেকে ফল কিনলাম তা যদি নির্দিষ্ট দামে বিক্রি করতে পারি তাহলে আমদানিকারক আমাকে ১০ শতাংশ হারে কমিশন দিবে। কিন্তু ফল সরবরাহ না থাকলে কিভাবে আমরা বিক্রি করবো? যা আছে তাও তো বেশি।
ফলমÐি ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আলমগীর পূর্বদেশকে বলেন, চট্টগ্রাম মহানগরসহ পার্শ্ববর্তী এলাকাসমূহে ফলের চাহিদা পূরণ করা হয় এ ফলমÐি থেকে। সুতরাং এখানে একটু দাম বাড়তি থাকলে অন্যান্য খুচরা পর্যায়ে তার প্রভাব পড়ে। তিনি বলেন, আমরা আম আনি রাজশাহীর বিভিন্ন জেলা থেকে। ওখান থেকে খবর নিয়ে যতটুকু জানতে পারলাম তা হলো- প্রবল বৃষ্টিরপ কারণে আম চাষীরা কয়েকদিন ধরে আম ছিড়তে পারেনি। আবার কেউ আম ছিড়লেও পরিবহন করা দুষ্কর ছিল। ফলে একটু খারাপ অবস্থা যাচ্ছে।
ফল মজুদের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি তা অস্বীকার করে বলেন, ফলমন্ডির কোনো ব্যবসায়ী ফল মজুদ করে রাখেননি বা রাখার সুযোগ নেই। কারণ আম পচণশীল। দুই-একদিনের বেশি রাখা যায় না। আবহাওয়া একটু ভালো হলে ফলের দাম আবার আগের পর্যায়ে চলে আসবে।