বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে

36

হেমন্তের কৈশোরে উত্তর আন্দামান সাগর হয়ে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট মৌসুমের প্রথম প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ সুন্দরবনে বাধা পেয়ে শক্তি হারিয়ে স্থল নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার পর অবশেষে লঘুচাপ আকারে দেশের সীমান্ত অতিক্রম করেছে।
গতকাল সোমবার সকাল নয়টার দিকে এটি লঘুচাপের কেন্দ্র কুমিল্লা জেলার উপর অবস্থান করলেও দুপুর নাগাদ তা দেশের সীমান্ত অতিক্রম করে প্রতিবেশি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের দিকে চলে যায়। তবে, লঘুচাপের সাথে আকাশে থাকা বৃষ্টিবাহী মেঘমালার কারণে গত দু’দিন ধরেই চট্টগ্রামসহ কয়েকটি বিভাগে আকস্মিকভাবে ব্যাপক বৃষ্টিপাত হয়েছে। আকস্মিক বৃষ্টিপাতের এই ধারা চট্টগ্রাম বিভাগ ছাড়াও ঢাকা বিভাগের পূর্ব অংশ, সিলেট বিভাগ এবং বরিশাল বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় আগামীকাল বুধবার পর্যন্ত কমবেশি অব্যাহত থাকতে পারে। কখনওবা আকাশে মেঘ-সূর্যের লুকোচুরির দেখা মিলতে পারে। তবে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে দিনের বেলা সূর্যকিরণ ক্রমেই প্রখর হয়ে উঠবে।
দেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্র থেকে গতকাল সোমবার প্রচারিত সর্বশেষ আবহাওয়া পরিস্থিতি জানিয়ে আবহাওয়াবিদ খো. হাফিজুর রহমান বলেন, উত্তর বঙ্গোপসাগর, সমুদ্র বন্দরসমূহ এবং বাংলাদেশের উপক‚লীয় এলাকায় ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়ার শঙ্কা নেই। চট্টগ্রাম, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহ এবং কক্সবাজার উপক‚লীয় অঞ্চল থেকে সংকেত নামিয়ে ফেলতে বলা হয়েছে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল শক্তি হারিয়ে স্থল নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার পর গত রবিবার সকাল থেকেই কার্যত চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর ও শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সব ধরণের অপারেশনাল কার্যক্রম পুনরায় শুরু হয়। এর আগে শুক্রবার রাতে দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্রবন্দরের সব ধরণের কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। জারি করা হয় চার মাত্রার সতর্কতা। বন্দরের জেটি থেকে সব জাহাজ বহির্নোঙরের দিকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তখন বন্দর জেটিতে ১৮টি আর বহির্নোঙরে ১৪৯টি জাহাজ অবস্থান করছিল। এর মধ্যে ৫৩টি জাহাজ পণ্য খালাসের জন্য জেটিতে আসার অপেক্ষমাণ ছিল।
বন্দর সচিব ওমর ফারুক জানান, ঝড়ের বিপদ কেটে যাওয়ার পর গত রবিবার অর্থাৎ সরকারি ছুটির দিন সকালে চার মাত্রার সতর্কতা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। এরপর ধীরে ধীরে অপারেশনাল কার্যক্রম চালু করা হয়। বহির্নোঙরে পাঠানো জাহাজগুলোকে জেটিতে ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি বহির্নোঙরে লাইটারেজ জাহাজে পণ্য খালাস কার্যক্রম শুরু করা হয়। গতকাল সোমবার সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে আসে।
একইভাবে ঘূর্ণিঝড়ের কারণে গত শনিবার বিকালে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ফ্লাইট অপারেশনও ১৪ ঘণ্টার জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল।
বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক উইং কমান্ডার সারোয়ার-ই-আলম জানান, আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে বিপদ সংকেত নামিয়ে ফেলার কথা জানানোর পর রবিবার সকাল সাতটা থেকে ফের বিমানবন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম শুরু করা হয়। চালুুর পর সকাল আটটা ৩৭ মিনিটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট ঢাকা থেকে এসে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। গতকাল সোমবার বিমানবন্দরে সিডিউল মোতাবেক সবকটি আন্তর্জাতিক ও অঅভ্যন্তরীণ ফ্লাইট নির্বিঘেœ উড্ডয়ন ও অবতরণ করেছে।
অপরদিকে, ঘূর্ণিঝড় বুলবুল দুর্বল হয়ে স্থল নি¤œচাপে পরিণত হওয়ার পর গত রবিবার পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবীর সরকারি ছুটির দিনে বিকাল গড়াতেই চট্টগ্রামে ব্যাপক বৃষ্টি নামে। টানা বর্ষণে নগরীর অধিকাংশ এলাকায় জলাবদ্ধতার পাশাপাশি যানজট ও জলজটের সৃষ্টি হয়। এতে দুর্ভোগের কবলে পড়ে নগরবাসী। আবহাওয়া অফিস রবিবার সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত নগরীতে ২৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করে। রাত দশটা পর্যন্ত নগরীর প্রবর্তক মোড়, জামালখান, ষোলশহর, সিডিএ এভিনিউ, মুরাদপুর, বাকলিয়া, বহদ্দারহাট, চাঁন্দগাও, আগ্রাবাদ, হালিশহরসহ শহরের নিম্নাঞ্চলসমূহে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের মে ও জুনে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ফণী ও বায়ু উপক‚লে আঘাত হেনেছিল। যদিও এ দুটি ঘূর্ণিঝড় ভারতের উপকূলীয় কয়েকটি রাজ্যে ব্যাপক তান্ডবলীলা চালায়। ক্রমশ শক্তি হারিয়ে দুর্বল হয়ে যাওয়ায় ঘূর্ণিঝড় দুটি দেশের ওপর বড় ধরণের ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারেনি। তার আগে ২০১৮ সালে ভারতের উড়িষ্যায় তিতলি, ২০১৭ সালে মোরা, ২০১৬ সালে রোয়ানু, ২০১৫ সালে কোমেন এবং ২০১৩ সালে মহাসেন দেশের উপক‚লীয় জেলাগুলোতে ভয়ঙ্কর তান্ডবলীলা চালিয়েছিল।