বৃষ্টিধারায় শরৎ এলো বন্যার আভাস নিয়ে

117

শ্রাবণের বিদায়ের রাতে নগরীতে বৃষ্টি নেমেছিল অঝোর ধারায়। শাওন-ভাদোর সন্ধিক্ষণের সেই বৃষ্টিধারা গতকাল শুক্রবার দিনের আলো ফোঁটা অবধি থামতে চাইনি। তাতে বৃষ্টিধারার উত্তরাধিকার নিয়েই এবার পথচলা শুরু হল শান্ত-স্নিগ্ধ-কোমল রূপের ঋতু শরতের। আর দেশের পাশাপাশি উজানে ভারতীয় অংশে ব্যাপক বৃষ্টি শুরু হওয়ায় ভাদ্রের মাঝামাঝি কিংবা চলতি আগস্টের শেষদিকে নদ-নদীর পানি বেড়ে দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে আরেক দফা স্বল্পস্থায়ী বন্যার পূর্বাভাসও দিয়ে রেখেছে সরকারের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। এ বন্যার দৈর্ঘ্য হতে পারে দুই থেকে তিন দিনের।
বিরাজমান প্রকৃতিতে যা-ই থাকুক না কেন, বাংলা বর্ষপঞ্জির হিসাবের পাতায় কিন্তু শুক্রবারই ছিল পয়লা ভাদ্র। পবিত্র ঈদুল আযহার ছুটির জেরে সাপ্তাহিক ছুটির দিনেই শুরু হল শরতের যাত্রা। বিলে শাপলা, গাছে গাছে শিউলির মন মাতানো সুবাসে অনুভূত হয় শরতের ছোঁয়া। বাংলা রূপময় ষড়ঋতুতে শরতের রূপ বরাবরই শান্ত-স্নিগ্ধ-কোমল। যেখানে নেই মলিনতা, আছে নির্মল আনন্দ আর অনাবিল উচ্ছ¡াস। শরতে শেফালি, মালতী, কামিনী, জুঁই, টগর আর দুধসাদা কাশফুল মাথা উঁচিয়ে জানান দেয় বাংলার প্রকৃতির নয়নাভিরাম সৌন্দর্য। ওই কাশফুলই যেন শরতের স্মারক। জল-ছলছল দিঘিতে পাপড়ি মেলে ধরে অপরূপ পদ্মফুল। মিষ্টি সুবাস ছড়িয়ে দেয় চারপাশে।
এর আগে আবহাওয়ার গতিপ্রকৃতি পর্যবেক্ষণকারী দেশি-বিদেশি কয়েকটি বেসরকারি সংস্থা শ্রাবণের বিদায়বেলায় সাগরে লঘুচাপ থেকে সৃষ্ট স্থল নিম্নচাপের প্রভাব কেটে যাওয়ার পর জানিয়েছিল, উত্তর বঙ্গোপসাগরে মৌসুমি বায়ুর অবস্থানও মোটামুটি দুর্বল। এতে বৃষ্টিপাত কমে গিয়ে আর্দ্রতাজনিত ভ্যাপসা গরম অনুভূত হলেও পবিত্র ঈদুল আযহা কিংবা কোরবানির ঈদের দিন থেকেই ফের বাড়তে পারে বৃষ্টির প্রবণতা। বিদায়ী শ্রাবণধারা কমবেশি অব্যাহত থাকতে পারে ঈদের পুরো সপ্তাহজুড়েই। সার্বিকভাবে বৃষ্টিপাতের ধরন হতে পারে হালকা থেকে মাঝারি। তবে কোথাওবা বিক্ষিপ্তভাবে ভারী বর্ষণের আভাসও দেয়া হয়েছিল। আরও বলা হয়েছিল, ঈদের সপ্তাহজুড়েই দেশ থাকবে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাতের দখলে। তবে শ্রাবণের বিদায়ী বর্ষণধারায় থাকবে ক্ষণিক সময়ের বিরতি। দিনের আকাশ প্রধানত মেঘলা থাকলেও ফাঁকফোকরে মেঘের আড়াল সরিয়ে উঁকি দিতে পারে সূর্যও। এক্ষেত্রে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল, মধ্যাঞ্চল এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের কিছু কিছু জায়গায় অপেক্ষাকৃত কম বৃষ্টিপাত হবে। এ সময় রাজধানী ঢাকা, ময়মনসিংহ, সিলেট, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় বিক্ষিপ্তভাবে ভারী বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের আভাস রয়েছে। অন্যান্য স্থানে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে। ঈদের আগে দেয়া পূর্বাভাসের সাথে অনেকটাই মিল রেখেই পথ চলেছে প্রকৃতি। তারই ধারাবাহিকতায় আজ শনিবারও কমবেশি বৃষ্টিপাত হতে পারে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। পরদিন থেকে হ্রাস পেতে পারে বৃষ্টির প্রবণতা। তবে, আগামী বৃহস্পতিবার অর্থাৎ ২৩ আগষ্ট থেকে ফের বৃষ্টিপাত বাড়তে পারে দেশজুড়ে। তখন ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিবলয়ে আক্রান্ত হওয়ার আলামতও দেখছেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া জানান, বাংলাদেশের উজানে ভারতীয় অংশে ব্যাপক বৃষ্টি শুরু হয়েছে। এর প্রভাবে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে নদীর পানি বেড়ে যেতে পারে। এর ফলে সেখানকার নিম্নাঞ্চলে স্বল্পস্থায়ী বন্যার আশঙ্কা আছে। এছাড়া গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার পানিও বাড়ছে। আগামী সপ্তাহের শুরু থেকে পানি আরও বেড়ে চলতি মাসের শেষের দিকে দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে আবারও দুই থেকে তিন দিনের একটি বন্যা হতে পারে।