বৃষ্টিতে ছাড়ছে বর্জ্য পড়ছে হালদায়

34

হাটহাজারীর ১১ মাইলে অবস্থিত ১০০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্ট। কয়েক দিনের ভারিবৃষ্টি বর্ষণের সাথে সাথে এর বর্জ্য ও পোড়া ফার্নেস অয়েল ছেড়ে দেওয়া হয়েছে পাশের ছড়ায় (খাল)। পানির স্রোতের সাথে মিশে এসব বর্জ্য পড়ছে হালদা নদীতে। এ ঘটনায় পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল ও প্ল্যান্টটি পরিদর্শন করেছেন। তবে প্ল্যান্ট কর্তৃপক্ষ বলেছে, কোন বর্জ্য ও পোড়া ফার্নেস অয়েল তারা ছাড়েনি।
গতকাল সোমবার ভোর রাতে পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে বর্জ্য ও পোড়া ফার্নেস অয়েল ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রুহুল আমিন। এছাড়া হালদায় বর্জ্য ও পোড়া তেল ছাড়ার ফলে হালদার পরিবেশ ও নদীর জীববৈচিত্র্য হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে বলে জানান হালদা বিশেষজ্ঞরা।
হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির সমন্বয়ক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্টের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনেকবার বলার পরও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। অভিযোগটি তাদের বিরুদ্ধে নতুন নয়।
তিনি বলেন, ভারি বৃষ্টিপাত হলে তারা প্ল্যান্টের বর্জ্য ও পোড়া ফার্নেস অয়েল ছেড়ে দেয়। যা বৃষ্টির পানির সাথে মিশে প্রথমে পাশের মরা ছড়া, এরপর উপনদী হয়ে হালদায় পড়ছে। এতে নদীর পানি, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে।
এ ব্যাপারে ইউএনও রুহুল আমিন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির বর্জ্য ও পোড়া ফার্নেস অয়েল বৃষ্টি হলেই পাশের ছরায় ছেড়ে দেওয়া হয়। এটি তাদের পুরনো অভ্যাস। এছাড়া তাদের বর্জ্য পরিশোধন প্ল্যান্ট (ইটিপি) নেই। তাই যখনই ভারী বৃষ্টিপাত হয়, তখন তারা পদার্থগুলো ছেড়ে দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার ভোর রাতে পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে বর্জ্য ও পোড়া ফার্নেস অয়েল ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির ছেড়ে দেওয়া বর্জ্য ও পোড়া ফার্নেস অয়েল বৃষ্টির পানির সাথে মিশে ছড়া হয়ে ইতোমধ্যে হালদা নদীতে পড়েছে। রাতের অন্ধকারে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে হালদায় পোড়া ফার্নেস ওয়েল ছেড়ে দিলে ইউএনও একা ঠেকাতে পারবে না। তাই বলব, ইটিপি বাস্তবায়ন করে হালদার প্রতি দরদী হতে হবে। এরকম নির্বিকার হওয়ার সুযোগ নাই। আমি বিদ্যুৎ ও হালদা দুইটাই চাই। তাই এ বিষয়ে স্থানীয় পরিবেশ অধিদপ্তরের কাছে আমি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছি।
বর্জ্য ও পোড়া ফার্নেস অয়েল ছাড়ার বিষয়টি অস্বীকার করে ১০০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্টের ব্যবস্থাপক শফিউদ্দিন আহমেদ মুঠোফোনে জানান, আসলে ফার্নেস অয়েল আনলোডিং এর সময় কিছু অয়েল প্ল্যান্টের বাইরে পড়ে। এসব তেল হয়তো বৃষ্টির পানির সাথে মিশে মরা ছড়ায় পড়তে পারে।
দীর্ঘ প্রায় ৮ বছর পরও প্ল্যাটিতে কেন ইটিপি স্থাপন করা হয়নি? জানতে চাইলে তিনি জানান, আমরা বর্জ্য পরিশোধন প্ল্যান্ট স্থাপনের কাজ শুরু করেছি।
এদিকে ঘটনার খবর পেয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন বলে জানান পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ের পরিদর্শক মো. মাঈদুল ইসলাম। তিনি জানান, প্ল্যান্টের পাশের ছড়ায় বর্জ্য ও পোড়া ফার্নেস অয়েল ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা এর প্রমাণ পেয়েছি। ঘটনাস্থল থেকে নমুনাও সংগ্রহ করেছি। প্ল্যান্ট কর্তৃপক্ষকে একটি নোটিশ প্রদান করা হয়েছে। আগামী ১৭ জুলাই সকাল ১০টায় এর শুনানি হবে।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ২৯ এপ্রিল বিকালে এ প্ল্যান্টের ফার্নেস অয়েলবাহী ওয়াগন লাইনচ্যুত হয়ে ৩টি ওয়াগন কালভার্ট ভেঙে ছড়ায় পড়ে ছিল। ৩টি ওয়াগনের প্রায় ১ লাখ ৫ হাজার লিটার ফার্নেস অয়েল ছড়াসহ আশেপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। পরে স্থানীয় প্রশাসন ও এরাকাাবাসীর সহযোগিতায় ফার্নেস অয়েলগুলো বাঁধ দিয়ে হালদা নদীতে পতিত হওয়া থেকে রক্ষা করেছিল।
২০১১ সালের অক্টোবর মাসের শেষ সপ্তাহে পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু করে হাটহাজারী পৌরসভা এলাকায় অবস্থিত ১০০ মেগাওয়াট ডুয়েল-ফুয়েল বিদ্যুৎকেন্দ্রটি। সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে প্রায় ৯০৮ কোটি টাকা ব্যয়ে কেন্দ্রটি নির্মাণ করা হয়। এটি ৮.৯ মেগাওয়াট সম্পন্ন, এতে ১১টি ইউনিট রয়েছে। এসব ইউনিট প্রায় ৯৮.১৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে। এজন্য প্রয়োজন হয় ২৫০ মেট্রিক টন ফার্নেস অয়ল বা ৩০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস।