বৃত্তের বাইরে

81

প্রায় বছর দশেকপর আকষ্মিকভাবেই ফারিহার সঙ্গে দেখা হয়ে গেল ফাতিনের। তাও আবার গাবতলী বাসটার্মিনালের যাত্রীদের বিশ্রামকক্ষে। দ্’ুজনার গন্তব্য স্থল ভিন্ন। ফারিহা যাবে মেহেরপুরে আর ফাতিন যাবে দাপ্তরিক কাজে খুলনায়। খুব অল্প সময় তাদের মধ্যে কথাবার্তা হয়। এরই মধ্যে জানা হয়ে যায় কে কোথায় থাকে। ফাতিন সুযোগটা হাতছাড়া করতে চায়নি। তাই ফারিহার ঠিকানা জানার পরপরই বলে ওঠে “আরে আমাকে তো তোমাদের ওখানে প্রায়ই যেতে হয়।” “তাই? ভালোই হলো। তাহলে একদিন বাসায় এসো।” ফারিহার কথাটা তার মনের মধ্যে গেঁথে যায়। স্মৃতির পাতায় ভেসে আসে একেক একেক করে অনেক কথা। একই কলেজে পড়ত দু’জনা। ফাতিন আসত গ্রাম থেকে আর ফারিহার বাড়ি জেলা শহরেই। ফারিহাকে এক নজর দেখার জন্য ফাতিনের মনটা আনচান করত। লাইব্রেরিতে দু’জনা পাশাপাশি বসে বই পড়ত। ফারিহা বইপোকা ছিল। পাঠ্যপুস্তকের চেয়ে সৃজনশীল বইগুলো বেশি পড়ত। তার সঙ্গে তাল দিতে গিয়ে ফাতিনেরও একটু একটু বই পড়ার অভ্যাস হয়ে যায়। একে অপরকে ভালো ভালো বইয়ের নাম সাজেস্ট করত। ফারিহার সঙ্গে একবার কথা হলে ভালোলাগার রেশটা কোনভাবেই শেষ হতো না। বুকের মধ্যে লেপ্টে থাকত। সারাদিনটা তার ভালোভাবেই কেটে যেত। এইচএসসি পাশ করার পরপরই দুর সম্পর্কের এক আত্মীয়ের সঙ্গে ফারিহার হঠাৎ বিয়ে হয়ে যায়। তার বিবাহকে ফাতিন মোটেই মেনে নিতে পারেনি। কয়েকমাস রাতের বেলায় ঠিকমত ঘুম হতো না। হৃদয়ের পুরোটা অংশ জুড়ে ছিল ফারিহার ছবি। চোখ বুঝলেই ফারিহাকে দেখতে পেত। ফারিহা জানতো ফাতিন তাকে পছন্দ করে। কিন্তু সে তার ডাকে সাড়া দেয়নি। তবে ভালোবাসার অমর্যাদা করেনি। তাতে লাভ কী? হৃদয় কাননে অঙ্কুরিত হওয়া ভালোবাসার পুষ্পকলি পাপড়ি মেলে সুবাস ছাড়ায়নি কখনো। কালের ব্যবধানে তাদের আপন আপন সংসার হয়েছে। হয়েছে বাবা-মা। ফারিহাকে দেখার পর পুরাতন ব্যথাটা আবার আড়মোড়া দিয়ে জেগে ওঠে। ফাতিন আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ে। সে মনে মনে ভাবে-ফারিহার বাড়িতে সকলের উপস্থিতিতে যাওয়া ঠিক হবে না। সে যখন মেয়েকে স্কুলে রেখে বাসায় আসে ঠিক তখন তার বাসাতে হবে। নিরিবিলি কিছু কথা বলা যাবে। প্রাণভরে তাকে দেখা যাবে। সেই কাঙ্খিত ক্ষণটির জন্য ফাতিন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে থাকে।
সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে দিন দশেক পর ফাতিন ঠিক ঠিক পৌঁছে যায় ফারিহার বাসায়। সেদিন সে মেয়েকে স্কুলে রেখে মাত্র বাসায় ফিরেছে। কুশলাদি বিনিময়ের পর ফারিনকে বসতে দেয়। ফারিহার মায়াবি চোখ আর গোলামী রঙের ঠোঁটে আটকে যায় ফাতিনের দৃষ্টি। মুগ্ধ নয়নে চেয়ে থাকে। বুঝতে পেরে নিজেকে আড়াল করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় ফারিহা। “এক পর্যায়ে বলেই ফেলে কী দেখছ?” “তুমি আগের চেয়ে এতটা সুন্দরী হয়ে যাবে তা স্বপ্নেও ভাবিনি। তোমাকে আড়ালে আবডালে কত দেখেছি। আর রাতভর স্বপ্ন দেখেছি তোমাকে নিয়ে। ভাবতাম তোমাকে যদি একটু স্পর্শ করতে পারতাম! তাহলে জীবনটা ধন্য হয়ে যেত। এতদিন পরেও সেই আকাঙ্খা যে এতটা তীব্র হবে তা বুঝতে পারিনি। জানলে তোমার সামনে আসতাম না। সরি সরি আমি ইমোশনাল হয়েগেছি। কিছু মনে করো না। আমি এখন আসি।” ফারিহা ফাতিনের একটি হাত নিজের হাতের মধ্যে মুষ্ঠিবদ্ধ করে বলে, “এবার হলো তো তোমার স্বপ্ন পূরণ? ফারিহার এতটা খোলাখুলিভাবে সাড়া দেবে তা ফাতিন কক্ষনও ভাবেনি। ফাতিন ফারিহাকে বুকের মধ্যে চেপে ধরার জন্য আলতোভাবে চেষ্টা করে। দু বাহুর বন্ধন ছিন্ন করে ফারিহা ঘরের বাতিটা বন্ধ করে দিয়ে নিজেই ফাতিনকে জড়িয়ে ধরে। এ যেন বৈশাখে শ্রাবণ ধারা। দু’জনাই নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয় কিছুক্ষণ। চেতনার ঘুম ভাংলে দ্রæত ফাতিন বের হয়ে যায় ফারিহার বাসা থেকে। ফারিহার ঘোর যেন কাটতেই চাচ্ছে না কিছুতেই। অবশ্য কিছুক্ষণ পর তারও ঘোর কাটে।
সেদিন ফারিহার মনটা খুব খারাপ ছিল। অপরাধ বোধ তার মনটাকে কুরে কুরে খাচ্ছে। স্কুল থেকে মেয়েকে এনে ঘুম পাড়িয়ে দেয়। নিজে জেগে থাকে দীর্ঘক্ষণ। বারান্দার গ্রিল ধরে আকাশের দিকে চেয়ে চেয়ে মুক্তির পথ খুঁজতে থাকে। স্বামী বিদেশে যাওয়ার পর ফারিহা একা একাই ঢাকাতে থাকে। বাড়িওয়ালা তাকে নিজের মেয়ের মতো দেখে। এ পর্যন্ত কোন সমস্যা হয়নি। শালীন পোশাকে চলাফেরা করা আর পুরুষদের দৃষ্টির আড়ালে থাকার অভ্যাস তার দীর্ঘ দিনের। অথচ আজ এ কী করল ফারিহা। বৃত্তের বাইরে গেলে কীভাবে? তার শুভ্র সুন্দর জীবনে যে কালি লাগল তা কি মুছবে কক্ষনো? আবার যদি সেই হায়েনার ফাঁদে পড়ে, কিংবা তীব্র ক্ষুধা নিয়ে যদি সে তার সামনে এসে দাঁড়ায়, পারবে কি সে নিজেকে সামলে নিতে? পারবে কী সে আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে? নানান কথা ভাবতেই তার দু’চোখ সজল হয়ে ওঠে।প্রায় বছর দশেকপর আকষ্মিকভাবেই ফারিহার সঙ্গে দেখা হয়ে গেল ফাতিনের। তাও আবার গাবতলী বাসটার্মিনালের যাত্রীদের বিশ্রামকক্ষে। দ্’ুজনার গন্তব্য স্থল ভিন্ন। ফারিহা যাবে মেহেরপুরে আর ফাতিন যাবে দাপ্তরিক কাজে খুলনায়। খুব অল্প সময় তাদের মধ্যে কথাবার্তা হয়। এরই মধ্যে জানা হয়ে যায় কে কোথায় থাকে। ফাতিন সুযোগটা হাতছাড়া করতে চায়নি। তাই ফারিহার ঠিকানা জানার পরপরই বলে ওঠে “আরে আমাকে তো তোমাদের ওখানে প্রায়ই যেতে হয়।” “তাই? ভালোই হলো। তাহলে একদিন বাসায় এসো।” ফারিহার কথাটা তার মনের মধ্যে গেঁথে যায়। স্মৃতির পাতায় ভেসে আসে একেক একেক করে অনেক কথা। একই কলেজে পড়ত দু’জনা। ফাতিন আসত গ্রাম থেকে আর ফারিহার বাড়ি জেলা শহরেই। ফারিহাকে এক নজর দেখার জন্য ফাতিনের মনটা আনচান করত। লাইব্রেরিতে দু’জনা পাশাপাশি বসে বই পড়ত। ফারিহা বইপোকা ছিল। পাঠ্যপুস্তকের চেয়ে সৃজনশীল বইগুলো বেশি পড়ত। তার সঙ্গে তাল দিতে গিয়ে ফাতিনেরও একটু একটু বই পড়ার অভ্যাস হয়ে যায়। একে অপরকে ভালো ভালো বইয়ের নাম সাজেস্ট করত। ফারিহার সঙ্গে একবার কথা হলে ভালোলাগার রেশটা কোনভাবেই শেষ হতো না। বুকের মধ্যে লেপ্টে থাকত। সারাদিনটা তার ভালোভাবেই কেটে যেত। এইচএসসি পাশ করার পরপরই দুর সম্পর্কের এক আত্মীয়ের সঙ্গে ফারিহার হঠাৎ বিয়ে হয়ে যায়। তার বিবাহকে ফাতিন মোটেই মেনে নিতে পারেনি। কয়েকমাস রাতের বেলায় ঠিকমত ঘুম হতো না। হৃদয়ের পুরোটা অংশ জুড়ে ছিল ফারিহার ছবি। চোখ বুঝলেই ফারিহাকে দেখতে পেত। ফারিহা জানতো ফাতিন তাকে পছন্দ করে। কিন্তু সে তার ডাকে সাড়া দেয়নি। তবে ভালোবাসার অমর্যাদা করেনি। তাতে লাভ কী? হৃদয় কাননে অঙ্কুরিত হওয়া ভালোবাসার পুষ্পকলি পাপড়ি মেলে সুবাস ছাড়ায়নি কখনো। কালের ব্যবধানে তাদের আপন আপন সংসার হয়েছে। হয়েছে বাবা-মা। ফারিহাকে দেখার পর পুরাতন ব্যথাটা আবার আড়মোড়া দিয়ে জেগে ওঠে। ফাতিন আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ে। সে মনে মনে ভাবে-ফারিহার বাড়িতে সকলের উপস্থিতিতে যাওয়া ঠিক হবে না। সে যখন মেয়েকে স্কুলে রেখে বাসায় আসে ঠিক তখন তার বাসাতে হবে। নিরিবিলি কিছু কথা বলা যাবে। প্রাণভরে তাকে দেখা যাবে। সেই কাঙ্খিত ক্ষণটির জন্য ফাতিন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে থাকে।
সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে দিন দশেক পর ফাতিন ঠিক ঠিক পৌঁছে যায় ফারিহার বাসায়। সেদিন সে মেয়েকে স্কুলে রেখে মাত্র বাসায় ফিরেছে। কুশলাদি বিনিময়ের পর ফারিনকে বসতে দেয়। ফারিহার মায়াবি চোখ আর গোলামী রঙের ঠোঁটে আটকে যায় ফাতিনের দৃষ্টি। মুগ্ধ নয়নে চেয়ে থাকে। বুঝতে পেরে নিজেকে আড়াল করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় ফারিহা। “এক পর্যায়ে বলেই ফেলে কী দেখছ?” “তুমি আগের চেয়ে এতটা সুন্দরী হয়ে যাবে তা স্বপ্নেও ভাবিনি। তোমাকে আড়ালে আবডালে কত দেখেছি। আর রাতভর স্বপ্ন দেখেছি তোমাকে নিয়ে। ভাবতাম তোমাকে যদি একটু স্পর্শ করতে পারতাম! তাহলে জীবনটা ধন্য হয়ে যেত। এতদিন পরেও সেই আকাঙ্খা যে এতটা তীব্র হবে তা বুঝতে পারিনি। জানলে তোমার সামনে আসতাম না। সরি সরি আমি ইমোশনাল হয়েগেছি। কিছু মনে করো না। আমি এখন আসি।” ফারিহা ফাতিনের একটি হাত নিজের হাতের মধ্যে মুষ্ঠিবদ্ধ করে বলে, “এবার হলো তো তোমার স্বপ্ন পূরণ? ফারিহার এতটা খোলাখুলিভাবে সাড়া দেবে তা ফাতিন কক্ষনও ভাবেনি। ফাতিন ফারিহাকে বুকের মধ্যে চেপে ধরার জন্য আলতোভাবে চেষ্টা করে। দু বাহুর বন্ধন ছিন্ন করে ফারিহা ঘরের বাতিটা বন্ধ করে দিয়ে নিজেই ফাতিনকে জড়িয়ে ধরে। এ যেন বৈশাখে শ্রাবণ ধারা। দু’জনাই নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয় কিছুক্ষণ। চেতনার ঘুম ভাংলে দ্রæত ফাতিন বের হয়ে যায় ফারিহার বাসা থেকে। ফারিহার ঘোর যেন কাটতেই চাচ্ছে না কিছুতেই। অবশ্য কিছুক্ষণ পর তারও ঘোর কাটে।
সেদিন ফারিহার মনটা খুব খারাপ ছিল। অপরাধ বোধ তার মনটাকে কুরে কুরে খাচ্ছে। স্কুল থেকে মেয়েকে এনে ঘুম পাড়িয়ে দেয়। নিজে জেগে থাকে দীর্ঘক্ষণ। বারান্দার গ্রিল ধরে আকাশের দিকে চেয়ে চেয়ে মুক্তির পথ খুঁজতে থাকে। স্বামী বিদেশে যাওয়ার পর ফারিহা একা একাই ঢাকাতে থাকে। বাড়িওয়ালা তাকে নিজের মেয়ের মতো দেখে। এ পর্যন্ত কোন সমস্যা হয়নি। শালীন পোশাকে চলাফেরা করা আর পুরুষদের দৃষ্টির আড়ালে থাকার অভ্যাস তার দীর্ঘ দিনের। অথচ আজ এ কী করল ফারিহা। বৃত্তের বাইরে গেলে কীভাবে? তার শুভ্র সুন্দর জীবনে যে কালি লাগল তা কি মুছবে কক্ষনো? আবার যদি সেই হায়েনার ফাঁদে পড়ে, কিংবা তীব্র ক্ষুধা নিয়ে যদি সে তার সামনে এসে দাঁড়ায়, পারবে কি সে নিজেকে সামলে নিতে? পারবে কী সে আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে? নানান কথা ভাবতেই তার দু’চোখ সজল হয়ে ওঠে।