বুয়েটে রাজনীতি নিষিদ্ধ ১৯ আসামি বহিষ্কার

25

পাঁচ দিন ধরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকান্ড নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত ১৯ শিক্ষার্থীকে বুয়েট থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে বলে উপাচার্য অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন।
গতকাল শুক্রবার বিকালে বুয়েট অডিটোরিয়ামে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এক বৈঠকে উপাচার্য তাদের এ দুটি দাবি পূরণের কথা জানান। খবর বিডিনিউজের
আবরার খুন হওয়ার পর তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু ঘাটতি থাকার কথা স্বীকার করে অধ্যাপক সাইফুল হলভর্তি শিক্ষার্থীদের সামনে বলেন, “আমার ঘাটতি ছিল। পিতৃতুল্য হিসেবে আমি তোমাদের কাছে ক্ষমা চাইছি।”
তিনি বলেন, “তোমাদের ১০টা দাবি আমি হাতে পেয়েছি। তোমরা আমার সন্তানের সমান। সন্তানের মত মনে করি। সিসি টিভি থেকে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত অনুসারে আমরা সরকারের উঁচু পর্যায়ে যোগাযোগ করেছি এ ব্যাপারে। তোমাদের দাবিরে প্রেক্ষিতে মামলার এজাহারভুক্ত ১৯ জনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হল। পাশাপাশি বুয়েটে কোনো রকমের সাংগঠনিক রাজনীতি থাকবে না।”
শিক্ষার্থীদের সবগুলো দাবিই মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে উপাচার্য বলেন, “আবরারের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে এবং মামলার খরচ বুয়েট কর্তৃপক্ষ বহন করবে। বিচারকাজ দ্রুত শেষ করতে সরকারকে চিঠি দেওয়া হবে। বুয়েটে র‌্যাগিং বন্ধ হবে।”
শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৫টায় কানায় কানায় পূর্ণ বুয়েট অডিটোরিয়ামে এ বৈঠক শুরু হয়। শুরুতেই আবরারের জন্য পালন করা হয় এক মিনিট নীরবতা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার সাইদুর রহমানের পরিচালনায় উপাচার্য অধ্যাপক সাইফুল ইসলামের সঙ্গে সভামঞ্চে ছিলেন ছাত্রকল্যাণ পরিচালক মিজানুর রহমান, শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক এ কে এম মাসুদ এবং কয়েকজন ডিন।
বুয়েটের বর্তমান চারটি ব্যাচের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি তাদের শর্ত অনুযায়ী সংবাদমাধ্যমের কর্মীরাও এ সভা দেখার সুযোগ পান। আগের ঘোষণা অনুযায়ী, বুয়েটের মেইন গেইট থেকে দুই দফা পরিচয়পত্র পরীক্ষা করে শিক্ষার্থীরা অডিটোরিয়ামে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়। বিকাল ৩টার পর থেকেই লাইন ধরে আইডি কার্ড দেখিয়ে অডিটোরিয়ামে ঢোকেন শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকরা।
বুয়েটের শেরে বাংলা হলের আবাসিক ছাত্র ও তড়িৎ কৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরারকে গত রবিবার রাতে ছাত্রলীগের এক নেতার কক্ষে নিয়ে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়। তারপর থেকেই আন্দোলন চালিয়ে আসছেন এই শিক্ষার্থীরা।
আবরারের খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা, তাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবন বহিষ্কার, আবরার হত্যা মামলার সব খরচ এবং ক্ষতিপূরণ বুয়েট থেকে বহ করা, দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্বল্পতম সময়ে মামলা নিষ্পত্তি, অবিলম্বে অভিযোগপত্র প্রকাশ, বিভিন্ন সময়ে নিরর্যাতনে জড়িতদের ছাত্রত্ব বাতিল এবং বুয়েটে সাংগঠনিক ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি ছিল তাদের দশ দফার মধ্যে।
ছাত্রলীগের কর্মীদের মারধরে আবরার নিহতের পর ‘দ্রুত ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থতার জন্য’ সমালোচনা আর চাপের মধ্যে ছিলেন উপাচার্য সাইফুল ইসলাম। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শিক্ষার্থীদের সামনে এলে তাকে আন্দোলনকারীদের তোপের মুখে পড়তে হয়। শিক্ষার্থীরা সেদিন তাকে প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা তার কার্যালয়ে তালাবন্ধ করে রাখে।
আবরারের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করতে বুধবার কুষ্টিয়া গিয়েও এলাকাবাসীর প্রতিবাদের মুখে ফিরে আসতে হয় অধ্যাপক সাইফুলকে।
উপাচার্য গত মঙ্গলবারই শিক্ষার্থীদের দাবি নীতিগতভাবে মেনে নেওয়ার কথা বলেছিলেন। কিন্তু শিক্ষার্থীরা সুনির্দিষ্ট ঘোষণার দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যায়। তাদের ওই দশ দফার প্রতি সংহতি জানিয়ে আলাদাভাবে সাত দফা দাবি জানায় বুয়েট শিক্ষক সমিতি। রাজনীতি বন্ধের পাশাপাশি দায়িত্বে ‘ব্যর্থতার’ অভিযোগে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিও রয়েছে এর মধ্যে।
বুধবার শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভায় এ বিষয়ে আলোচনার পর সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক এ কে এম মাসুদ শিক্ষার্থীদের বলেছিলেন, “তোমরা যে রকম দাবি করেছ, ছাত্রদের রাজনৈতিক কর্মকান্ড নিষিদ্ধ করার জন্য, আমরা সকল প্রকার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ শিক্ষক-ছাত্র রাজনীতির কর্মকান্ড নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
বুয়েটের ঘটনার পর ওই আরও মহল থেকেও ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি ওঠে। এই প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, তিনি ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের পক্ষে নন। তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে বুয়েট তাদের ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে পারে।
“একটা ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি উঠাবে যে ছাত্র রাজনীতি ব্যান। আমি নিজেই যেহেতু ছাত্র রাজনীতি করে এসেছি। সেখানে আমি ছাত্র রাজনীতি ব্যান বলব কেন?”
ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের বিরোধিতা করে সিপিবি সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমও বক্তব্য দেন। রাজনীতি বন্ধ না করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সরকার সমর্থকদের ‘দখলদারিত্ব’ থেকে মুক্ত করার ওপর জোর দেন তারা।