বুয়েটের ভিসির সমালোচনায় ১৪ দল

43

আবরার ফাহাদ হত্যাকান্ডের খবর পাওয়ার পর দ্রুত ঘটনাস্থলে না যাওয়ায় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) উপাচার্য সাইফুল ইসলামের সমালোচনা করেছে ১৪ দলীয় জোট। দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালে আবরার হত্যা মামলার দ্রুত নিষ্পতিরও দাবি জানানো হয়েছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন এই জোটের পক্ষ থেকে। গতকাল শুক্রবার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ১৪ দলের এক জরুরি সভা থেকে এ দাবি জানানো হয়।
সভা শেষে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘স্বল্প সময়ের মধ্যে এসব খুনিদের বিচার দাবি করছি। আমরা আশা করছি, দ্রুতই এ হত্যাকান্ডের বিচার হবে’।
ফেসবুকে মন্তব্যের সূত্র ধরে তড়িৎ কৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরারকে গত রবিবার রাতে বুয়েটের শেরে বাংলা হলের এক ছাত্রলীগ নেতার কক্ষে ডেকে নিয়ে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়। বুয়েট ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরাই যে আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করেছে, তা উঠে এসেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এই ভাতৃপ্রতীম সংগঠনের নিজস্ব তদন্তেও। আবরার হত্যাকান্ডের পর ‘দ্রুত ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থতার জন্য’ সমালোচনার মুখে রয়েছেন বুয়েট উপাচার্য সাইফুল ইসলামও। বুয়েট শিক্ষক সমিতি ইতোমধ্যে তার পদত্যাগ দাবি করেছে। খবর বিডিনিউজের
আওয়ামী লীগ নেতা নাসিম বলেন, ‘আমরা খুব দুঃখ পেয়েছি, বুয়েটের ভিসি তাৎক্ষণিকভাবে সেখানে গেলেন না কেন? এটা অত্যন্ত দুঃখজনক, একজন ভিসির কাছে এ ধরনের আচরণ আশা করি না’। সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যদের নিয়ে অস্থিরতার দিকে ইংগিত করে তিনি বলেন, ‘আমরা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন হই, যখন দেখি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রশ্নবিদ্ধ হয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কেন প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে? কি কারণে হচ্ছে? বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে একের পর এক ঘটনা ঘটছে, এ নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। আমরা মনে করি এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি দেওয়া উচিত। সুযোগ্য ব্যক্তি, দায়িত্বশীল ব্যক্তি এবং যোগ্য ব্যক্তিকে এ ধরনের উচ্চ পদে বসানো উচিত’।
১৪ দলের মুখপাত্র বলেন, ‘আমরা ভিন্ন মতকে গ্রহণ করতে চাই। কিন্তু কিছু দুর্বৃত্ত এই ঘটনা ঘটিয়েছে। এইসব ঘটনার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত’। কিছু ‘চেনা মুখ অশুভ শক্তি’ আবরার হত্যার মতো ‘দুঃখজনক ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের পাঁয়তারা করছে’ বলো মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগ নেতা নাসিম। তিনি বলেন, ‘বিএনপি এই ঘটনার বিচার যত না চায়, তার চেয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করে সরকারকে বেশি প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়। ১৪ দল এই বেদনাদায়ক ঘটনায় বুয়েট ছাত্র আবরারের পিতা-মাতাসহ পরিবারের সকলের প্রতি সহানুভুতি জানাচ্ছে’।
জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বিএনপি নেতাদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে যে ৫৩টি সমঝোতা চুক্তি হয়েছে তার মধ্যে কোনটি দেশের স্বার্থবিরোধী সেটা সুনির্দিষ্ট করে প্রমাণ করার চ্যলেঞ্জ দিচ্ছি। ফেনী নদীর যে পরিমাণ পানি ভারতকে দেওয়া হবে, তাতে পরিবেশ প্রকৃতির ওপর কোনো প্রভাব পড়বে না। এ ব্যাপারে আমরা চ্যালেঞ্জ করছি। রেডার স্থাপন হলে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমাকে সুরক্ষা দেবে। এই রেডার ভারত সরবরাহ করবে। যারা এর বিরোধিতা করছে তারা সমুদ্রসীমাকে নিরাপত্তাহীনতার দিকে ঠেলে দিতে চায়’।
১৪ দলের মুখপাত্র জানান, প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক ভারত সফরে করা চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকগুলো নিয়ে আগামী ২২ অক্টোবর জোটের পক্ষ থেকে গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করা হবে। পাশাপাশি রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে আগামী ২৩ অক্টোবর আরেকটি গোলটেবিল আলোচনা হবে।
অন্যদের মধ্যে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, উপ-দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা, জাতীয় পার্টির (জেপি) সাধারণ সম্পাদক শেখ শহীদুল ইসলাম, গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন সভায় উপস্থিত ছিলেন।