বুলবুল তো ধান খেয়েছে, প্রাণ নিয়েছে বহু

59

গত ৮ নভেম্বর আবহাওয়ার পূর্বাভাসে ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ এর খবর প্রচারিত হয়। ৯ নভেম্বর চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরে ৪ নম্বর বিপদ সংকেত এবং মংলার ৭ নম্বর বিপদ সংকেতের কথা বলা হয়। ধীরে ধীরে চট্টগ্রামে ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত এবং মংলা বন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের সতর্কবাণী দেয়া হয়। সারাদেশ বুলবুল নামক ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্খায় সন্ত্রস্ত হয়ে সময় গুণতে শুরু করে দেশের মানুষ। বুলবুলের প্রভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে হালকা-পাতলা বৃষ্টিপাত শুরু হয় ৯ নভেম্বর থেকে। পরবর্তীতে ঘূর্ণিঝড়টি ভারতীয় উপক‚ল অতিক্রম করলে এখানে দূর্বল হয়ে পড়ে। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে দেশে হালকা থেকে ভারি বৃষ্টিপাত হতে দেখা গেছে। ঘূর্ণিঝড়টি সুন্দরবনের নিকট দিয়ে ভারতীয় উপক‚লে আঘাত হানলেও এদেশে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি পরিবেশ সৃষ্টি করে গেছে।
ঘূর্ণিঝড় বুলবুল খেয়ে গেছে বাংলাদেশের একলক্ষ হেক্টর আমন ক্ষেত। ঈগল চুবল মারলে অন্তত ঘাস হলেও নিয়ে যায় প্রবাদটি অনেক পুরানো। বুলবুলের প্রভাবে হালকা থেকে ভারি বৃষ্টিপাত ও দমকা হাওয়ায় বাংলাদেশে আমন ধানের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়। পাক ধরার পূর্ব মুহ‚র্তে শীষ বের হওয়া আমন ধান শোয়ে গেছে মাঠে। যার ফলে এবছর ধানের বাম্পার ফলন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তার পাশাপাশি ১২ জনের মৃত্যুর সংবাদও বিভিন্ন প্রচার মাধ্যম থেকে আমরা পেয়েছি। বুলবুলের প্রভাবে সমুদ্র উপক‚লের বহু লবণের মাঠ ও চিংড়ি প্রকল্পের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। ঝড়ো হাওয়ায় উপড়ে পড়েছে বহু গাছপালা। দেশের সমুদ্রবন্দর সমূহে আমদানী রপ্তানি বন্ধ থাকায় ব্যবসা-বাণিজ্য ও সরকারি রাজস্ব ক্ষতিগ্রস্ত হয়। উপক‚লীয় অঞ্চল সমূহে সতর্ক অবস্থানের কারণে দেশের জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা, উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণির নির্বাচনী পরীক্ষা এবং বেশক’টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা পিছিয়ে দিতে হয়েছে।
কার্তিক মাস শেষে বুলবুল নামক ঘূর্ণি ঝড়টি দেশের জন্য নতুন নয়। এদেশে কার্তিক মাসে অতীতে বহু ঝড়-তুফান বয়ে যেতে দেখা গেছে। এবছর গড় বৃষ্টিপাত অন্যান্য বছরের তুলনায় কম হয়েছে। বর্ষার বৃষ্টিখরা কিছুটা পূর্ণ করেছে শরৎ ও হেমন্ত। তবে অসময়ে বৃষ্টি ও ঝড় হাওয়ার কারণে ক্ষতি গ্রস্ত হয়েছে রবিশষ্য, আমন ধান, লবণ ও চিংড়ির। দেশের ম্যানগ্রোভ খ্যাত সুন্দরবনেরও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। যার ফলে দেশকে কয়েক’শ কোটি টাকার ক্ষতিগুণতে হচ্ছে। কক্সবাজার, টেকনাফ, কুতুবদিয়া, মহেশখালী, চকরিয়া, পেকুয়া, বাঁশখালী, সীতাকুÐু, মিরসরাই উপজেলাসহ খুলনা, বাগেরহাট ইত্যাদি উপক‚লীয় জেলার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি দেশের অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলবে। প্রাকৃতিক দূর্যোগে মানুষের করার কিছু নেই। কিন্তু আমরা আমাদের প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রতি আরো বেশি মনযোগ দিতে পারলে দেশে প্রাকৃতিক দূর্যোগ কমে আসবে। প্রকৃতির ভারসাম্যরক্ষায় সরকারের পাশাপাশি সেচ্ছাসেবি সংগঠন, এনজিও এবং বিত্তশালীসহ দেশের সাধারণ জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে।
দেশের বনাঞ্চলকে আরো সমৃদ্ধশালী করার পাশাপাশি দেশের সবখানে সবুজায়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। আমরা যত বেশি বনায়ন করবো ততো দেশের প্রাকৃতিক পরিবেশ সমৃদ্ধ হবে এবং পরিবেশের ভারসাম্য প্রতিষ্ঠিত হবে। যার ফলে প্রাকৃতিক দূর্যোগ কমে আসবে দেশে। নিরাপদ দেশ গড়তে সরকারসহ সবারই এগিয়ে আসা জরুরি।