‘বিষন্ন শহরে’ হরেক পাখি আর পোষাপ্রাণির মেলা

164

দুই চোখ যেদিকে যায়, ইট-পাথরের দালান ছাড়া আর কিছুর দেখা পাওয়া দুষ্কর। সকাল কিংবা সাঁঝ, এক ঝাঁক পাখির কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত পরিবেশ। এই শহরে নিজ ঘরে বসে এমন দৃশ্য উপভোগ কেবলই রূপকথা। ইট-পাথরের এ শহরটাকে যেন বিষন্নতা গ্রাস করেছে। তারই মাঝে হাজারো পাখির মিলনমেলা বসে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে। গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রাঙ্গণে দিনব্যাপী ৪র্থ পোষা পাখি, কবুতর এবং পোষা প্রাণির মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বছরে এ একটি দিনেই নগরবাসী পাখি দেখার স্বাদ মিটাতে পারে। এবারের মেলায় পাখির সাথে যুক্ত হয়েছে পোষাপ্রাণিও।
পেরিয়ে আসা শেষ যুগটা অনেক দ্রুত বদলে দিয়েছে চিরচেনা এই শহরটাকে। ধারণ ক্ষমতার অনেক বেশি জনসংখ্যা বহন করার দরুণ প্রতিদিনই বাড়ছে দালানকোঠা আর যানবাহন। কয়েক বছর আগেও নগরীর বুকে উড়ে বেরিয়েছে হরেক প্রজাতির পাখি। ভোর আর সন্ধ্যায় সেই সব পাখির গানে মুখরিত হতো শহরের চারপাশ। শীতের আগমনবার্তায় নাম নাজানা অনেক পাখির আগমনে ভরে উঠত এ শহর। বিকেল গড়িয়ে যখন সন্ধ্যা নামত তখন আকাশজুড়ে পাখিরা দল বেঁধে উড়ে বেড়াত। সে ছিল এক অপরূপ দৃশ্য। এখন এই ইট-পাথরের শহরে সেই রূপ আর নেই।
প্রতিবছরের মত এবারও পোষা পাখি, কবুতর, খরগোশসহ বিভিন্ন প্রাণির কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত ছিল সিভাসুর প্রাঙ্গণ। নগরীর সবকটি প্রান্ত থেকে মানুষ ছুটে এসেছে পাখি দেখবে বলে। মেলায় আসা দর্শনার্থীদের উচ্ছ¡াস যেন এমন বার্তাই দেয়। গতকাল সকাল থেকে মেলায় ছিল দর্শনার্থীদের ভিড়। তবে শিশু-কিশোরদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মত।
গতকাল সকাল ১১টায় মেলার উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. গৌতম বুদ্ধ দাশ। উদ্বোধনের সময় রাজধানীর চকবাজারে অগ্নিকান্ডে নিহতদের জন্য বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়, চিটাগাং বার্ড ব্রিডার্স, এসোসিয়েশন অব এভিয়ান ভেটেরিনারিয়ান, চট্টগ্রাম হাইফ্লায়ার জোন, বার্ডস এন্ড পেট এনিম্যাল ক্লিনিক ও এনিম্যাল কেয়ার অব চট্টগ্রামের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত মেলায় ৮০ প্রজাতির ৫০০টি পোষা পাখি, টার্কি, ১০টি খরগোশ, ১০ জাতের ৪৫টি কুকুর, ৫ জাতের ১৬টি বিড়াল, রেসার ও হাই ফ্লাইয়ার কবুতর, কচ্ছপ, প্রায় ১০০ প্রজাতির ৫০০ একুরিয়ামের মাছসহ বিভিন্ন পোষাপ্রাণি প্রদর্শন ও বিক্রি করার জন্য রাখা হয়েছে। পোষাপ্রাণি ছাড়াও বিভিন্ন প্রজাতির বনসাই গাছ বিক্রি হয়েছে মেলায়।
চিটাগাং বার্ড ব্রিডার্স এসোসিয়েশনের পরিচালক এনামুল হক বলেছেন, বনের পাখি বনে, খাঁচার পাখি বন্ধু হবে’ এটাই আমাদের স্লোগান। বুল্ট এন্ড গোল্ড ম্যাকাও, গ্রিন উইং ম্যাকাও এবং স্কারলেট ম্যাকাও প্রদর্শনের জন্য রেখেছি। তার সংগ্রহে সর্বনিম্ন দেড় লাখ থেকে আট লাখ টাকা দামের ম্যাকাও আছে বলেও জানান তিনি। এবারে মেলায় দামি পাখি বিক্রি হয়নি। তবে হাজার টাকার মূল্যের বেশ পাখি বিক্রি হয়েছে বলে জানান তিনি।
এছাড়া ফিঞ্চ, কাকাতুয়া, ম্যাকাও, ভেলিট কুনোর, রুবিনো, রোজিলা, মিলি রোজেলাসহ ৫০০ পোষা পাখি প্রদর্শনীতে স্থান পায়। এসোসিয়েশন অব এভিয়ান ভেটেরিনারিয়ান বাংলাদেশের উপদেষ্টা ও মেলা কমিটির সমন্বয়কারী ডা. মোহাম্মদ সাদ্দাম হোসেন পূর্বদেশকে বলেন, পোষা পাখির এই মেলা আয়োজনে আমাদের একমাত্র উদ্দেশ্য সাধারণ মানুষ যেন পোষা পাখি সম্পর্কে অবগত হন, পাখি সম্পর্কে বোঝেন। তাছাড়া অনেকে সৌখিনভাবেও পাখি লালন পালন করে অর্থ উপার্জনে সক্ষম হচ্ছেন।
মেলা উদ্বোধনকালে উপস্থিত ছিলেন প্রফেসর ড. এ কে এম সাইফুদ্দিন ও প্রফেসর ড. ভজন চন্দ্র দাস। মেলায় সামাজিক সংগঠন বাঁধন, পজিটিভ থিংকারস, এসএনএফ রাইডার্স ও বাগান পরিবারসহ ৮টি ওষুধ কোম্পানি অংশগ্রহণ করে।