বিশ্ব শিক্ষক দিবস’১৯-শিক্ষক সমাজের অঙ্গীকারদ্ধতা

103

মানবসভ্যতা ও তার অগ্রগতির কারিগর হলেন শিক্ষক। সেই সমাজ জাতীর মেরুদÐ-শিক্ষা তৈরি করেন। এই বিষয়ে কোন বির্তক নেই। বরং সমাজ সংস্কৃতির অগ্রগতির ভূমিকায় শিক্ষক সমাজের ভূমিকা তাৎপর্যময় ও গভীরভাবে অনুধাবনের জন্য কারিগর বলার চেয়ে শিল্পী বলতে আগ্রহী। কারিগর নির্মান করেন। শিল্পী শুধু তৈরি করেন না, তৈরি জিনিসের লাবন্য এনে দেন। মানুষের মনে কল্যাণ বৃদ্ধি সৌন্দর্য সাধনায় মনন-ভূমিও তৈরি করে দেন। এতে সৃজনশীলতায়, চিন্তাশীলতায় মানুষের বিকাশ ঘটতে থাকে। মানুষ সেই শিক্ষায় অনুভূতিপ্রবণ ও সংবেদশীল হয়ে উঠে। তাতে সমসাময়িক মূল্যবোধ ধারণা করেও দয়িত্বশীল হয়ে উঠে। সে সমাজমুখী না হয়ে পারে না। সমাজের কল্যাণ না করে পারে না। এতেই শিক্ষকের বিশেষত্ব।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির-এই আধুনিক যুগে শিক্ষা গ্রহণ ছাড়া কোন ব্যাক্তি মানুষ হিসাবে ঠিকতে পারবে না। সময়ের দাবীতে এখন শিক্ষা ব্যক্তির জন্য অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। আবার সংস্কৃতির চরম বিকাশে তথা সভ্যতা তৈরিতে শিক্ষক সমাজের অতুলনীয় কর্মকাÐের জন্য তাঁদেরকে সভ্যতা ও সমাজ বিকাশের বিকল্পহীন জ্বালানী শক্তিও বলা হয়।
তাই সমাজ, সভ্যতা, সংস্কৃতি মূল্যেবোধের আলোচনায় শিক্ষক সমাজের কথা তাৎপর্যময় হয়ে উঠে। এই গুরুত্ববহ শিক্ষক সমাজের অবস্থান কি; কোথায়, কেমন ইত্যাদি আলোচনা এই দিনে তাৎপর্যমÐিত। শিক্ষকতাই একমাত্র পেশা যে পেশায় কোন বিরতী নেই, অবসর নেই। অন্য পেশায়ক দৈনিক কর্মকাল নির্ধারিত। অফিস ছুটির পর আর তা নিয়ে না ভাবলেও চলে। কিন্তু শিক্ষকতাই জীবন ব্যাপী সার্বক্ষণিক-রাতে-দিনে, ঘরে-বাইরে কাজ করে যেতে হয়। প্রতিষ্ঠানে ক্লাশ শেষে পরের দিনের প্রস্তুতি, ক্লাশ টেস্ট মূল্যায়ন, আবার সমসাময়িক শিক্ষার অনুষঙ্গ নিয়ে আলোচনা। বাসায় প্রশ্নপত্র তৈরি, উত্তর পত্র মূল্যায়ন।
সামাজিক সমস্যায় তাঁর আগে ডাক পড়ে-সমাজেরশালিশে-বিচারে, সমাজের উন্নয়ন কাজে তাঁকে সম্পৃক্ত থাকতে হয়, বিশ্বস্ততার জন্য, মর্যাদার জন্য, তাঁকে আশা করে। আবার রাত জেগে নতুন জ্ঞান ও প্রযুক্তিগত দক্ষতা নিয়ে প্রস্তুতি নিতে হয়। পরের দিন ক্লাশ শেষে সেমিনারে,পাঠাগারে ব্যস্ত থাকতে হয়। এই এক আজব পেশা। এই জন্য যে প্রায় শুনতে হয় শিক্ষক মারা যান হয় ক্লাশে, না হয় বাড়ীতে-হাতে কলম নিয়ে, অথবা পাঠাগারে বই মুখে রেখে। অন্যকোন পেশায় এমন আছে কিনা আমি জানি না। ফলে শিক্ষক সমাজের অবস্থান প্রত্যেক জাতীর কাছে উচুঁ স্থানে, উচ্চ মর্যাদায়। এ বক্তব্যে কোন ফাঁক নেই, ঘাটতি নেই। তাই শিক্ষকের মর্যাদাউচুঁতে না হয়ে পারে না। কারণ একটি জাতীর সভ্যতা ও অগ্রগতির অন্যতম সূচক হল শিক্ষকের মর্যাদা ও জীবন মানের অবস্থান।
এই জন্য যে, শিক্ষকই ব্যক্তিকে বদলিয়ে মানুষ করে, জৈবিক মানুষকে নৈতিক মানুষে পরিণত করে। শিক্ষাএখন আরস্বতঃস্ফূর্তভাবে আপনা থেকেই কেউ শিক্ষিত হয়ে উঠতে পারে না। শিক্ষা মাত্রই সচেতন চেষ্টা ও সাধনা নির্ভর। বিশেষ করে প্রযুক্তিগত আধুনিক ব্যবস্থাপনার শিক্ষায়। এই জন্য একজন শিক্ষক প্রকৌশলীও হয়ে উঠেন। এক কথায় ব্যক্তিকে সময়োপযোগী হয়ে বাচঁতে হলে, ঠিকে থাকতে হলে শিক্ষক লাগবে, শিক্ষা লাগবে। আর তাঁকে উপযোগী করে তুলতে হলে শিক্ষকের ত্যাগ সাধনার পাশাপাশি শিক্ষককে সৃজনশীলতারও মননশীলতার দক্ষতা দেখাতে হয়। শিক্ষকের এই অন্যান্য অসাধারণ ভূমিকা ও ত্যাগের জন্য গ্রীক সভ্যতাবল, রোমান সভ্যতা বল ইতিহাসের সব সভ্যতা গড়ে উঠা সম্ভব হয়েছে। সেখানে রাজনৈতিক নেতা থাকতে পারে, থাকতে পারে অবতার বা সমাজ সংস্কারক। তারা হয় সরাসরি শিক্ষক, নয়তো শিক্ষকের দেখানো পথেই তারা এগিয়েছে।
অন্য কথায় দৈহিক অঙ্গ প্রত্যঙ্গ সংঞ্চালন নিয়ন্ত্রণ করে মস্তিস্ক। আর জাতীর আশা আকাংঙ্খা ও অগ্রগতি নির্ভর করে জাতীর কেন্দ্রিয় চেতনায় শিক্ষক সমাজ কতটুকু গুরুত্ব পায় তার উপর। কারণ জাতীয় সুষ্ঠু ধারার বিকাশ নিশ্চিত করে শিক্ষা ব্যবস্থা, উর্বর ও উৎপাদনশীল সাংস্কৃতিক পরিমÐল, যার কারিগর হল শিক্ষক সমাজ।
তাই সভ্য সমাজ বা রাষ্ট্র অনুধাবন করতে পারে শিক্ষক সমাজের সেই ভূমিকা। যার জন্য রাষ্ট্র তার কেন্দ্রিয় চেতনার তীব্র আকাঙ্খার জায়গাটা শিক্ষক সমাজকে ছেড়ে দেয়। তাতে সেই রাষ্ট্রে শিক্ষা ব্যবস্থা যেমন আধুনিক ও ফলপ্রসু হয় তেমনি শিক্ষক সমাজও থাকে প্রাগ্রসর এবং সামাজিক ও রাষ্ট্রিক মর্যাদার শ্রেষ্ট আসনে। উদাহরণ হিসাবে তো কিউবা রাষ্ট্রের কথা আনা যায়। শিক্ষা ও রাষ্ট্র ব্যবস্থাপনার ইতিহাস তৈরি করেছে। অথচ রাষ্ট্রটি ছিল আগে ক্ষুধায় জর্জড়িত ও আর্থিক সংকটে ডুবে থাকা একটি উপনেবেশিক দ্বীপ, যার পাশে পরাশক্তি আমেরিকা। সেই পরাশক্তির চোখ রাঙ্গানি উপক্ষে করে রাষ্ট্রটি শিক্ষায় আর রাষ্ট্র ব্যবস্থাপনায় আধুনিক রাষ্ট্রে পরিণত হল। হবেই তো রাষ্ট্র ন্যয়করা ছিল দূরদর্শী, তারা ক্ষমতায় এসে শিক্ষা ব্যবস্থাকে রাষ্ট্র চিন্তার কেন্দ্র নিয়ে আসল। বাজেট দেওয়া হল জাতীয় আয়ের ১৮.৭% (আঠার দশমিক সাত ভাগ) বাংলাদেশে রাখা হল জাতীয় আয়ের ২ ভাগ মাত্র। তার সাথে শিক্ষক সমাজের মর্যাদার পাশাপাশি জীবননাম উন্নয়নকে সে রাষ্ট্রে গুরুত্ব দেওয়া হল। ফলাফলও আশানুরূপ হল, সাক্ষরতার হার ১০০ ভাগ। তাদের এই সফলতায় আমরাও অভিভূত না হয়ে পারি না। যখন দেখি সে দেশের পার্বত্য দুর্গম এলাকায় এক মেঘপালক রাখাল দুপুরে রোদে গুহায় শুয়ে শুয়ে, বই পড়ছে। সেই ছবিটি পত্রিকায় আলোড়ন তুলেছিল। অন্যদিকে জাপান,ইরানও Ñএ রাষ্ট্র ২টি এই পথে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব করল।
এগিয়ে যাবেইতো, তারা তো শিক্ষকের মর্যাদা জীবনমান, শিক্ষা ব্যবস্থাকে বক্তৃতা সেমিনারে বন্দী রাখেনি। বাস্তবে কার্যকর করার জন্য সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করেছে। আমাদের ব্যর্থতা হল জাতীর তীব্র আকাঙ্খার কেন্দ্রে শিক্ষা চেতনাকে পরিপূর্ণ কার্যকর করতে পারিনি। সেই রূপকথার “শিক্ষকের মর্যাদা” নামক পদ্যের বাদশাহ আলমগীরের প্রশংসায় আতৃতৃপ্তিতে থাকতে হয়। রাষ্ট্রের কেন্দ্রিয় চেতনায় শিক্ষাভাবনার প্রাবল্য বাড়াতে পারিনি। এতে তো শিক্ষায় শিক্ষাবন্ধব সংস্কৃতি, সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা যাবে না। যার জন্য আমলা-নেতাদের আচরণ প্রশ্নবিদ্ধ, নেতিবাচক হয়-শিক্ষা কার্যক্রমে। তারা আলোচনা সমালোচনার ঝড় তুলে বির্তক তৈরি করে। তাতে শিক্ষার অগ্রযাত্রা বা রোগের কারণ দূর হয় না, রোগ নিরার্ময় হয় না। তবে রাষ্ট্রের ব্যর্থতা বা রোগের কারণকে আড়াল করা যায় মাত্র।
শিক্ষার অগ্রযাত্র শুধু নীতি কথায় হয় না। শিক্ষা নিয়ে বিশ্বের চিন্তাচেতনা আর মননশীলতার অগ্রযাত্রার সামিল থাকতে হয়। অংশীদার হতে হয়। এখানে করুণা বা ভিক্ষার কোন সুযোগ নেই। সেই যোগ্যতার জন্য নিরবিচ্ছিন্নসংগ্রামশীলতার প্রয়োজন হয়। আর প্রয়োজন ধৈর্যের। ধৈর্য মানে আবার কাল ক্ষেপন করা নয়। আধুনিকতায় ধৈর্য মানে হল সমযোপযোগী জ্ঞান আহারনে এবং তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের যাবতীয় কার্যক্রমের সংগতি করা। তা কে করবে, এই পরিশ্রমের কাজেতো নানা সৃজনশীলতার মননশীলতার প্রয়োজন হয়। যার জন্য তাকে শিল্পী বা প্রকৌশলী হতে হবে। যা শিক্ষক সমাজের পক্ষেই শুধু সম্ভব। এই প্রসঙ্গে ইতিহাস নির্ভর একটি গল্পের কথা মনে পড়ে গেল। রোমান স¤্রাট মসোলিনী রাষ্ট্র পরিচালনায় একসময় সমস্যায় পড়ে গেলেন (১৯২৩)। তখন তাঁর বুদ্ধিজীবীর প্রয়োজন হল। তালাশ পড়ে গেল-কোথায় পাওয়া যায় বুদ্ধিজীবী তার। জবাবে জানা গেল বিশ্ববিদ্যালয়ে।
তিনি জানেন না, বিশ্ববিদ্যায়কেও ছাড়িয়ে যেতে পারেন, বড় হতে পারেন এক জন শিক্ষক। যেমন- সক্রেটিস, তার শিষ্য প্লেটো, আবার তার শিষ্য অ্যারিস্টোটল, সার্ত্রে, আমাদের স্যার প্রফেসর আবদুল্লাহ আবু সাইদ, প্রফেসর জামিল রেজা চৌধুরী, প্রফেসর সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ইত্যাদি জন।
যে কথা বলেছি, সেই পরিশ্রমী ও সৃজনশীল শিক্ষার কাজটি, শিক্ষক সমাজ কেন করবে, যদি রাষ্ট্রের চিন্তার কেন্দ্রে শিক্ষক সমাজ না থাকে। তাদের সামজিক ও রাষ্ট্রিক মর্যাদার নিশ্চয়তা না পায়, আর্থিক স্বচ্ছলতায় জীবন কাটাতে না পারে। এই খানেই শিক্ষার অগ্রযাত্রার বাঁধার কারণ, রোগের কারণ খুঁজে পাওয়া যাবে। সেই রোগের নানা উপসর্গ থাকতে পারে-শিক্ষকের মান, ক্লাশ ব্যবস্থাপনার অসন্তোষ, বিষয় দক্ষতার অভাব ইত্যাদি। এসব বিষয় সেমিনার সিম্পোজিয়ামে আলোচনা হতে পারে। তাতে রোগ তো সারবে না। উপসর্গ সরানো মানে তো রোগ নিলাময় নয়। যদি তাতে রোগ সারা যেতো, তা হলে রাষ্ট্র কেন শিক্ষাবন্ধব সংস্কৃতির নিশ্চয়তা দিতে পারছে না। যদি দিতে পারত তা হলে আমলা নেতাদের নিকট প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে শিক্ষককে যেতে হত না তাদের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে হত না। নেতা আমলারা শিক্ষকের কাছে আসার কথা, খোঁজনেবার কথা। তারাও তোকারো ছাত্র ছিল। জলাশয় তো কখনো তদারককারীর-তৃষ্ণার্থের নিকট যায় না। গেলে তা তো আর জলাশয় থাকে না, তার বিশালতা থাকে না। কলসি বাঁধাজলহয়ে যায়, সীমাবদ্ধ হয়ে যায়।
এতে শিক্ষকের প্রতি শিক্ষার্থীরশ্রদ্ধা থাকে না, আগ্রহ থাকে না।মনন গঠনের জন্য, চারিত্রিক দৃঢ়তার জন্য, অনুসরনীয় মানুষ প্রয়োজন, আইকন প্রয়োজন। সেই আইকন তো এখন তাই খুঁজে পাওয়া যায় না। পেলেও দুষ্প্রাপ্য। শিক্ষাবন্ধব সংস্কৃতির অভাবে শিক্ষক সমাজের শিড়দাঁড়া শক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। নরম শিড়দাঁড়ার শিক্ষক তো প্রকৃত শিক্ষক হতে পারেন না। প্রকৃত শিক্ষা দিতে পারেন না। এখান থেকে বাহির হয়ে আসতে হবে। শিক্ষার অগ্রগতির স্বার্থে, সমাজ বিকাশের স্বার্থে, জাতীর মর্যাদার স্বার্থে।
তা করতে হলে তো প্রয়োজন সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি বদলানো, যৌথও সামগ্রিক চেতনায় শিক্ষা ভাবনাকে এগিয়ে রাখা। আমরা ভাগ্যবান, সেই এগিয়ে রাখার সূত্রপাতটি করেছেন বঙ্গবন্ধু- যিনি কিউবার রাষ্ট্র নায়ক ফিদেলকাস্ট্রোর ঘনিষ্ট বন্ধু। বঙ্গবন্ধু নিয়েফিদেলকাস্ট্রোবলেছেন “আমি হিমালয় দেখেনি, কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে দেখেছি”। সেই বঙ্গবন্ধু জ্ঞানীদের পুজারী ছিলেন। তিনি শিক্ষাকমিশনের সভাপতি নিয়োগ দিলেন ডঃ কুদরাত-ই-খুদাকে। কুদরাত-ই-খুদা তখন দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ট বিজ্ঞানীদেরও শিক্ষাবিদদের একজন। তাই সেই বিজ্ঞানিতার চারশত পঞ্চাশ পৃষ্ঠার শিক্ষা রিপোর্টে দূরদর্শীতার পরিচয় দেন। যুদ্ধ বিধ্বস্থ নতুন রাষ্ট্রের পূনর্গঠন ও অগ্রগতির বিষয়টি মাথায় রেখে আন্তরিকতার সহীত গভীর অনুধ্যান করে সে রিপোর্টটি তৈরি করে জমা দেন (১৯৭৩)। যা আন্তর্জাতিক ভাবেও প্রশংসিত হয়। তিনি জাতীয় বিকাশের পূর্বধারনায়সক্ষম ছিলেন বলে উল্লেখ করেন,“জাতীর বিকাশের স্বার্থে আমাদের বর্তমান সময় ও পরিশ্রমকে ভবিষ্যতের সুন্দরের জন্য; অর্জনের জন্য উৎসর্গ করতে হবে”। তাই শিক্ষাবাজেট প্রস্তাবে তিনি যুক্তিসহ বলেন “শিক্ষার ব্যয় সমাজ সেবামূলক কাজ হিসাবে নয়, সম্পদ সৃষ্টির অবলম্বনরূপে বিবেচিত হবার”।
যার জন্য তিনি শিক্ষা বাজেটে জাতীয় আয়ের ৭% বরাদ্দের সুপারিশ করেন। অথচ ১৯৭৩ হতে ২০১৯ এ এসেও ৩ (তিন) ভাগের দিকে যেতে পারিনি। এ ব্যর্থতা আমাদের, এ লজ্জা আমাদের। কারণ তিনি জানতেন বাঙ্গালী ভৌগেলিকভাবে স্বাধীন হওয়ায় মর্যাদাবান হয়েছে। ভাষা আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে জাতীগত পরিচয়েও মর্যাদা লাভ করেছে। কিন্তু মর্যাদাবান জাতীর কালিক পরিচয়ও লাগে। অর্থ্যাৎ জাতীকে সমসামায়িক জ্ঞান, মূল্যবোধ ও বিজ্ঞান প্রযুক্তির অগ্রগতিকে ধারণ করতে হয়। তা না পারায় অনেক জাতী মধ্যযুগে থেকে গেছে বা কিছু জাতি হারিয়ে গেছে। যার জন্য কালের চাহিদা মেটাতে হয়কালের উপযোগী হয়ে। নতুন জ্ঞান ও উপলব্ধির চেতনায় সমৃদ্ধ হতে হয়। যাতে জ্ঞান নির্ভর মননশীল জাতী তৈরি হতে পারে। এর জন্য প্রয়োজন সময়ের সাথে তাল মিলাতে শিক্ষার পথকে গতিশীল, নমনীয় ও পরিবর্তনশীল রাখা।
আবার ভেবে দেখতে হয় সেই গতিশীল শিক্ষার কেউ আপনা থেকে শিক্ষিত হয়ে উঠতে পারে না, স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে। সমযোপযোগী চলমান শিক্ষা মাত্রই সচেতন চেষ্টা, সাধনা ও দক্ষতা নির্ভর। বিশেষ করে প্রযুক্তিগত আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা। এই ধরনের শিক্ষার জন্য প্রকৌশলী প্রয়োজন। সেই প্রকৌশলী বা ইঞ্জিনিয়ার তো শিক্ষক সমাজ। শিক্ষক সমাজই পারে এই শিক্ষার কার্যকরিতা নিশ্চিত করতে-তাঁর মননশীলতায়,সৃজনশীলতায় ও দক্ষতায়। এখানেও প্রশ্ন তৈরি হয়ে যায়। মননশীলতা ও সৃজনশীলতা তো শিক্ষকের মনে এমনি এমনি তৈরি হয় না। তাড়না থেকে হয়, অঙ্গীকারদ্ধ হওয়া থেকে হয়, সমৃদ্ধি হওয়ার আকাঙ্খা থেকে হয়। তবে এই সবের প্রেক্ষপট কালের ব্যবধানে ভিন্ন হয়ে যায়।
ব্রিটিশদের পরাধীনকালে যাতনার তাড়নায় রবীন্দ্রনাথকে বিশ্বকবি হিসাবে তৈরি হতে দেখলাম। সাহিত্যের সৃজনশীল কর্ম“গীতাঞ্জলি”দিয়ে বাঙালীকে নোবেল পুরস্কারটি এনে দিলেন (১৯১৩)। আবার পাকিস্থানের দুঃশাসনের যাতনায় তাড়িত হয়ে মধ্যবিত্ত ওশিক্ষকরাবাঙালিজাতীর সামষ্ঠিক চেতনা তৈরী করতে পারেÑশিল্প সাহিত্যে অসাধারণ সৃষ্টিশীলতার পরিচয় দিতে সক্ষম হন। যা এখনও অনতিক্রম্য। এজন্য অনুধাবনটাহতে হবে জাতীয় ভাবে, বাজেটে শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিয়ে।তবে মাথায় রাখতে হবে, শিক্ষকের রূপকথার মর্যাদার চেয়ে এখন সামাজিক ও রাষ্ট্রিক মার্যাদা বাড়ানো বেশি প্রয়োজন, তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হল জীবন মানউন্নয়নে আর্থিক স্বচ্ছলতার বিষয়টি।
আবার তো মর্যাদা আর আর্থিক বিষয় দুইটি নিশ্চিত হলে হবে না, শিক্ষার অগ্রগতির জন্য প্রয়োজন অঙ্গীকারবদ্ধ হওয়া। তার জন্যও অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করতে হয়। লোটপাট ও র্দুনীতি প্রকট থাকে, দেশপ্রেমিকের চেয়েআত্মপ্রেমি বেশি থাকা। সমাজ যদি সত্যতা ও দায়িত্বশীলতার বাঁধাভূমিতে পরিণত পায় সেখানে অঙ্গীকারবদ্ধকারীরা অঙ্গীকার ধরে রাখতে পারে না। তাদেরকে হতাশায় গ্রাস করে। এর জন্য সমাজের দুরাচার, অপসংস্কৃতিগুলো দমনকার্যক্রম জোরদার করতে হয়। তবে শিক্ষক সমাজের কার্যকরিতায় গতীশীলতা থাকবে- জ্ঞান নির্ভর, কুসংস্কারমুক্ত বিজ্ঞানমনষ্ক জাতী গঠনে শিক্ষক সমাজের যে অঙ্গীকার থাকে সেই অঙ্গীকার অর্থবহ হয়ে উঠবে। বিশ্ব শিক্ষক দিবসে শিক্ষক সমাজের সেই অঙ্গীকারবদ্ধতার পরিমÐল নিশ্চিত হবে-সেটাই প্রত্যাশা।