বিশ্ব মানবতার মা ‘আধুনিক বাংলাদেশের স্থপতি’ শেখ হাসিনা

87

জননেত্রী শেখ হাসিনার জন্ম ১৯৪৭ সালে। সে বছরই পাকিস্তান স্বাধীনতা লাভ করে। অর্থাৎ ইতিহাসের এক সন্ধিক্ষণে তাঁর জন্ম। তবে জন্ম ঠিকানাটা হলো একটি রাজনৈতিক পরিবারে। এবং জন্ম থেকেই রাজনীতি এক গভীর আবহের ভেতর থেকেই তাঁর বেড়ে ওঠা। শৈশব, কৈশোরে, যৌবনে শুধু পারিবারিক কারণেই নয়, দেশের বিরাজমান পরিস্থিতি তাকে রাজনীতিমুখী করে তোলে। এই ধারাবাহিকতায় ১৯৬৬ সালে শেখ হাসিনা বেগম বদরুন্নেছা কলেজের ছাত্রী সংসদ নির্বাচনে ভিপি নির্বাচিত হন এবং একই বছর শেখ হাসিনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রোকেয়া হলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকা অবস্থায় ১৯৬৭ সালে বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়ার সাথে শুভ পরিণয়ে আবদ্ধ হন। ১৯৭১ সালে ২৮ সেপ্টেম্বর মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে শেখ হাসিনা ও ড. ওয়াজেদ মিয়া দম্পতির প্রথম সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয় জন্মগ্রহণ করে। ১৯৭৫ এর ১৫ আগষ্ট স্বপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর দীর্ঘ ৬ বছর নির্বাসনে কাটিয়ে শেখ হাসিনা ১৭ মে ১৯৮১ সালে দেশে প্রত্যাবর্তন করেন। তাঁর আগমনের ফলেই আওয়ামী লীগ নব উদ্যমে কাজ শুরু করে এবং বাংলাদেশে গণতন্ত্রের অভিযাত্রা শুরু হয়। শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত জীবনের ঘটনা প্রবাহের সাথে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা সমূহের চমৎকার সামঞ্জস্য পাওয়া যায়। শেখ হাসিনার রাজনৈতিক জীবন এবং বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অভিযান সমার্থক। শান্তি এবং উন্নয়ন কর্মকান্ডে তাঁর সুদূর প্রসারী ভূমিকা বাংলাদেশের বাইরে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের নজর কেড়েছে। ২০১০ সালে টাইম ম্যাগাজিন বিশ্বের প্রভাবশালী ১০ জন নারী নেত্রীর নাম ঘোষণা করলে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবস্থান ছিল ৬ষ্ঠতম। বাংলাদেশের অশান্ত পাহাড় অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠা, গণতন্ত্রায়ন এবং উন্নয়নের জন্য শেখ হাসিনার নিরন্তর পরিশ্রমের স্বীকৃতি হিসেবে এ ঘটনাকে বর্ণনা করা যায়। শান্তি, গণতন্ত্র ও উন্নয়নের সংগ্রামে শেখ হাসিনার অবদান অবিস্মরণীয়। তাঁর রাজনৈতিক জীবন, নেতৃত্বে ও রাষ্ট্র পরিকল্পনার মৌলিক এজেন্ডাসমূহ শান্তি, গণতন্ত্র ও উন্নয়ন এর সাথে সম্পর্ক রয়েছে। শান্তি কখনো লক্ষ্য, আবার কখনো তা প্রক্রিয়াও। সে অর্থে গণতন্ত্র, উন্নয়ন শান্তি প্রক্রিয়ারই সমার্থক। কার্যত প্রগতির অর্থ অনুধাবনের শান্তি, গণতন্ত্র ও উন্নয়নকে আলাদা করে দেখার সুযোগ নেই। এই উপমহাদেশের মহীরুহ নেতা বঙ্গবন্ধু, মহাত্মাগান্ধী, জওহরলাল নেহেরু, ইন্ধিরা গান্ধির সাথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম একই কাঁতারে উচ্চারিত হচ্ছে।
১৯৮১ সালের ১৫ ফেব্রূয়ারি বহুধা বিভক্ত আওয়ামী লীগের ঐতিহাসিক কাউন্সিলে সর্বসম্মতভাবে শেখ হাসিনাকে সভানেত্রী নির্বাচিত করা হয়। এসময় বিদেশী পত্রিকার সাথে এক সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে আনাই তার প্রধান লক্ষ্য’। ১৯৮১ সালের ২৯ জুন শেখ হাসিনা বিচারপতি সাত্তারকে রাষ্ট্রপতি প্রার্থী করা সংবিধান পরিপন্থী বলে বিবৃতি দেন, যা শীর্ষস্থানীয় সংবিধান বিশেষজ্ঞরা সর্মথন করেন। ১৯৮৩ সালের ১৫ ফেব্রূয়ারি শেখ হাসিনাকে চোখ বেঁধে ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে যাওয়া হয়। এ বছরই ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শেখ হাসিনা দলীয় নেতাকর্মীদের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামের লক্ষ্যে শপথ বাক্য পাঠ করান। ঘরোয়া রাজনীতি চালু হবার ফলে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৫ দলীয় জোট প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৮৪ সালের তৎকালীন ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের জনসভায় বোমাবাজির ঘটনা ঘটানো হয়। এভাবে বঙ্গবন্ধু কন্যাকে রক্ত নদী সাঁতরে রাজনীতিতে ঠিকে থাকতে হয়েছে। সুতরাং এই ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ ও মর্মস্পর্শী ঘটনা। এভাবে শেখ হাসিনাকে ১৯ বার হত্যা প্রচেষ্টা চালানো হয়। মৃত্যুঞ্জয়ী শেখ হাসিনা এক হাতে লাশ ধরে নামিয়ে রক্ত সরিয়ে দেন, অন্য হাতে গণতন্ত্রের মশাল হাতে উন্নয়নের নবদিগন্ত উন্মোচন করেছেন। দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার রাষ্ট্রনায়কোচিত প্রজ্ঞা ও ব্যক্তিত্বের প্রমাণ রেখেছেন। বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মূলধারা ফিরিয়ে আনতে তাঁর প্রচেষ্টা ছিল সাহসী প্রয়াস। ১৬ কোটি মানুষের এই বিশাল জনগোষ্ঠীর আশা আকাঙ্কা বাস্তবায়নে শেখ হাসিনা দুরদর্শী রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে পরি গণিত হয়েছে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবন মানের উন্নয়নে দরদী হৃদয় দিয়ে তিনি সেবকের ভ‚মিকায় অভিভুক্ত করেছেন। তিনি নিজেকে শাসক মনে করেন না সেবক হিসেবে তার সোনালী হাতে জাতির মুক্তির বীজ বুনেছেন। শেখ হাসিনা ১ লক্ষ ৪৭ হাজার বর্গকিলোমিটার সীমানা ছাড়িয়ে এখন বিশ্বসভার আদৃত এক নাম। তিনি দেশের অভ্যন্তরে চরমপন্থী জঙ্গি নির্মূল করেছেন দক্ষতার সাথে।
পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ে শান্তি চুক্তি করে বাংলাদেশের প্রতি ইঞ্চি ভূখণ্ড নিরাপদ করেছেন। রাজনৈতিক সন্ত্রাসের মুলোৎপাটন করে দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রেখেছেন। সাম্প্রতিক সময়ে শিক্ষার হার ৭৫% এ উন্নতি হওয়া এম ডিজিতে সেনিটেশন ব্যবস্থার এ্যাওয়ার্ড পাওয়া স্বাস্থ্যসেবা সুলভ করা, নারী শিক্ষা বিনা বেতনে করার মতো ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত প্রবর্তন করেন। এই সময়ে শেখ হাসিনা সারা বিশ্বের মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন প্রতিবেশী মায়নমারের নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ২য় বৃহত্তম শরনার্থী আশ্রয়দানকারী দেশ। নির্যাতিত মানুষের আশ্রয়দাতা হিসেবে শেখ হাসিনা আজ শান্তির আবাসে পরিণত করেছেন আমাদের দেশকে। রোহিঙ্গা সমস্যায় শেখ হাসিনা ধৈর্য্য ও বিচক্ষণতার পরিচয় দেয়ায় আঞ্চলিক শান্তির পরিবেশ ক্ষুন্ন হয়নি। শেখ হাসিনা জাতিসংঘে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে ৫ দফা প্রস্তাবনা তুলে ধরেছেন। ফলে শেখ হাসিনাকে এখন বিশ্বসভায় ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ বলে অভিহিত করা হচ্ছে। এসবই ব্যক্তি শেখ হাসিনার বিশাল অর্জন। প্রতিদিন তিনি তাকে ছাড়িয়ে যাচ্ছেন আলোর দ্যূতি ছড়িয়ে। শেখ হাসিনাতে মুগ্ধ তাবৎ বিশ্ব। সম্প্রতি আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা কেনিয়া সফরে গিয়ে বলেছেন, “বাংলাদেশ কিভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তাদের অনুসরণ করুন।” ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, “বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ সৃষ্টি করেছেন, তাঁর কন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে রক্ষা করেছেন।” দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশ সফরে এসে বলেছেন, “বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।” জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে শেখ হাসিনা তাঁর বাংলায় দেয়া ভাষণে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের নজর কাঁড়তে সক্ষম হন। তাঁর বক্ততায় বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান যেমন ব্যক্ত করেছেন, তেমনি টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে উন্নয়নশীল জাতি সমূহের পাশে দাঁড়ানোর জন্য জাতিসংঘের দেশ সমূহের প্রতি আহব্বান জানান। বিশ্বব্যাপী সাইবার ক্রাইমের বিরুদ্ধে তাঁর বক্তব্য ছিল সময় উপযোগী। তিনি অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধ করে শান্তি, উন্নয়ন ও শিক্ষাখাতে ব্যয় বাড়ানোর আহব্বান জানিয়েছেন। অসত্যের উত্থানে বিশ্ব যখন টলটলায়মান। আরেকটি বিশ্বযুদ্ধের হুমকি পৃথিবীবাসীকে ক্ষণে ক্ষণে উদ্বিগ্ন করছে। এই সময় শেখ হাসিনা সম্পূর্ণ ভিন্ন কৌশলে বিশ্ব শান্তি অর্জন, দারিদ্রতা হ্রাসে যুগান্তকারী ভূমিকা রাখছেন। মহাকাশে তিনি বঙ্গবন্ধু স্যাটালাইট উৎক্ষেপন করেছেন, তিনি সমুদ্রসীমা বিজয় করে বাংলাদেশের আয়তন বাড়িয়েছেন, সাবমেরিন ক্যাবলের সাথে সংযুক্ত করা হয়েছে দেশকে, তিনি পদ্মা সেতু নির্মাণ করে স্বপ্নসম্ভবের দেশে পরিণত করেছেন বাংলাদেশকে। শেখ হাসিনা আজ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকবর্তিকা বয়ে যাচ্ছেন অকুতভয় চিত্তে। নির্যাতিত, নিপীড়িত, বঞ্চিত মানুষের তিনি শেষ আশ্রয়স্থল। মিয়ানমার সরকারের ভয়াবহ নির্যাতনে আশ্রয়হীন ১০লক্ষাধিক রোহিঙ্গা শরণার্থীকে বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়ে নাড়িয়ে দিয়েছেন বিশ্বকে। আজ সারা বিশ্বেই তাঁর নাম আলোচিত হচ্ছে ‘বিশ্বমানতার বিবেক’ হিসেবে। তাঁর নিখাদ দেশ প্রেম, মানুষের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা, দূরদর্শিতা, দৃঢ়চেতা, মানসিক ও মানবিক গুণাবলী তাঁকে আসীন করেছে বিশ্ব নেতৃত্বের আসনে। আইআরআর নামক বিশ্ব সংস্থার জরীপে প্রকাশিত হয়েছে, বিশ্বের নারী নেত্রীদের মধ্যে শেখ হাসিনা হচ্ছে যোগ্যতম। সামগ্রীকভাবে দক্ষতা, সততা ও যোগ্যতা বিবেচনায় তিনি ৩য় তম সেরা নেত্রী। একবিংশ শতাব্দীর অভিযাত্রায় দিন বদলের মাধ্যমে আধুনিক বাংলাদেশ গড়ার সুনিপুণ কারিগর। তিনিই বাঙালির জাতীয় ঐক্যের প্রতীক ও ভরসার শেষ আশ্রয়স্থল। বিশ্ব মানবতার বাতিঘর। বিশ্ব শান্তির অগ্রদূত শেখ হাসিনার হাতেই সুন্দর বাংলাদেশ স্বপ্নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা প্রাণপ্রিয় নেত্রীর ৭৪তম জন্মবার্ষিকীতে জানাই অকৃত্রিম শ্রদ্ধা ও কামনা করছি দীর্ঘায়ু।

লেখক : সাধারণ সম্পাদক
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ