বিশ্ব বাবা দিবস আজ

129

বাবা। ছোট কিন্তু অদ্ভুত ব্যঞ্জনাময় একটি শব্দ। বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে উচ্চারিত শব্দগুলোর অন্যতম। বাবা মানে নিঃস্বার্থ ভালোবাসার এক ঠিকানা, বাবা মানে নিশ্চিন্ত নির্ভরতা, শর্তহীন নিরাপত্তা, বাবা মানে বিশালতা। আজ বিশ্ব বাবা দিবস। দেশে দেশে ঘরে ঘরে সন্তানরা আজকের এই দিনে তাদের প্রিয় বাবাকে প্রতিদিনের চেয়ে একটু আলাদা করে ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা জানায়।
বাবার স্নেহ যেমন কোনও এক দিবসে সীমাবদ্ধ নয় তেমনি দিবসের জন্যও স্নেহ নয়। হৃদয়ের টানে বাবার দরদ। সন্তানের আবেদন পূরণ না হলে বাবার জন্য যন্ত্রণার। সন্তান দূরে থাকলে বাবার অস্বস্তির শেষ নেই। যতদূরে থাক মুখের কথা না শুনে বাবার ঘুম আসে না। বাবার ভালোবাসার আনুষ্ঠানিকতার প্রয়োজন হয় না। তবে কর্মব্যস্ততা বাবাকে সন্তানের কাছ থেকে কিছু সময় দূরে রাখে। বাবা দিবসে তা নতুন করে উজ্জীবিত হয়, শাণিত হয়।
বিশ শতকের গোড়ার দিকে দিবসটি পালন শুরু করে যুক্তরাষ্ট্রে। বিশ্বে একেকটি দেশ একেক দিন বাবা দিবস পালন করলেও বাংলাদেশসহ এশিয়া ও ইউরোপের অধিকাংশ দেশেই জুন মাসের তৃতীয় রবিবার দিবসটি পালন করা হয়ে থাকে। বিশ্বের প্রায় ৫২ দেশে এ দিবসটি পালিত হয়। পিতার প্রতি সন্তানের ভালোবাসা প্রকাশের জন্য দিনটি বিশেষভাবে উৎসর্গ করা হয়ে থাকে।

সন্তান কাছে না থাকলে অস্বস্তিতে ভোগেন বাবা। হৃদয়ের গহীনে অনুভব করেন অব্যক্ত বেদনা। সন্তান বাড়ি ফিরলে বাবার আসে চোখে-মুখে হাসি। এ ভালোবাসা বাস্তবের, অনুভূতির। এটা বলে প্রকাশের নয়। বাবাই সন্তানের আদর্শ। বাবার কাছ থেকেই সন্তান শেখে মাথা উঁচু করে পৃথিবীতে টিকে থাকতে। ন্যায়-অন্যায়ের পার্থক্য করতে। নিজেকে একজন মানুষ হিসেবে গড়তে। জীবন নামের বীজ বপনের দায়িত্ব বাবাই পালন করেন। সন্তানের কাছে বাবা পথপ্রদর্শক ও বন্ধু।
বাবা দিবসের প্রবক্তা আমেরিকার সোনোরা স্মার্ট ডড। তার হাত ধরেই ১৯১০ সালের ১৯ জুন সোনোরার নিজ শহর ওয়াশিংটনের স্পোকেনে প্রথমবারের মতো বাবা দিবস পালিত হয়। এর প্রায় ছয় বছর পর ১৯১৬ সালে আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন এ দিবসকে সমর্থন করেন। এক সময় এটা দেশটির আইন সভাতেও স্বীকৃতি পায়। সেই থেকে জুন মাসের তৃতীয় রবিবার বিশ্ব বাবা দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। প্রেসিডেন্ট নিক্সন ১৯৭২ সালে আমেরিকায় দিবসটি রাষ্ট্রীয়ভাবে উদযাপনের সিদ্ধান্ত নেন। এভাবেই বিশ্বজুড়ে পৃথিবীর নানা দেশে দিবসটি আনন্দ আর ভালোবাসায় পালিত হয়ে আসছে। বাবার হাত ধরেই সন্তান পৃথিবীকে যখন চিনতে শুরু করে তখন থেকেই একটু একটু বুঝতে শিখে বেঁচে থাকার মানে। বাবা তাই সন্তানের জীবনে পরম বন্ধু। তবে এ বন্ধুত্বের মধ্যে কোথায় যেন ছড়িয়ে আছে খানিক গাম্ভীর্যের মেঘ, কিন্তু ওই মেঘেই ধরা দেয় পৃথিবীর অপার সৌন্দর্য। প্রত্যেকটা মানুষ তার জীবন-অভিজ্ঞতা থেকেই জানেন, জন্মের পর, মায়ের পরেই যে মানুষটি তার নিঃস্বার্থ স্নেহ-ভালবাসা আর দায়িত্বশীলতার শৃঙ্খলে বেঁধে সন্তানের জীবনকে নিরাপদ ও সুন্দর রাখতে চায়, তিনি হলেন জন্মদাতা বাবা। তাই পবিত্র ধর্মেও মায়ের পাশাপাশি বাবাকে দেয়া হয়েছে সর্বোচ্চ সম্মান।