বিশ্ব ফুটবল কিংবদন্তির চিরবিদায় বিশ্ববাসীর হৃদয়ে অমর হয়ে থাকবে ম্যারাডোনা

61

আন্তর্জাতিক ফুটবলের কিংবদন্তি আর্জেন্টিনার খ্যাতিমান ফুটবলার ডিয়াগো ম্যারাডোনা আর নেই। বিশ্বের কোটি ভক্ত ও ফুটবলপ্রেমিকদের শোকসাগরে ভাসিয়ে গত ২৫ নভেম্বর বুধবার রাতে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে নিজ বাসায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬০ বছর। তাঁর মৃত্যুতে বাংলাদেশসহ সারাবিশ্ব শোকের সাগরে ভাসছে। কোটি ভক্তের আহাজারিতে আকাশ ভারি হয়ে উঠেছে। আর্জেন্টিনা ৩দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে। আমরাও এ কিংবদন্তির মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করছি।
সূত্র জানায়, নভেম্বরের প্রথম দিকে মস্তিষ্কে রক্তজমাট বাঁধার কারণে অস্ত্রোপচার হয়েছিল ম্যারাডোনার। অনেকটা সুস্থা অনুভব করার পর তাঁকে হাসপাতাল থেকে বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু নিয়তি বলে কথা, বাসায় ফেরার দুই সপ্তাহ পর তার মৃত্যু হলো। এমনিতেই গত কয়েক বছর ধরে স্বাস্থ্য জটিলতায় ভুগছিলেন ম্যারাডোনা। পাকস্থলীর ভেতর রক্তক্ষরণের কারণে ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ২০১৮ সালের বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা ও নাইজেরিয়ার ম্যাচে অসুস্থবোধ করায় শেষ পর্যন্ত খেলা দেখতে পারেননি তিনি। সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার ম্যারাডোনা আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ জেতান ১৯৮৬ সালে। পেশাদার ক্যারিয়ারে ম্যারাডোনা আর্জেন্টিনা জুনিয়ার্স, বোকা জুনিয়ার্স, বার্সেলোনা, নাপোলি, সেভিয়া এবং নিওয়েলস ওল্ড বয়জের হয়ে খেলেছেন। ম্যারাডোনা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আর্জেন্টিনার হয়ে ৯১ খেলায় ৩৪টি গোল করেন। তিনি চারটি ফিফা বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করেছিলেন। যার মধ্যে ছিল ১৯৮৬ বিশ্বকাপ, যেখানে তিনি আর্জেন্টিনার অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন এবং দলকে বিশ্বকাপ জয়ের নেতৃত্ব দেন। প্রতিযোগিতার সেরা খেলোয়াড় হিসেবে স্বর্ণপদক জেতেন।
১৯৮৬ সালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে কোয়ার্টার ফাইনালে তিনি তার বিখ্যাত হাত দিয়ে গোলটি করেন, যেটি ‘হ্যান্ড অফ গড’ নামে কিংবদন্তি গোল হিসাবে পরিচিতি লাভ করে। ১৯৯০ সালে আর্জেন্টিনা যখন ফাইনালে ওঠে তখন দলকে নেতৃত্ব দেন ম্যারাডোনা। ইতালিতে ওই খেলায় তাদের হারিয়ে দেয় পশ্চিম জার্মানি। এরপর ১৯৯৪ সালে তিনি আবার আমেরিকায় আর্জেন্টিনা দলের অধিনায়কত্ব করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু অবৈধ মাদক পরীক্ষায় ফেল করার কারণে তাকে আর্জেন্টিনা ফিরে যেতে হয়। তার জীবনের পরের দিকে ম্যারাডোনা কোকেন আসক্তি নিয়ে সমস্যায় ছিলেন এবং ১৯৯১ সালে তার শরীরে মাদকের উপস্থিতি ধরা পড়লে তাকে ১৫ মাসের জন্য নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়। এরপর থেকে মূলত দিয়াগো মেরাডোনা মাদক আসক্তিসহ নানা উচ্ছৃঙ্খলতার জন্য বেশ সমালোচিত হন। তাঁর যাপিতজীবনে সমালোচনার তীর আসতে থাকে বিভিন্ন পক্ষ থেকে। মূলত এসময় থেকে ফুটবল কিংবদন্তি আর মাঠের যাদু প্রদর্শন করতে পারেন নি। তাঁর দূর্দান্ত মনমুগ্ধকর ফুটবল খেলা দেখা থেকে বঞ্চিত হলো কোটি ভক্ত। ১৯৯৭ সালে তাঁর ৩৭তম জন্মদিনে তিনি পেশাদার ফুটবল থেকে অবসরের কথা ঘোষণা করেন। সেই সময় তিনি আর্জেন্টিনার বড় দল বোকা জুনিয়ার্সে খেলছিলেন। অবসরের পর অবশ্যই তিনি আর্জেন্টিনার কোচ হিসাবে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। ম্যারাডোনা ২০০৮ সালে জাতীয় দলের কোচ নিযুক্ত হন এবং ২০১০ সালের বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা জার্মানির কাছে কোয়ার্টার ফাইনালে হেরে যাবার পরে তিনি কোচের পদ থেকে অবসর নেন। এরপর মেরাডোনাকে আর মাঠে দেখা যায়নি। আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন ম্যারাডোনার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে টুইটে বলেছে, ‘আপনি সব সময় আমাদের হৃদয়ে থাকবেন।’ আমরাও সহমত পোষণ করছি। মেরাডোনা বিশ্বের কোটি ফুটবল প্রেমিকের হৃদয়ে অক্ষয়-অমর থাকবেন।