বিশ্বে আক্রান্ত ১০ লাখের বেশি, মৃতের সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়ালো

44

যুক্তরাষ্ট্রের জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী সারাবিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়িয়েছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ৫৩ হাজার মানুষ মারা গেছে করোনাভাইরাসের কারণে হওয়া রোগ কোভিড-১৯ এ। সুস্থ হয়েছেন ২ লাখ ১০ হাজার মানুষ। সবচেয়ে বেশি সংখ্যক আক্রান্ত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে, সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে ইতালিতে।
প্রায় তিনমাস আগে চীনের মধ্যাঞ্চলে উদ্ভূত কোভিড-১৯ রোগে ১০ লাখের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে বলে জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরীক্ষায় উঠে এলেও আসল সংখ্যাটা এর চেয়ে অনেক বেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে। করোনাভাইরাসে এক লাখ মানুষ আক্রান্ত হতে প্রায় দেড় মাস সময় নেয়। সেটি ১০ লাখে রূপান্তরিত হতে সময় লাগলো আরো দেড় মাসের মতো।
গত প্রায় এক সপ্তাহের ব্যবধানে বিশ্বব্যাপি ভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। এর মধ্যে এক চতুর্থাংশ আক্রান্তই শনাক্ত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে, আর আক্রান্তদের প্রায় অর্ধেক ইউরোপে।
যুক্তরাষ্ট্রে একদিনে ১,১৬৯ জনের মৃত্যু
গত বৃহস্পতিবার জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় যুক্তরাষ্ট্রে মারা গেছেন ১ হাজার ১৬৯ জন। এখন পর্যন্ত যে কোনো দেশে একদিনে মারা যাওয়া মানুষের সংখ্যার হিসেবে এটিই সর্বোচ্চ। এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে এখন পর্যন্ত প্রায় ৬ হাজার মানুষ মারা গেলেন। আর আক্রান্ত হয়েছেন ১ লক্ষ ৪৪ হাজার মানুষ।
স্পেনের কর্তৃপক্ষ জানায় তাদের দেশে আগের ২৪ ঘন্টায় ৯৫০ জন মারা গেছে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে। স্পেনে করোনাভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১০ হাজার ২৩৮ জনে।
আগের দিনের চেয়ে আক্রান্তের হার বৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ৮%, যা এর আগের কয়েকদিনও একই রকম ছিল। এর ফলে বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন স্পেন তাদের দেশে প্রাদুর্ভাবের চূড়ান্ত পর্যায়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ আগামি কিছুদিনেরে মধ্যে সংক্রমণের হার কমতে থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মৃত্যুর সংখ্যার হিসেবে ইতালির পরে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত দেশ স্পেনে এরই মধ্যে প্রায় ৯ লাখ মানুষ কর্মহীন হয়েছে।
যেভাবে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি :
ডিসেম্বরের শেষে লি ওয়েনলিয়াং নামের চীনের এক এপিডেমোলজিস্ট বা মহামারি বিশেষজ্ঞ হুবেই প্রদেশেনর উহান শহরে উদ্ভূত হওয়া এক নতুন ভাইরাস সম্পর্কে চীনের অন্যান্য এলাকার চিকিৎসকদের সতর্কবার্তা পাঠানোর চেষ্টা করেন। পরবর্তীতে অযথা আতঙ্ক ছড়ানোর অভিযোগে তাকে সতর্ক করে পুলিশ।
উহানে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে ৬ ফেব্রূয়ারি মারা যান ডক্টর লি। ৩১ ডিসেম্বর প্রথমবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে চীন জানায় যে অজানা কারণে নিউমোনিয়া হয়ে তাদের দেশে মানুষের মৃত্যুর ঘটনা হচ্ছে। ৩ জানুয়ারি উহানের ‘অজানা ভাইরাস’ নিয়ে প্রথম প্রতিবেদন তৈরি করে বিবিসি। সেসময় মোট ৪৪ জনের মধ্যে ঐ ভাইরাস শনাক্ত হয়েছিল, যাদের মধ্যে ১১ জনের অবস্থা গুরুতর ছিল।
অনেকে ধারণা করছিলেন পরিস্থিতি ২০০৩ সালের সার্স প্রাদুর্ভাবের মতো হতে পারে। সেসময় ৭৭৪ জন মারা গিয়েছিলেন। ১৮ জানুয়ারির মধ্যে করোনাভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয় ৬০ জন। তবে তখনও বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছিলেন যে আসল সংখ্যাটা প্রায় ১ হাজার ৭০০ এর মতো হতে পারে।
এরপরের দুই দিনের মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ২০০ জনে। বেইজিং, সাংহাই, শেনজেনের মতো বড় শহরগুলোতেও মানুষের মধ্যে ভাইরাসটির সংক্রমণের প্রমাণ পাওয়া যায়। খবর বিবিসি বাংলার
২৩ জানুয়ারিতে উহানকে লকডাউন করা হয়। ঐ সময় পর্যন্ত ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ১৮ জন মারা যায় এবং তাইওয়ান, জাপান, থাইল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রে মোট ৫৭০ জনের মধ্যে সংক্রমণের প্রমাণ পাওয়া যায়। দশদিন পর, ফিলিপিন্সে ৪৪ বছর বয়সী এক ব্যক্তি মারা যায় ঐ ভাইরাসের কারণে, যেটি ছিল চীনের বাইরে প্রথম ব্যক্তির মৃত্যুর ঘটনা।
তার এক সপ্তাহ পর ফ্রান্সে ৮০ বছর বয়সী এক পর্যটক মারা যায়- যা ইউরোপে করোনাভাইরাসে প্রথম মৃত্যু। তারও পাঁচদিন পর ইরানে ভাইরাসের প্রকোপ দেখা দেয়- দু’জন ব্যক্তি ভাইরাস সংক্রমণের শিকার হয়েছেন, এমন ঘোষণা আসার পরপরই মারা যায়। পরে ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের অন্যতম কেন্দ্রে পরিণত হয় ইরান।
ইতালিতে সংক্রমিতের সংখ্যা হঠাৎ বেড়ে যায় ২৩ ফেব্রূয়ারি। লোমবার্দি অঞ্চলের ১০টি শহরকে লকডাউন করা হয়, যেই লকডাউন পরবর্তীতে ইতালিজুড়ে আরোপ করা হয়। ২৩ মার্চ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন যুক্তরাজ্যে ৩ সপ্তাহব্যাপী লকডাউনের ঘোষণা দেন। তিনদিন পর ২৬ মার্চ, করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যার হিসেবে চীনকে অতিক্রম করে যুক্তরাষ্ট্র।
২ এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্রে মোট করোনাভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা ২ লাখ ১৭ হাজার ছাড়ায়- সংখ্যায় যা ইতালিতে মোট আক্রান্ত হওয়া মানুষের দ্বিগুন।