বিশ্বাস

164

অফিসে ঢুকতেই মেজাজটা বিগড়ে গেল সৈকতের। বিদ্যুৎ নেই। জেনারেটরে এসি চলে না। রিচার্জেবল পাখা আছে চেয়ারের পেছনে। সৈকত চেয়ারে বসে পাখাটি অন করে দেয়। বেশ গরম পড়েছে এবার। গাড়ি থেকে নেমে দুটি সিঁড়ি ডিঙিয়ে অফিসে ঢোকা। এটুকু পথ মাড়াতেই ঘেমে যায় সৈকত। গরম বেশি পড়লে মেজাজও তিরিক্ষি হয়ে যায়।
বারেক এসে কোনো কথা বলল না। মাথা নিচু করেই দাঁড়িয়ে থাকল। সৈকত বলল- যাও কাপ পরিষ্কার করে চা নিয়ে এসো।
তারপর বারেক চায়ের কাপ নিয়ে ফিরে গেল। ফিম ধরে বসে আছে সৈকত। মেজাজ বিগড়ানোর কারণ শুধুই লোডশেডিং এবং চায়ের কাপে ময়লা নয়; ব্যবসা-বাণিজ্যের অবস্থা মোটেই ভালো যাচ্ছে না। রাজনৈতিক দলগুলো কয়দিন পরপরই হরতাল, ধর্মঘট দিচ্ছে। সৈকতের এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট বিজনেসের বারোটা বাজছে। চট্টগ্রাম বন্দরে মাল এসে পড়ে আছে দু’সপ্তাহ। হরতাল-অবরোধের কারণে বের করতে পারছে না। ক্লায়েন্টদের কাছেও অনেক টাকা আটকা পড়ে আছে। সবকিছু মিলিয়ে লেজে-গোবরে অবস্থা সৈকতের। উদোর পিন্ডি যেমন বুধোর ঘাড়ে যায় তেমনি ব্যবসা-বাণিজ্যের মন্দার খড়গ গিয়ে পড়ল বারেকের চায়ের কাপে।
ল্যান্ডফোনটা বেজে উঠল। রিসিভার তুলবে কি তুলবে না দ্বিধায় পড়ল সৈকত। খানিকক্ষণ রিং বাজার পর রিসিভার তুলে কানে ধরল।
হ্যালো।
মীর সৈকত বলছেন?
জী। বলছি।
কেমন আছেন?
ভালো। আপনি?
আমি হায়দার জামান। আমাকে হায়দার অথবা জামান দুটোর যেকোনো নাম নিয়ে ডাকতে পারেন। অথবা দুটো এক করেও ডাকতে পারেন। আমার কোনো আপত্তি নেই।
আপনার নাম নিয়ে থিসিস করার মতো সময় এবং ইচ্ছে কোনোটাই আমার নেই। কেন ফোন করেছেন বলুন।
ফোন যেহেতু করেছি তবে নিশ্চয়ই একটা কারণ আছে। এটুকু আপনাকে নিশ্চিত করতে পারি ব্যবসায়িক কোনো কারণে ফোনটা করিনি।
তাহলে?
আপনার কাছে আমার কয়েকটা ব্যক্তিগত প্রশ্ন করার আছে। আপনি ব্যস্ত না থাকলে এবং অনুমতি দিলে প্রশ্নগুলো করতে পারি।
জী করুন।
আচ্ছা সৈকত সাহেব আপনার স্ত্রীর নাম কি দিয়া?
কেন বলুন তো?
আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দিন। তারপর বলছি।
হ্যাঁ দিয়া।
বাড়ি বরিশাল?
হ্যাঁ।
আপনার একটিমাত্র মেয়ে নাম প্রিয়া।
ঠিক তাই।
আপনি তো দেখছি আমার পরিবারের সবাইকে চেনেন? বলল সৈকত।
শুধু চিনি না। জানিও। দেখুন আপনার ল্যান্ডফোন নাম্বারটাও আমার জানা আছে।
তাই তো দেখছি। আর ভনিতা না করে এবার কি বলবেন ফোনটা কেন করেছেন? এখন অফিস আওয়ার। বেশিক্ষণ ফোনে এনগেজও রাখা যাবে না।
বলছি। তবে আমার প্রশ্নের সত্য উত্তরটাই দেবেন সৈকত সাহেব।
জি। বলুন।
দিয়া আপনার স্ত্রী?
হ্যাঁ।
আর প্রিয়া আপনার একমাত্র কন্যা।
হ্যাঁ। আচ্ছা, হায়দার সাহেব নাকি জামান সাহেব যাই হোক দিয়া আর প্রিয়াকে নিয়ে আপনি এত ঘোল পাকাচ্ছেন কেন?
ঘোল পাকাচ্ছি, কারণ দিয়া আপনার বিয়ে করা বউ মানছি কিন্তু প্রিয়া আপনার সন্তান এ ব্যাপারে আপনি কতটুকু নিশ্চিত।
কী! কী বলতে চাইছেন আপনি?
বলতে চাইছি আপনি কি নিশ্চিত যে প্রিয়া আপনারই সন্তান?
দিয়ার সন্তান প্রিয়া মানে প্রিয়া সৈকতেরও সন্তান অঙ্কটা অত সহজ নয় সৈকত সাহেব।
তাহলে?
প্রিয়া আসলে কার সন্তান সেটা সত্যি করে বলতে পারবে একমাত্র দিয়া।
মানছি। দিয়াই বলতে পারবে। কিন্তু আপনি কী করে জানেন যে প্রিয়া আমার সন্তান নয়?
প্রিয়া আপনার সন্তান নয় সেটাও আমি বলছি না।
তাহলে সত্যিটা কি? অনেকটা রেগে যায় সৈকত।
সত্যিটা বলবে দিয়া।
ফোনটা কেটে যায়। সৈকতের ল্যান্ডফোন সেটে কলার আইডি দেখায় না। তাই রিসিভ করা কল নাম্বারটা খুঁজে বের করতে পারল না সৈকত। কয়েকবার চেষ্টা করল। ব্যর্থ হয়ে বরফের মতো জমে গেল।
এ কি শুনল সৈকত! এ রকম নির্মম কথাও তাকে বিশ্বাস করতে হবে?
প্রিয়ার ফুটফুটে কোমল চেহারাটা ভেসে উঠল চোখের পর্দায়। গত মে মাসেই ওর বয়স তিন পেরিয়েছে। কোমল হাত-পা। মুখের আদলটা এক্কেবারে দিয়ার মতোই। চোখ নাক। ঘাড়ে অবধি কোঁকড়ানো চুল। কত বায়না প্রিয়ার। ছোট-বড় পুতুল নেবে। হাঁড়ি-পাতিল নিয়ে মিছেমিছি রান্নাবান্না খেলবে। অফিস থেকে ফিরলেই পাপ্পা বলে জড়িয়ে ধরবে। আর জিজ্ঞেস করবেÑ আমার জন্য কী এনেছ পাপ্পা? ১০০ পার্সেন্ট নিশ্চিত প্রিয়া আমারই সন্তান। সৈকত টেবিল চাপড়ে বলে ওঠে। বারেক দৌড়ে আসে। দাঁড়িয়ে কাঁপতে থাকে।
স্যার আমাকে ডেকেছেন?
না।
বারেক চলে যাওয়ার জন্য ফিরতেই ডাক দেয় সৈকত। চায়ের কাপ নিয়ে যাও।
বারেক ঠাÐা হওয়া চা নিয়ে যায়।
প্রিয়া দিয়ার গর্ভে আসার পরের সময়গুলো মনে পড়ে সৈকতের। প্রথম সন্তান গর্ভে আসছে বলে দিয়া খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিল। নানাবাবে সাহস জুগিয়েছিলাম। চার মাসের মাথায় তলপেটে নড়াচড়া অনুভব করে দিয়া। সময় গড়িয়ে যায়। তলপেটে প্রিয়ার হাত-পা ছুটোছুটি বাড়তে থাকে। সবকিছুই কাছে থেকে স্পর্শ করেছিল সৈকত।
তারপর ডাক্তারের দেওয়া ডেলিভারির নির্দিষ্ট দিনটি এলো। দিয়াকে মাতৃসদনে নিয়ে যাওয়া হলো। ভয়ে কুঁকড়ে গিয়েছিল দিয়া। বারবার ব্যথায় এবং কান্নায় ভেঙে পড়ছিল। সব কষ্ট পেটে ধারণ করে সৈকতের কোলে দিয়েছিল ফুটফুটে প্রিয়াকে।
সৈকত আর ভাবতে চায় না। হায়দার জামান নামের ওই লোক নিশ্চয়ই মিথ্যে বলেছে। আমাদের সুখের সংসারে চিড় ধরানোর জন্য একটা অজুহাত বেছে নিয়েছে।
বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থাকে সৈকত। ল্যান্ডফোনটা বেজে ওঠে। রিসিভার তোলে না। মোবাইলে কল আসে। রিসিভ করে না। কোনো কিছুই ভালো লাগে না সৈকতের।
আচ্ছা হায়দার জামানের কথাগুলো সত্যি নয় তো? ভাবছে সৈকত। মিথ্যে এ ধরনের কথা বলবে কেন সে? দিয়ার সঙ্গে ওর কোনো সম্পর্ক…। আর বেশি ভাবতে চায় না সৈকত। দিয়ার সঙ্গে প্রেম করে বিয়ে হয়নি সৈকতের। কিন্তু বিয়ের পর ভালোই মানিয়ে নিয়েছে ওরা। ছয়-সাত বছরে ওদের দুজনের বোঝাপড়াটাও বেশ ভালো। বিয়ের আগে প্রেম নয় বরং বিয়ের পরে প্রেম গভীরতর হয়েছে।
কিন্তু হঠাৎ করে একটা টেলিফোন কল কি সৈকত-দিয়ার সাজানো সংসারকে লÐভÐ করে দেবে? দিয়া কি তার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে? প্রেম-ভালোবাসার নামে অভিনয় করছে? মিথ্যে সংসার সাজিয়ে নিজের অতীতকে ধরে রাখছে?
এমনি হাজারো প্রশ্ন জড়ো হতে থাকে সৈকতের মাথায়। ভেবে পায় না সৈকত কী করবে। হায়দার জামান দ্বিতীয়বার ফোন না করলে তাকে পাওয়ারও কোনো উপায় নেই। না কি দিয়াকে জিজ্ঞেস করব হায়দার জামান নামে কাউকে চেনে কিনা?
না, এখন জিজ্ঞেস করা ঠিক হবে না। হায়দার জামানের ফোনের অপেক্ষায় থাকি।
বিকেলে বিমর্ষ অবস্থায় বাসায় ফেরে সৈকত। প্রতিদিনের মতো দৌড়ে আসে প্রিয়া। বাবার কোলে উঠতে চায়। সৈকত ও প্রিয়াকে কোলে তুলে নেয়। কিন্তু প্রতিদিনের সেই উল্লাস নেই। আদর ¯েœহ নেই। ভালোবাসা নেই। কিছুটা দুরে দাঁড়িয়েছিল দিয়া। হঠাৎ সৈকতের বিমর্ষ চেহারা দেখে ভড়কে যায়। কী হলো? বিয়ের এত বছরে সৈকতকে কখনো ভেঙে পড়তে দেখেনি দিয়া।
প্রিয়া সৈকতের কোল থেকে নেমে কার্টুন দেখছে। সৈকত বেডরুমে ফেরে। পেছনে দিয়া। কারো মুখে কোনো কথা নেই। চেঞ্জ হওয়ার পোশাক এগিয়ে দেয় দিয়া। তারপর নিজ থেকেই নীরবতা ভাঙে। গুমোট পরিবেশ বেশিক্ষণ সহ্য করতে পারে না দিয়া।
অফিসে কোনে সমস্যা হয়েছে? দিয়া বলল।
না।
তাহলে?
তাহলে কী?
তোমাকে এতটা বিমর্ষ দেখাচ্ছে কেন?
এমনি।
দ্যাখো সৈকত আমার কাছে কিছু লুকানোর চেষ্টা করো না। আমি কিন্তু তোমার চেহারা পড়তে পারি।
ঠিক আছে। পড়তে পারলে পড়ে দেখো। আমার বেশ মাথা ধরেছে। একটা ডিসপ্রিন পানিতে গুলিয়ে দাও।
দিয়া গøাসের পানিতে ডিসপ্রিন গুলিয়ে নিয়ে এলো। সৈকত এক চুমুকেই শেষ করল।
এবার যাও। আমি ঘুমাব। বলল সৈকত।
তাহলে তুমি বলবে না।
আমার কিছু হয়নি তো। যাও।
দিয়া বেরিয়ে যায়।
রাত বারোটা পেরিয়ে যায়। সৈকতের ঘুম ভাঙে। দিয়া টেবিলে রাতের খাবার সাজিয়ে রেখেছে রাত এগারোটায়। এক ঘণ্টা পেরিয়ে গেল। সৈকতকে কয়েকবার জাগাতে চেয়েও জাগায়নি। ইতোমধ্যে প্রিয়া খেয়ে শুয়ে পড়েছে। প্রিয়াকে মশারি টাঙিয়ে দেয় দিয়া।
ফ্রেশ হয়ে এসে সোজা খাবার টেবিলে বসে সৈকত। দিয়া পাতে খাবার তুলে দেয়। সৈকত চুপচাট খেয়ে চলে বার দুয়েক বিষম খায়। পানির গ্লাস এগিয়ে দেয় দিয়া। সৈকত কোনো কথা বলে না। অন্যদিন হলে খাবার টেবিলে কথার ফুলঝুরি আর হাসির রোল পড়ত। কথায় কথায় বেশ মজা করতে পারে সৈকত। এমন হাস্যোজ্জ্বল মানুষটি হঠাৎ বোবা বনে যাওয়াতে পুরো পরিবেশটাই পাল্টে গেল। যেন রোস্তোরাঁয় দু’জন অপরিচিত মানুষ সামনাসামনি বসে খাবার খাচ্ছে।
খাবার শেষে ড্রইংরুমের সোফায় শরীরটা এলিয়ে দেয় সৈকত। খাবার শেষে টিভিতে বুদ্ধিজীবীদের টকশো দেখা নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছিল তার। কিন্তু আজ সে নিয়মে ছেদ পড়ল। টিভি অন করা হয়নি। মাথার নিচে হাত দিয়ে ঘূর্ণায়মান সিলিং ফ্যানের দিকে তাকিয়ে আছে সৈকত। ডাইনিং টেবিলের থালা-বাটি গুছিয়ে সৈকতের পাশে এসে বসে দিয়া। দুজন চুপচাপ।
এবার বলবে তোমার কী হয়েছে? হঠাৎ তুমি এমন হয়ে গেছ তোমাকে খুব অচেনা লাগছে। বলল দিয়া।
মনের সঙ্গে যুদ্ধ করে সৈকত। দিয়াকে হায়দার জামানের কথাটি বলবে কি বলবে না। বললে সত্য-মিথ্যা একটা কিছু বেরিয়ে আসবে। আর না বললে সৈকত নিজেই দগ্ধ হবে।
চুপ করে আছো কেন কথা বলো। বলল দিয়া।
আচ্ছা দিয়া তুমি হায়দার জামান নামে কাউকে চোনো? বলল সৈকত।
রীতিমতো চমকে ওঠে দিয়া। চোখ কপালে তুলে নামটি উচ্চারণ করে হায়দার জামান!
কী ব্যাপার তুমি চেনো?
হ্যাঁ।
চমকায় সৈকত। তাহলে হায়দার জামানের কথাই ঠিক। তোমাদের মধ্যে সম্পর্ক ছিল? বলল সৈকত। উঠে দাঁড়াল। তারপর পায়চারি করতে করতেই বলল চুপ করে আছো কেন?
বলো হ্যাঁ অথবা না।
তোমার সঙ্গে আমি কখনো মিথ্যা বলিনি। বলবও না। বলল দিয়া।
তাহলে আমার প্রশ্নের উত্তর দাও।
হ্যাঁ সম্পর্ক ছিল। দিয়া মাথা নিচু করে বলল।
ঠিক আছে। আমার আর কিছুই জানার নেই। যাও ঘুমোতে যাও। আর শোনো, এদিকে দরজাটা লাগিয়ে দাও।
মানে?
মানে খুব সহজ। আমি বাইরে যাচ্ছি।
কোথায় যাচ্ছো?
জানি না।
পাগলামো করো না সৈকত।
বিয়ের আগে অন্য কোনো ছেলের সঙ্গে তোমার সম্পর্ক ছিল। থাকতে পারে। এ বিষয়ে আমি খুব লিবারেল। কিন্তু…। থামে সৈকত।
কিন্তু কী? বলল দিয়া।
না। কিছুই না। দরজাটা লাগাও। আমি যাচ্ছি।
না। তুমি এবাবে যেতে পারো না। কথা যখন উঠেছে তখন তোমাকে পুরো সত্যটা জানাতে হবে। তুমিই তো বলতে বিয়ের আগে রুহিনা নামে এক মেয়ের সঙ্গে তোমার প্রেম ছিল। তোমার পরিবার মেনে নেয়নি। আরো কত কি। জামানের কথাও আমি তোমাকে বলেছিলাম। আমাদের বিয়ের পরপরই বলেছিলাম। তুমি হয়তো ভুলে গেছ। আর আজ এতদিন পর এটা কেন কাল হয়ে দাঁড়ায় আমি ঠিক বুঝতে পারছি না।
তুমি আমার একটা প্রশ্নের সত্যি জবাব দেবে? বলল সৈকত
তোমার কাছে কিছুই লুকাই না। বলো।
প্রিয়া কি আমারই সন্তান? নিঃশ্বাস বন্ধ করে প্রশ্নটি করল সৈকত।
থমকে যায় দিয়া। চুপ করে থাকে। হঠাৎ এমন অপ্রত্যাশিত প্রশ্নে কী জবাব দেবে বুঝতে পারে না। এটা নিশ্চয়ই জামানের চালবাজি। ও নিশ্চয়ই সৈকতকে কিছু একটা বলেছে।
কী ব্যাপার? চুপ করে আছো কেন? জবাব দাও। বলল সৈকত।
দিয়ার দু’চোখের কোণ থেকে পানি গড়িয়ে নামে। দু হাতে মুখ ঢেকে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে। সৈকত ঘাবড়ে যায়।
তাহলে কি জামানের কথাই ঠিক? প্রিয়া আমার সন্তান নয়।
দিয়ার কাঁধে হাত রাখে সৈকত। বলল, দিয়া ভেঙে পড়ার কিছুই নেই। আমরা যথেষ্ট ম্যাচিউরড হয়েছি। তুমি সত্যিটা বলো। মেনে নেওয়ার মতো সাহস আমার আছে। বলো। প্লিজ বলো। ডোন্ট মেক লেট।
সৈকতের পায়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে দিয়া। বুকে মাথা রেখে কাঁদতে থাকে। কাঁদতে কাঁদতেই বলে তোমার এ সন্দেহ হওয়ার আগে কেন আমার মরণ হলো না। প্রিয়া আমাদের একমাত্র কন্যা। তোমারই ঔরসজাত সন্তান। একটি সন্তানের পিতা কে, তা একমাত্র মা-ই বলতে পারবে। তুমি বিশ্বাস করো সৈকত, বিয়ের আগে কারো সঙ্গেই আমার অবৈধ সম্পর্ক ছিল না।
তাহলে জামান?
জামানের কৌশলে আমি প্রেমে পড়েছিলাম কিন্তু যখন বুঝতে পারলাম ও একটা চরিত্রহীন ছেলে তখন আমি সরে পড়ি।
প্রিয়া আমার সন্তান কি না এ প্রশ্ন আমাকে জামানই করে। বলল সৈকত।
আমাদের সংসার ভাঙার জন্য জামান এ পথ বেছে নিয়েছে।
তাতে ওর লাভ?
জামান আমাকে পেতে চেয়েছিল। পায়নি। তাই এ রকম একটা মিথ্যে অজুহাত দি.ে..। তারপরও তোমার যদি সন্দেহ হয় তাহলে তুমি প্রিয়া আর তোমার ডিএনএ টেস্ট করাতে পারো।
কিছুটা আশ্বস্ত হয় সৈকত। প্রিয়া আমার সন্তান বলেই দিয়া ডিএনএ টেস্টের কথা বলেছে। ভাবছে সৈকত। দিয়াকে জড়িয়ে ধরে বেডরুমে যায় সৈকত। মশারির ভেতরে ঘুমোচ্ছে প্রিয়া। সৈকত ভেতরে ঢোকে। প্রিয়ার পাশে শোয়। বাতি নিভিয়ে দেয়।