বিশ্বমানের জরুরি বিভাগ চালু

27

কক্সবাজার সদর হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসায় অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতিসহ জরুরী বিভাগকে বিশ্বমানে উন্নীত করা হয়েছে। গতকাল আনুষ্ঠানিক ভাবে যাত্রা শুরু করেছে বিশ্বমানের আধুনিক এ জরুরী বিভাগটি।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, হাসপাতালের জরুরী বিভাগকে সংস্কার করে আধুনিক ও আন্তর্জাতিকমানের রূপ দিতে আন্তর্জাতিক রেডক্রস কমিটি আইসিআরসি নতুনভাবে সংস্কার কাজে অর্থায়ন এবং তা বাস্তবায়ন করেছে। আইসিআরসি সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সাথে একসাথে কাজ করছে। হাসপাতালটি কক্সবাজার জেলার স্থানীয় জনগণ ও কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠির উন্নত চিকিৎসার কেন্দ্রস্থল। তাই আন্তর্জাতিক বিভিন্ন স্বীকৃত মানদÐ অনুযায়ী জরুরী স্বাস্থ্য সেবার মান বাড়ানোর লক্ষ্যে আইসিআরসি সদর হাসপাতালের জরুরী বিভাগের সংস্কার কাজ বাস্তবায়ন করেছে। কক্সবাজার জেলার সদর হাসপাতালের জরুরী বিভাগকে সহায়তা দিতে ২০১৮ সালের ১২ আগস্ট আইসিআরসি এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সাথে ৩ বছর মেয়াদী সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছিল।
গতকাল শনিবার দুপুরে নতুন এই জরুরী বিভাগ উদ্বোধন করেন কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল। এ সময় তার সাথে ছিলেন দাতা সংস্থা আন্তর্জাতিক রেডক্রসের
(আইসিআরসি) বাংলাদেশের ডেলিগেশন প্রধান জেরার্ড পেট্রিকনেট। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন হাসপাতালের তত্ত¡াবধায়ক ডা. মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, সহকারী পরিচালক ডা. রফিকুস সালেহীন, সহযোগী অধ্যাপক (সার্জারী) ডা. শাহা আলম, আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. শাহীন মোহাম্মদ আবদুর রহমান চৌধুরী, নবনিযুক্ত আরএমও (প্রশাসন) ডা. নোবেল কুমার বড়ুয়া, আবাসিক ফিজিসিয়ান মোহাম্মদ শাহজাহান, আবাসিক সার্জন (আরএস) ডা. টুটুল তালুকদার প্রমুখ। এছাড়া বিভিন্ন সাহায্য সংস্থার প্রতিনিধিরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের শুরুতে হাসপাতাল তত্ত¡াবধায়ক ডা. মোহাম্মদ মহিউদ্দিনের সভাপতিত্বে জেলা সদর হাসপাতালের বিএন পাল কনফারেন্স হলে সংক্ষিপ্ত সভা হয়। ওই সভায় প্রধান অতিথি ও হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি সাইমুম সরওয়ার কমল এমপি বলেন, চিকিৎসা সেবার মান বাড়াতে সব ধরণের প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। দাতা সংস্থা আন্তর্জাতিক রেডক্রসের (আইসিআরসি) বাংলাদেশের ডেলিগেশন প্রধান জেরার্ড পেট্রিকনেট বলেন, বাংলাদেশে স্বাধীনতার যুদ্ধ চলাকালীন সময় থেকে আইআরসি এখনও কাজ করে যাচ্ছে। আমরা দেখেছি দক্ষিণ এশিয়ার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা নিতে গিয়ে সহিংসতা করেন। আমরা চাই না বাংলাদেশে এমনটি হউক। তিনি বলেন, আমরা চাই এখানকার মানুষ যেন বিশ্বমানের স্বাস্থ্যসেবা পায়। এজন্য আইসিআরসি কক্সবাজারের স্থানীয় জনগোষ্ঠী ও রোহিঙ্গাদের চিকিৎসার মান উন্নত করতে কাজ করে যাচ্ছে।
অনুষ্ঠানে আইসিআরসি কক্সবাজার অফিসের প্রধান সাবরিনা ডিনংক বলেন, এটা শুধু আন্তর্জাতিক মানের বিষয় নয়, এটি জীবন বাঁচানোর জন্য। যদি রোগীদের সঠিক সময়ে চিকিৎসা দেওয়া যায় তাহলে তাদের বাঁচানোর হার অনেক বেশি বাড়ানো সম্ভব। এর জন্য জরুরি বিভাগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম সবার জানা উচিত। যেমন গুরুতর অসুস্থ রোগীদের সবার আগে চিকিৎসা দেওয়া এবং রোগীদের সাথে পরিবারের একজনের বেশি সদস্য না থাকা। তখনই জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত স্বাস্থ্যসেবা কর্মীরা রোগীদের ভালোভাবে সেবা দিতে পারবেন। জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. শাহীন মোহাম্মদ আবদুর রহমান চৌধুরীর সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন (বিএমএ) কক্সবাজার শাখার সাধারণ স¤পাদক ডা মাহবুবুর রহমান, রেডক্রিসেন্ট কর্মকর্তা ছৈয়দ আলী নাসির খালেকুজ্জামান, পৌরসভার প্যানেল মেয়র হেলাল উদ্দিন কবির প্রমুখ।
শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন সহকারী পরিচালক ডা. রফিকুস সালেহীন। তিনি বলেন, বিশ্বমানের এই জরুরী বিভাগে যুক্ত করা হয়েছে রোগ নির্ণয়ের অত্যাধুনিক সব যন্ত্রপাতি। এখানে আরো থাকছে পুরুষ ও মহিলাদের জন্য আলাদা কক্ষে ৪টি করে সিট। সার্বক্ষণিক চিকিৎসা সেবার দায়িত্বে থাকবেন ৮ জন চিকিৎসক ও ১২ জন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নার্স। নিয়োজিত থাকবেন ১০ জন নিরাপত্তাকর্মী।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জানানো হয়, রোগীদের রেড জোন, গ্রীন জোন ও ইয়েলো জোন এই তিন ভাগে বিভক্ত করে চিকিৎসা দেওয়া হবে। গুরুতর রোগীদের রাখা হবে রেড জোনে। প্রাথমিক চিকিৎসার প্রয়োজন এমন রোগীদের রাখা হবে গ্রীন জোনে। তার চেয়ে খারাপ রোগীদের রাখা হবে ইয়েলো জোনে অর্থাৎ অবজারভেশনে। সেখানে উন্নতি না হলে ওয়ার্ডে ভর্তি রাখা হবে। একই সাথে ১০ জনের অধিক রোগী আসলেও তাদের একই সিস্টেমে চিকিৎসা দেওয়া হবে। একজন রোগীর সাথে একজন নিকটতœীয়কে ঢুকতে দেওয়া হবে। তাকে বিনামূল্যে একটি পাসকার্ড বা টিকিট দেওয়া হবে।
বাংলাদেশে প্রথম এই বিশ্বমানের জরুরি বিভাগে সকালের শিফটে ২ জন, দুপুরের শিফটে ২ জন আর রাতের শিফটে ২ জন করে ডাক্তার চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত থাকবেন। দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসকদের আন্তর্জাতিক রেডক্রস কমিটি স¤প্রতি উন্নত প্রশিক্ষণ দিয়েছে।
এর আগে সদর হাসপাতালের জরুরী বিভাগে অপারেশন সিস্টেম না থাকলেও এবারের অত্যাধুনিক জরুরী বিভাগে ছোট-খাটো অস্ত্রোপচারও করা হবে। রোগীদের জরুরি অপারেশনের জন্য এখানে রয়েছে আধুনিক অপারেশন থিয়েটার ও প্লাস্টার রুম। চিকিৎসকদের জন্য আলাদা কক্ষ, পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য আলাদা কক্ষ রাখা হয়েছে। রোগীদের বিনোদনের জন্য টিভির ব্যবস্থাও রয়েছে। আন্তর্জাতিক রেডক্রসের (আইসিআরসি) তত্ত¡াবধানে এবং আর্থিক সহযোগিতায় আধুনিক এই জরুরী বিভাগ স্থাপন করা হয়েছে। এখানে সংস্কার কাজ, যন্ত্রপাতি ক্রয়, কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ, তাদের প্রশিক্ষণ থেকে শুরু করে সব মিলিয়ে ১৩ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে।