বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে আসছে সেশনজট

35

বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর রাজপথের আন্দোলনে শিথিলতায় নির্বিঘেœ শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়া দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বড় সংকটে পড়েছে করোনা মহামারীতে। মহামারীর প্রথম দুই মাস দেশের সব অফিস, আদালত, দোকানপাট, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও গণপরিবহন বন্ধ থাকার পর ধীরে ধীরে সবই খুলে গেছে। তবে এখনও বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে কোনো সুস্পষ্ট ঘোষণা আসেনি। দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভাইরাস সংকটের তিন মাস পর অনলাইনে ক্লাস শুরু করলেও তাতে সব শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়নি। এভাবে ক্লাস চললেও পরীক্ষার বিষয়েও এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
দেশে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের শুরুর দিকে মার্চে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে সেমিস্টার পরীক্ষা শুরু হয়ে এক বা দুটি পরীক্ষার পর সেগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক শিক্ষার্থী এরইমধ্যে পরীক্ষা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকানোর কথা থাকলেও তারাও পড়ে আছেন অনিশ্চয়তার মধ্যে।
মহামারী কতদিন প্রলম্বিত হবে, আবার কবে উচ্চ শিক্ষাঙ্গণগুলো স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রমে ফিরে আসবে সে বিষয়ে কিছু বলতে পারছেন না দায়িত্বশীলরাও। এই পরিস্থিতিতে ছয় মাস থেকে এক বছর পিছিয়ে পড়ার শঙ্কা করছেন শিক্ষার্থীরা। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পোষাতে নানা পরিকল্পনার ছক কষলেও প্রবীণ অধ্যাপকদের কেউ কেউ শিক্ষার্থীদের জীবন থেকে একটা বড় সময় চলে যাওয়া ছাড়া বিকল্প দেখছেন না।
গত শতকের আশি ও নব্বই দশকে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে অস্থিরতা, সংঘাত ও সহিংসতায় ঘন ঘন ক্যাম্পাস বন্ধের ফলে সেশনজট পিছু ছাড়েনি উচ্চ শিক্ষায়। নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানে সামরিক শাসক এরশাদের পতনের পর দেশের গণতান্ত্রিক যাত্রার বছরগুলোতে শিক্ষাঙ্গনে অস্থিরতা কমলেও মাঝে মাঝেই ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে বিরোধীদের সংঘাত-সংঘর্ষ ও আন্দোলনের জের ধরে বিভিন্ন ক্যাম্পাস বন্ধ থেকেছে। আবার জাতীয় রাজনীতিতে উত্তাপের ফলে দেশে হরতাল-অবরোধের ফলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস-পরীক্ষা বিঘিœত হয়েছে।
সর্বশেষ ২০১৩-১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচন ঘিরে বিএনপি-জামায়াতে ইসলামীর সহিংস আন্দোলন এবং ওই নির্বাচনের বর্ষপূর্তি ঘিরে ২০১৫ সালের শুরুতে টানা তিন মাস হরতাল-অবরোধে শিক্ষা কার্যক্রম বিঘ্নিত হয়।
এরপর এই পাঁচ বছর রাজনৈতিক উত্তাপহীনতার সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের কথা কারও মাথায় আসেনি। সেশনজটের কবল থেকেও বেরিয়ে আসে অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু করোনা ভাইরাস সংকটে দীর্ঘ ছুটির জের ধরে সেশনজটের সেই পুরানো তিক্ত অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে চলছেন বলে মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
সেই শঙ্কা প্রকাশ করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের স্নাতকের শিক্ষার্থী সাজিদুজ্জামান জানান, করোনা ভাইরাসের কারণে নয়টি কোর্সের মধ্যে মাত্র একটির পরীক্ষা দিয়েই বসে আছেন তারা। বাকি পরীক্ষাগুলো কবে হবে, তার ঠিক নেই।
তিনি বলেন, সাধারণত মার্চে আমাদের বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হয়। গত মার্চের ১৬ তারিখে একটি পরীক্ষা দেওয়ার পর মহামারী শুরু হয়ে গেলে বাকি কোর্সগুলোর পরীক্ষা আর দিতে পারিনি। শুধু আমাদের বিভাগই নয়, অনেক বিভাগই পরীক্ষা শেষ করতে পারেনি।
জাহাঙ্গীরনগরের এই শিক্ষার্থী বলেন, অন্যান্য ইউনিভার্সিটিতে জানুয়ারিতে শুরু হয়ে ডিসেম্বরে সেশন শেষ হয়। কিন্তু আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে মার্চে শুরু হওয়ার ফলে তিন মাসের একটা অদৃশ্য সেশনজট থাকেই। এখন করোনা ভাইরাসের কারণে সেটা কত সময় লাগে বলা যাচ্ছে না। একটা বছর তো অবশ্যই হারিয়ে গেল!
এ বছর ডিসেম্বরে স্নাতকোত্তরের দ্বিতীয় সেমিস্টার পরীক্ষা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকানোর কথা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী মুহসীন আহমেদের। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে এখনও জুন মাসের প্রথম সেমিস্টার পরীক্ষাও দিতে পারেননি তিনি।
মুহসীন বলেন, অনলাইনে ক্লাস নিয়ে সিলেবাস শেষ করা হচ্ছে। কিন্তু ক্লাসের সবাই তো আর এখানে জয়েন করতে পারছে না। তাদের বিষয়টা চিন্তা করলে ক্যাম্পাস খোলার সাথে সাথেই তো আর পরীক্ষা নিতে পারবে না। দুইটা সেমিস্টার চার মাস করে শেষ করলেও আট মাস সময় লেগে যাবে। বিশ্ববিদ্যালয় যদি বিকল্প উপায়ে পরীক্ষা না নেয় তাহলে সেজনজট ছাড়া উপায় নাই। সেক্ষত্রে আমাদের একটা বছর পিছিয়ে যাবে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী তাসনুবা তাহসিন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকার কারণে অলরেডি সেশনজটে পড়ে গেছি। নভেম্বর মাসে অনার্স ফাইনাল ইয়ার পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। ছয় মাস তো বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ছিল। কোর্সগুলো করা হয়নি। এখন অনলাইনে ক্লাস হচ্ছে, ক্লাসের গতিও ভালো। ক্যাম্পাস খুললে পরীক্ষা শুরু হবে। কিন্তু খোলার সাথে সাথেই পরীক্ষা নেওয়ার পক্ষে আমরা নই। পরীক্ষা না হলে আবার সেশনজটে পড়ে থাকব। সব কিছু মিলিয়ে একটা অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন যাচ্ছে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ফারজানা মুন্নী বলেন, করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আমাদের দুই সেমিস্টারের পরীক্ষা একসাথে নেবে বলছে। তাই অনলাইনে আমাদের সিলেবাস শেষ করা হচ্ছে। আমাদের পঞ্চম সেমিস্টারের ক্লাস শেষ হয়েছে। এখন আমরা ষষ্ঠ সেমিস্টারের ক্লাস করছি। কিন্তু সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা নিলেই তো হবে না। মিডটার্ম বা অ্যাসাইনমেন্ট এগুলোতেও তো সময় লাগবে। খবর বিডিনিউজের
করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে গত ২৩ মার্চ সরকার সারা দেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। এর আগেই দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। সেশনজট রোধে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চালালেও নানা সীমাবদ্ধতার কারণে প্রায় তিন মাস পর থেকে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনলাইনে ক্লাস শুরু করে। কিন্তু ক্যাম্পাস ও আবাসিক হল বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের অনেকে প্রত্যন্ত অঞ্চলে থেকে ইন্টারনেটের ধীরগতি, ইন্টারনেট ডেটা প্যাকের সমস্যা, ডিজিটাল ডিভাইসের অভাবসহ নানা কারণে অনলাইন ক্লাসে অংশ নিতে পারছেন না।
প্রায় ছয় মাস ধরে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বন্ধের ফলে উচ্চ শিক্ষায় যে ক্ষতি হয়েছে বা মহামারী প্রলম্বিত হলে কী করণীয়, তা নিয়ে ভাবছেন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা। তারা বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে সেশনজট অনিবার্য হয়ে পড়েছে। তবে বিভিন্ন উপায় ও কৌশল অবলম্বন করে ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার সুযোগও রয়েছে। এক্ষেত্রে সেমিস্টার বা বার্ষিক শিক্ষাপঞ্জির সময় ও সাপ্তাহিক ছুটি কমিয়ে এবং অতিরিক্ত ক্লাস নিয়ে ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া যেতে পারে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক এএসএম মাকসুদ কামাল বলেন, আশা করি শিক্ষার্থীরা বড় ধরনের সেশনজটে পড়বে না। যারা অনার্স ডিগ্রি বা মাস্টার্স ডিগ্রির টার্মিনালে আছে, তারা হয়ত কিছু দিনের জন্য সেশনজটে পড়তে পারে। তবে যারা ফার্স্ট ইয়ার বা সেকেন্ড ইয়ারে আছে তাদের সেশনজটে পড়ার কোনো শঙ্কা নেই।
ইয়ারলি সিস্টেমে যাদের পরীক্ষা হয়, আমরা হয়ত ১২ মাসের মধ্যে ৮-৯ মাস ক্লাস নিয়ে পরীক্ষা নিতে পারব, যাতে তাদের শিক্ষা জীবনে কোনো ছেদ না পড়ে। সেমিস্টার পদ্ধতিতে যাদের পরীক্ষা, ষষ্ঠ থেকে অষ্টম সেমিস্টার পর্যন্ত তাদের কিছুটা অসুবিধা হতে পারে। তবে তাদের এই সেশনজট নিরসনেও নানা পরামর্শ রয়েছে।
সব শিক্ষার্থী যাতে অনলাইন ক্লাসে যোগ দিতে পারে সেই ব্যবস্থা করতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে জানিয়ে অধ্যাপক মাকসুদ কামাল বলেন, যেসব শিক্ষার্থীর ডিভাইস নাই বা ডেটা প্যাক কিনতে সমস্যা, তাদেরকে আমরা আর্থিক সাপোর্ট দেওয়ার জন্য বিভিন্ন বিভাগে চাহিদাপত্র পাঠিয়েছি। শিগগিরই অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়নসহ শিক্ষার্থীদের অসুবিধা দূর হবে। প্যানডেমিক প্রলম্বিত হলে বিকল্প উপায়েও শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের চিন্তা আছে। তবে আগে শিক্ষার্থীদের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে অনলাইনে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম বলেন, সেশনজট কমানোর জন্য আমরা কিছু বিষয়ের কথা ভাবছি। তবে আমরা এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেইনি। সেশনজট এড়ানোর জন্য ক্যাম্পাস খুললে শীতকালীন ছুটির মতো বড় ছুটি বাতিল করা এবং সাপ্তাহিক বন্ধ দুই দিন থেকে এক দিনে নামিয়ে আনার মতো বিষয়েও আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের অনলাইন ক্লাস যেভাবে চলছে সেভাবেই চলবে। যেসব শিক্ষার্থীর কেবল ভাইভা, রিপোর্ট জমা দেওয়া বাকি ছিল তাদের অনলাইনেই রিপোর্ট জমা ও ভাইভা নেওয়া হবে। এছাড়া সকল এমফিল, পিএইচডি ও মাস্টার্সের ভাইভাও অনলাইনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। পাশাপাশি অনলাইনে নিয়মিত পরীক্ষা নেওয়ার যথাযথ সুযোগ আছে কি না তা যাচাই করে দেখতে উপ-উপাচার্যকে (শিক্ষা) প্রধান করে ডিন ও বিভাগীয় প্রধানদের সমন্বয়ে একটি কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। তারা ১৫ দিনের মধ্যে মতামত জানালে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এস এম মনিরুল হাসান বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আমরা সেশনজট নিরসনে ক্রাশ প্রোগ্রাম গ্রহণ করব। তখন সেশনজট দ্রæতই কমে যাবে। তবে ছুটি যদি আরও ছয় মাস দীর্ঘায়িত হয়, সেটা চিন্তার বিষয়। তখন সেশনজটের আশঙ্কা থাকবে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী ওহিদুজ্জামান বলেন, কতদিন এভাবে থাকতে হবে তা অনেক কিছুর উপর নির্ভর করে। তাই আমাদের মন্তব্য করা কঠিন। এ পরিস্থিতি শেষ হওয়ার পরে কতটুকু ক্ষতি হয়েছে, কীভাবে পোষানো যাবে- সেটা সবার সাথে বসেই ঠিক করতে হবে।
করোনা ভাইরাসের এই সময়টা জীবন থেকে হারিয়ে গেছে বলে মেনে নিয়ে সেভাবে পরিস্থিতি মোকাবেলার পরামর্শ দিয়েছেন প্রবীণ অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।
তিনি বলেন, ১৯৭১ সালেও আমরা এ রকম পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছিলাম। তখন স্কুল-কলেজে অটো প্রমোশন দিলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে কিন্তু সেটা সম্ভব হয়নি। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের আগে পরে যেসব পরীক্ষা হয়েছিল, ১৯৭২ সালে সেগুলোর ফল বাতিল করে আবার নতুন করে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল। স্বাধীনতার পর প্রিলিতে (স্নাতকোত্তরে) অটোপ্রমোশন দিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করেছিল। কিন্তু সেটা দেওয়া হয়নি, পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল।
কোভিড-১৯ মহামারী পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে কীভাবে সেশনজট নিরসন করা যায়, সে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার মনে হয় এ বছরটা বাদই দিতে হবে। এছাড়া আমি কোনো উপায় দেখছি না। এটা মেনে নিতে হবে। এটা শুধু আমাদেরই ক্ষতি হয়েছে, এমনটা তো না। বিশ্বজুড়ে এ মহামারী, সব দেশেই ক্ষতি হচ্ছে। এত বড় একটা দুর্যোগ ক্ষতি ছাড়া কাটিয়ে ওঠা সম্ভব নয়। আমাদের মনে করতে হবে, এই সময়টা আমাদের থেকে হারিয়ে গেছে। অনেকে বলছে, অনলাইনে ক্লাসে সিলেবাস শেষ করে রাখলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে অল্প সময়ে পরীক্ষা নেওয়া যাবে। কিন্তু অনলাইনে লেখাপড়া তো কার্যকরী হচ্ছে না। সকল শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এ অবস্থায় পরীক্ষা নিলে একটা বৈষম্য সৃষ্টি হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ইমিরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী আরো বলেন, অনলাইনে পাঠদান যতটুকু সম্ভব চলুক, তবে এটা মূল্যায়ন করা ঠিক হবে না। আমরা দুটি কাজ করতে পারি। একটি হল- আমাদের মনে করতে হবে, এই সময়টা আমাদের থেকে হারিয়ে গেছে। আরেকটি হল- আমাদের জানা দরকার বিশ্বের অন্যান্য দেশ কীভাবে এটা মোকাবেলা করছে। তারা কীভাবে রিকভার করছে, তা জেনে আমাদের সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।
বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় ক্ষতিটা হয়েছিল যুদ্ধের কারণে, এর চেয়ে বেশি সেশনজট আমরা দেখেছি এরশাদের শাসনামলে। এখন আমরা অল্পেতেই হাহাকার করি, ভুলে যাই যে, এক সময়ে আমাদের দুই-তিন বছরব্যাপী টানা সেশনজটের দিন গুনতে হয়েছিল।
অক্টোবর নাগাদ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুলতে পারলে সেশনজট নিরসন করা সম্ভব বলে মনে করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজির এই অধ্যাপক। তিনি বলেন, অক্টোবর নাগাদ বিশ্ববিদ্যালয় খোলার মতো একটা স্বাভাবিক পরিবেশ সৃষ্টি হতে পারে। অনলাইন ক্লাস নিয়মিতভাবে নেওয়া হচ্ছে, শিক্ষার্থীদের সিলেবাস প্রায় শেষ। এখন শুধু পরীক্ষা নেওয়া বাকি। বিশ্ববিদ্যালয় খোলার সাথে সাথে যথাযথ নিয়ম এবং সামাজিক দূরত্ব মেনে পরীক্ষাগুলো নিয়ে নিলেই সমস্যার সমাধান সম্ভব।
যাদের এখনও সিলেবাস শেষ হয়নি, তাদের জন্য এক মাস ক্লাস নিয়ে দ্রæত সিলেবাস শেষ করে পরীক্ষা নেওয়া যায়। অক্টোবরের ১০ তারিখের মধ্যে যদি বিশ্ববিদ্যালয় খোলে তাহলে নভেম্বরের ১৫ তারিখের মধ্যে পরীক্ষাগুলো নিয়ে নেওয়াই ভালো।
সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, আমাদের ক্ষতিটা পুরো এক বছরের নয়, প্রায় ছয় মাসের। যেটার কারণে একটা সেমিস্টার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একটা সেমিস্টার চার মাস করে নিলে বছরে তিনটা সেমিস্টার শেষ করা সম্ভব।
কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তির সদ্ব্যবহার করে সমস্যার উত্তরণ সম্ভব বলে মনে করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এ কে আজাদ চোধুরী।
তিনি বলেন, সমস্যা থেকে উত্তরণের পথ আছে। আমাদের দেশে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিগুলো অনলাইনে একাডেমিক সকল কাজ করছে। পাবলিক ইউনিভার্সিটির স্টুডেন্টেদের সীমাবদ্ধতা আছে, এটা ঠিক। কিন্তু সেই সংখ্যাটা বেশি না। সরকার বা বিশ্ববিদ্যালয় চাইলে এসব শিক্ষার্থীদের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে অনলাইনে নিয়ে আসতে পারে। অনলাইন সিস্টেমে পরীক্ষাও নিতে পারে।