বিশ্বজয়ীদের ফুলে-ফুলে বরণ করল দেশবাসী

94

দেশের ইতিহাসের প্রথম কোনো বিশ্বকাপ জয়ের ট্রফি নিয়ে সাউথ আফ্রিকা থেকে বুধবার বিকেলে দেশে ফেরেন আকবর ও সতীর্থরা। তারপর থেকেই প্রশংসার বন্যায় ভাসছে টাইগার যুবারা। বিমানবন্দরে ফুলেল স্বাগতম, হোম অব ক্রিকেটে লাল গালিচা সংবর্ধনা আর সন্ধ্যাভর বিসিবির নানা আয়োজন শেষে ঢাকায় রাত কাটিয়ে গতকাল ঘরের ছেলে ঘরে ফিরেন।
বিজয়মুকুট পরে ঘরে ফিরেছেন আকবর আলী: বিশ্বকাপের বিজয়মুকুট পরে ঘরে ফিরেছেন আকবর আলী। তাকে স্বাগতম জানাতে বুধবার যেমন আয়োজনের কমতি রাখেনি বিসিবি-ঢাকাবাসী, বৃহস্পতিবার টাইগার যুব অধিনায়ককে বরণ করে নিতে ঘাটতি ছিল না রংপুরবাসীরও। আকবর বরণে সকাল থেকেই সৈয়দপুর বিমানবন্দরে ছিল ভক্ত-ক্রিকেট অনুরাগীদের উপচে পড়া ভিড়। একসময় অপেক্ষার প্রহর শেষে আগমন তাকে বহনকারী বিমানের।
সৈয়দপুর থেকে দিনাজপুর-রংপুর মহাসড়কের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে ক্রিকেট অনুরাগীদের ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত হতে হতে রংপুরে পা রাখেন আকবর। জন্মশহরে পৌঁছে পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে জেলা প্রশাসন ও জেলা ক্রীড়াসংস্থার আয়োজনে গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট দলের দলপতি। এলাকার কৃতি সন্তানের এমন সাফল্যে বাঁধভাঙা আনন্দে ভাসছে রংপুরবাসী, স্থানীয় প্রশাসনসহ বিভিন্ন সংগঠন।
দীপুর গলায় মালা, হলো মিষ্টিমুখ: বন্দর নগরীর শুলকবহর এলাকার বাসায় ফেরার সময় শাহাদাত হোসেন দীপু সিক্ত হয়েছেন এলাকার মানুষের ভালোবাসায়। কেউ গলায় পরিয়ে দিয়েছেন ফুলের মালা, কেউবা খাইয়ে দিয়েছেন মিষ্টি। গতকাল দুপুরে বাসায় ফেরার সময় এলাকায় এ দৃশ্যের অবতারণা হয়। পটিয়ার হাবিলাসদ্বীপ ইউনিয়নের চরকানাই গ্রামে বাড়ি হলেও বাবা চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চাকরির সুবাদে তাদের পুরো পরিবার ১৯৮৩ সাল থেকে আছেন নগরের শুলকবহর এলাকায়। সেখানে উপস্থিত গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে প্রতিক্রিয়ায় দীপু বলেন, আমাদের সবার লক্ষ্য ছিল চ্যাম্পিয়ন হবো। গত দুই বছর ধরে ভালো খেলছিলাম। আমরা ইংল্যান্ড গেলাম, নিউজিল্যান্ডে গেলাম। এশিয়া কাপে ফাইনাল খেলেছি। সেই ফাইনালে ৫ রানে হেরে যাওয়ার পর পরের ম্যাচে জয়টাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেই।
দীপু বলেন, দক্ষিণ আফ্রিকার পচেফস্ট্রুমে ফাইনালে জয়ের পর বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা স্বাভাবিকভাবেই উচ্ছ¡সিত ছিল। আমাদের কোচিং স্টাফ যথেষ্ট সাপোর্ট দিয়েছেন। এরকম কোচিং স্টাফ পাওয়া খুবই ভাগ্যের ব্যাপার। আমরা খুব ভালো একটা টিম হিসেবে খেলেছি। ‘আজকের এ অবস্থানে আসার পেছনে মা ফেরদৌস বেগম, বড় ভাই আবুল হোসেন বাবু আর দুলাভাই ছিলেন পাশে। পাড়ার ভাই সুদীপ্ত আমাকে ইস্পাহানী ক্লাবে ভর্তি করিয়ে দেন। সবসময় তিনি সাহস ও সমর্থন দিয়ে গেছেন। আমিও সাকিব ভাই, তামিম ভাইদের মতো লিজেন্ড হতে চাই, বিশ্বের ১ নম্বর অলরাউন্ডার হতে চাই, চাই দেশের ১০জন ব্যাটসম্যানের ১জন হতে’।
মাশরাফির মায়ের কোলে ছুটে গেলেন অভিষেক: নড়াইলের কৃতি সন্তান অভিষেক দাস অরণ্য নিজ জন্মভূমি পৌঁছেই প্রথমে ছুটে যান ক্রিকেট নায়ক নড়াইল এক্সপ্রেস খ্যাত মাশরাফি বিন মর্তুজার বাড়িতে। তখন মাশরাফির মা হামিদা মর্তুজা বলাকা অভিষেককে দৌড়ে এসে বুকে জড়িয়ে নেন। পরে নিজ হাতে তাকে মিষ্টি খাইয়ে দেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে যশোর বিমান বন্দরে পৌঁছান বিশ্বকাপ জয় করা ক্রিকেটর অভিষেক দাস অরণ্য। পরে সেখান থেকে নাগরিক সমাজের ব্যানারে মটরসাইকেল, জিপ গাড়ি, প্রাইভেটকারের বহনে নড়াইলে আনা হয় তাকে।
তামিম-হৃদয়কে বগুড়ায় সংবর্ধনা: তানজিদ হাসান তামিম ও তৌহিদ হৃদয়কে বগুড়ায় সংবর্ধনা দেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে তারা শহরের বনানী এলাকায় এসে পৌঁছালে ফুল দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়। এরপর সামনে জাতীয় পতাকা উড়িয়ে পুলিশি নিরাপত্তার মধ্যদিয়ে তাদের নিয়ে আসা হয় বগুড়া শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথায়। সেখানে উপস্থিত ক্রিকেট ভক্তরা বগুড়ার এই দুই কৃতি সস্তানকে পেয়ে আনন্দিত হয়ে উঠে। এ সময় জেলা ক্রীড়া সংস্থার সদস্যরা তাদেরসহ উপস্থিত সবাইকে মিষ্টিমুখ করান।
খেলোয়াড়দের মধ্যে তামিম বগুড়া জেলা স্কুলের ছাত্র ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি সোনাতলা উপজেলার দিগদাইড় ইউনিয়নের ফাজিলপুর গ্রামে। আর হৃদয়ের গ্রামের বাড়ি গাবতলী উপজেলার দক্ষিনপাড়া ইউনিয়নের নাংলু গ্রামে।
জয় ও শামীমকে চাঁদপুরে সংবর্ধনা: চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার দুই কৃতি সন্তান শামীম হোসেন পাটওয়ারী ও মাহমুদুল হাসান জয়কে সংবর্ধনা দিয়েছে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসন। গতকাল দুপুর ১২টায় চাঁদপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে এই সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়। দুই খেলোয়াড়কে ফুল দিয়ে বরণ করেন চাঁদপুরের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মাহমুদ জামান।
পরে শামীম ও জয় উপস্থিত ক্রীড়ামোদীদের উদ্দেশ্যে নিজেদের অনুভূতি প্রকাশ করেন। এর আগে শামীম ও জয় ঢাকা থেকে লঞ্চযোগে চাঁদপুরে আসলে সর্বস্তরের জনসাধারণ তাদেরকে লঞ্চঘাটে ফুল দিয়ে বরণ করেন।