বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে বিচার দাবি

53

বঙ্গবন্ধুর একনিষ্ঠ কর্মী মৌলভী সৈয়দ হত্যাকান্ডের বিচারের বিষয়ে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর যে সকল হত্যাকান্ড হয়েছে তা প্যাকেজ হত্যাকান্ড। এইসব হত্যাকান্ডের মধ্য দিয়ে তারা আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল। এ সকল হত্যাকান্ডে জড়িতদের বিচারে আলাদা তদন্ত কমিশন গঠন করা প্রয়োজন। তা না হলে বিচার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হবে।
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা এম রেজাউল করিম চৌধুরী বলেছেন, ১৯৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার প্রতিবাদে ছাত্র-যুবকদের সংগঠিত করে সশস্ত্র পথে এর প্রতিশোধ নিতে উদ্যোগী ভ‚মিকা নিয়েছিলেন মৌলভী সৈয়দ। বঙ্গবন্ধুর রক্তের সাথে বেঈমানি করে সামরিক শাসকের সাথে হাত মিলালে তিনি এমপি, মন্ত্রী ও প্রচুর ধনসম্পদের মালিক হতে পারতেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রতি তিনি ছিলেন অবিচল। ভোগের জন্য যে রাজনীতি, সে রাজনীতি তিনি পরিহার করে ত্যাগের মহিমায় গড়ে তোলা জীবনকে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিরোধ সংগ্রামে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে উৎসর্গ করেছিলেন।
তিনি আরো বলেন, ১৯৭৭ সালের ১১ আগস্ট জোর করে ক্ষমতা দখলকারী সামরিক শাসকের পেটুয়া বাহিনী তাকে গ্রেপ্তার করে ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে যায়। ক্যান্টনমেন্টে তাঁকে অমানবিক ও নিষ্ঠুর নির্যাতন করা হয়। বীভৎস ও পাশবিক নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে ৭১ এর মহান মুক্তিযোদ্ধা মৌলভী সৈয়দ স্বদেশের মাটিতে অযত্নে, অবহেলায় মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। এই মহান বিপ্লবীর মৃত্যুর খবর শোনার পর নির্ঘুম অবস্থায় সারারাত চোখের জল ঝরেছে আমার। দেশ, মাটি, মানুষ আর নীতি ও আদর্শের জন্য এই ত্যাগ ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক কর্মীদের চলার পথের পাথেয় হউক। মৌলভী সৈয়দের আত্মত্যাগ ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চট্টগ্রাম মহানগর কমান্ডার মোজাফফর আহামদ বলেন, আমরা প্রত্যেক বছর মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের উদ্যোগে মুক্তিযোদ্ধা মৌলভী সৈয়দের মৃত্যুবার্ষিকী পালন করি। প্রতিবার মৃত্যুবার্ষিকী অনুষ্ঠানে এই গেরিলা সংগঠককে হত্যাকারীদের বিচারের জোর দাবি জানিয়ে আসছি। এবারেও একই দাবি জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর খুনিদের যেভাবে বিচার করা হয়েছে, ঠিক সেভাবে মৌলভী সৈয়দ আহমদের হত্যাকারীদের বিচার করতে হবে। এ জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের মাধ্যমে তদন্ত করে হত্যাকারীদের বিচারের জোর দাবি জানান এ মুক্তিযোদ্ধা।
দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড এবং মৌলভী সৈয়দ হত্যাকান্ড একই সূত্রে গাথা। তিনিই বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রথম প্রতিবাদকারী। যেমনিভাবে বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার হয়েছে, ঠিক তেমনিভাবে মৌলভী সৈয়দ হত্যাকান্ডের বিচার করতে হবে। তা না হলে এই মহান নেতার আত্মা শান্তি পাবে না বলেও জানান তিনি।
মুক্তিযুদ্ধকালীন বেইজ কমান্ডার ও মৌলভী সৈয়দ আহমদের ঘনিষ্ঠ সহচর মুক্তিযোদ্ধা আবু সাঈদ সরদার বলেন, আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রাম গেরিলা বাহিনীর প্রধান মৌলভী সৈয়দ আহমদের সাহসী নেতৃত্বে আমরা মুক্তিযুদ্ধে জয়ী হলেও এই মুক্তিযোদ্ধা ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যার সাথে সাথে সদলবলে প্রতিবাদ ও বিদ্রোহ করে তৎকালীন সামরিক জিয়া সরকারের রোষানলে পরেন এবং ঐ সরকার তাঁকে নির্মমভাবে ১১ আগস্ট হত্যা করে। বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রথম প্রতিবাদকারী শহীদ মুক্তিযোদ্ধা মৌলভী সৈয়দ আহমদ এর হত্যার বিচার আজও হয়নি। আমরা মুক্তিযোদ্ধারা বর্তমান সরকারের কাছে এ হত্যাকান্ডের বিচারের জোর দাবি জানাই।
মুক্তিযুদ্ধ গবেষক জামাল উদ্দিন বলেন, চট্টগ্রামের রাজনৈতিক ইতিহাসে মৌলভী সৈয়দ এক আলোকিত মানুষ। তার মনের গভীরে ছিল একটি স্লোগান। যারা অবহেলিত, যারা বঞ্চিত, লাঞ্চিত, ঘৃণিত, অর্থহারা, সর্বহারা তিনি তাদের পক্ষেই ছিলেন। তিনি চট্টগ্রামের রাজনীতির হার্টথ্রব। স্বাধীনতার সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনে সামনের সারির দুর্ধর্ষ এক লড়াকু সৈনিক ছিলেন তিনি। দেশ মাতৃকার মুক্তির জন্য তিনি ঝাপিয়ে পড়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধে। তাঁর এই অবদান, বিশেষ করে চট্টগ্রামবাসী ভুলবার নয়। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে তিনি বেঁচে থাকবেন হাজার বছর।
তিনি বলেন, জাতির পিতাকে হত্যার প্রতিবাদ করতে গিয়ে চট্টগ্রামের মাটি থেকে তিনিই প্রথম আওয়াজ তুলেছেন। এমনই এ চট্টলবীরকে নির্মমভাবে খুন করেছে স্বৈরশাসক ও তার সহযোগীরা। আমরা তাদের বিচারের জোর দাবি জানাচ্ছি।