বিলীন লামার মেরাখোলা গ্রামের দেড় শতাধিক ঘরবাড়ি

85

মাতামুহুরী নদীর অব্যাহত ভাঙ্গনে বান্দরবানের লামা উপজেলার সদর ইউনিয়নের মেরাখোলা গ্রামের দেড় শতাধিক বসতঘর ও ১০ একরেরও বেশি ফসলি জমি বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানেও ভাঙ্গনের মুখে রয়েছে আরো কয়েশ ঘর-বাড়ি, শত একর ফসলি জমি, একমাত্র কবরস্থানসহ কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নব নির্মিত ব্রিজটির পশ্চিম পাশসহ মেউলারচর এলাকা। প্রতি বছরেই মাতামুহুরী গিলে খাচ্ছে একের পর এক বসতবাড়ি, রাস্তাঘাট ও ফসলি জমি।
ফলে উপজেলার মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে ইউনিয়নটি। ভাঙ্গন অব্যাহত থাকায় আতংকিত হয়ে পড়েছেন এসব এলাকার হাজার হাজার মানুষ। ভাঙ্গন নিয়ে স্থানীয় সাংবাদিকরা প্রায় সময় পত্রিকায় লেখালেখি করলেও এখনো পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট দপ্তরের টনক নড়েনি। কবে ভাঙ্গন রোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় প্রশাসনের নিকট এমনটাই প্রশ্ন ইউনিয়নবাসীর। এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে পুরো ইউনিয়ন সদর এক সময় নদী গর্ভে চলে যাবে বলেও স্থানীয়দের আশঙ্কা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, লামা উপজেলা সদরের সন্নিকটে, উত্তর পূর্ব পাশেই লামা সদর ইউনিয়নের অবস্থান। ইউনিয়নটির দক্ষিণ, পশ্চিম ও উত্তর পাশ দিয়েই বয়ে গেছে মাতামুহুরী নদী। বর্ষা মৌসুমে উজান থেকে নেমে আসা পানিতে ভরে যায় এ নদী। পরে এ পানি কমতে শুরু করলে দু’ পাড়ে ভাঙ্গন দেখা দেয়। সর্বপ্রথম ১৯৯৭ সাল থেকে এ ইউনিয়নের দক্ষিণ পাশের পুরাতন মেরাখোলা গ্রামে ভাঙন শুরু হয়। গত ১০-১৫ বছর ধরে এ ভাঙ্গন তীব্র আকার ধারণ করে। ভাঙনে এ পর্যন্ত দেড় শতাধিক ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট ও ১০একরের বেশি ফসলি জমি মাতামুহুরী নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এদিকে মেউলারচর এলাকায়ও ১৫ একরের বেশি ফসলি জমি ইতিমধ্যে নদীতে বিলীন হয়েছে। এ গ্রামেরও বেশ কয়েকটি ঘরবাড়ি ভাঙ্গনের মুখে রয়েছে। প্রতি বর্ষা মৌসুমেই নদী ভাঙ্গনের শিকার হয় ইউনিয়নবাসী। ভাঙ্গন পরিবারগুলোর কিছু কিছু বাস্তুভিটে হারা হয়ে নিজেরা অন্য স্থানে জমি কিনে কিংবা অন্যের জমিতে আশ্রয় নিয়েছেন। দীর্ঘ মেয়াদী নদী ভাঙ্গনের ফলে তারা তিলে তিলে নিঃস্ব হয়ে গেছেন। দীর্ঘদিন যাবৎ নদী ভাঙনের শিকার হলেও সংশ্লিষ্ট পানি উন্নয়ন বোর্ড কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন এলাকাবাসী।
নদী ভাঙ্গনে মেরাখোলা গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত আবদুর রশিদ জানান, গত দু দিন আগে তার বসত ঘরটি নদীতে বিলীন হয়ে যায়। এ সময় পরিবার পরিজন নিয়ে কোনো রকম জানে রক্ষা পান। তার কৃষি জমি বাঁশের ঝাড়সহ মূল্যবান স্থাপনা নদীতে চলে গেছে। তার ২৫০ শতক জায়গার জুড়ে বাড়ি ছিল, এখন সেটি ৫ শতকে এসে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে তামাক প্রক্রিয়াজাত করার জন্য নির্মিত চুল্লীতেই নিরুপায় হয়ে আশ্রয় নিতে হয়েছে। ভাঙ্গন কবলিত জমির হোসেন ও সোলায়মান বলেন, নদীর ভাঙনে গত কয়েক বছরে কৃষি জমি গাছপালা গোয়ালঘরসহ সব হারিয়েছি। এখন বসত বাড়ির সামনে নদী চলে এসেছে। এই বর্ষায় বাড়িটি কোনো রকমে রক্ষা পেলেও আগামী মৌসুমে একমাত্র সম্বল ঘরটি নদী গর্ভে চলে যাবে। শেষ সম্বল ঘরটি চলে গেলে আমার পরিবারের কোথাও যাওয়ার জায়গা থাকবেনা।
মাতামুহুরী নদীর ভাঙ্গনে বাড়িঘর, ফসলি জমি বিলীনের সত্যতা স্বীকার করে লামা সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মিন্টু কুমার সেন বলেন, প্রতি বছর নদী ভাঙনের ফলে ইউনিয়নটি ছোট হয়ে আসছে। গত ২২ বছরে মেরাখোলা গ্রামের প্রায় ১০ একর ফসলি জমিসহ দেড় শতাধিক পরিবারের বসতভিটা ও মেউলার চর এলাকার ১৫ একরের মত ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এখনি কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে পুরো ইউনিয়ন সদর এক সময় নদী গর্ভে চলে যাবে। তিনি আরো বলেন, ভাঙ্গন রোধে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং মহোদয়ের মাধ্যমে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করা হবে।