বিপিনচন্দ্র পাল ( ১৮৫৮ – ১৯৩২ )

37

জন্ম, পৈলগ্রাম, সিলেট। রাজনীতিবিদ ও বাগ্মী। শৈশবে সিলেট শহরে একজন মৌলভীর কাছে লেখাপড়া শিক্ষা। ১৮৭৪- এ হিন্দু বিদ্যালয় থেকে প্রবেশিকা পাস। কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে কিছু কাল অধ্যয়ন। ছাত্রাবস্থায় ব্রাহ্মধর্মের প্রতি আকৃষ্ট। ১৮৭৭-এ পন্ডিত শিবনাথ শাস্ত্রীর প্রভাবে ব্রাক্ষধর্মে দীক্ষাগ্রহণ। ধর্মান্তরিত হওয়ার দরুন পিতা-কর্তৃক ত্যাজ্যপুত্র ঘোষণা। ১৮৭৯-তে কটকের একটি স্কুলে প্রধান শিক্ষকরূপে কিছুকাল কাজ করার পর সিলেট, কলকাতা, বাঙ্গালোর প্রভৃতি স্থানে শিক্ষকতা। এরপর কলকাতায় এসে রাজনৈতিক আন্দোলনে অংশগ্রহণ। সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্র্যোপাধ্যায় রাজনীতির দীক্ষাগুরু। ১৮৮৫ থেকে কংগ্রেসের প্রগতিশীল শাখার সঙ্গে যুক্ত। ১৮৮৭-তে মাদ্রাজে অনুষ্ঠিত জাতীয় মহাসমিতির তৃতীয় অধিবেশনে প্রতিনিধিত্ব। ১৮৯৮-তে তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব পড়তে বিলেত গমন এবং এক বছর অক্সফোর্ডে কাটান। এ সময় ইংল্যান্ড, ফ্যান্স ও আমেরিকায় বক্তৃতা দিয়ে সুবক্তা হিসেবে খ্যাতি অর্জন। দেশে ফিরে ১৯০১ এর ১২ আগস্ট ‘নিউ ইন্ডিয়া’ নামে একটি সাপ্তাহিক ইংরেজি পত্রিকা প্রকাশ। ১৯০২-এ আসামের চা বাগানের কুলিদের ওপর অত্যাচারের প্রতিবাদে প্রবন্ধ রচনা ও সেখানকার অত্যাচারী সাহেবদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করলে আসাম থেকে বহিষ্কৃত। ১৯০৬-এর ৬ আগস্ট তাঁর সম্পাদনায় ইংরেজি ‘দৈনিক বন্দে মাতরম্’ পত্রিকা প্রকাশিত। অরবিন্দের মামলায় সাক্ষ্যদান করতে অস্বীকার করায় ছয়মাস কারাদন্ড ভোগ। ১৯০৭-এ মাদ্রাজের সমুদ্র উপকূলে স্বরাজের দাবি উত্থাপন করে যে বক্তৃতা দেন তা দেশবাসীর মনে গভীর প্রভাব বিস্তার করে। ১৯০৮-এ দ্বিতীয়বার বিলেত গমন। ইংল্যান্ডে ‘স্বরাজ’ নামে সাপ্তাহিক পত্রিকায় ‘বাঙলাদেশে বোমার নিদান’ শীর্ষক প্রবন্ধ লেখার জন্য কারাদন্ড ভোগ। প্রথম মহাযুদ্ধের (১৯১৪-১৯১৮) সময়ে চরমপন্থি সংগ্রামের পথ বর্জন করে অ্যানি বেশান্তের ‘হোমরুল আন্দোলনকে সমর্থন দান। গান্ধীজীর অসহযোগ আন্দোলনে (১৯২০-১৯২২) বিরোধিতা। রচিত গ্রন্থ : শোভনা, ভারত সীমান্তে রুশ, মহারানী ভিক্টোরিয়ার জীবনী, জেলের খাতা, Indian Nationality and Empire, Swaraj and the Present Situation. `The Basic of Social Reform, The Soul of India, The New Spirit, Studies of Hinduism ইত্যাদি। তাঁর সম্পাদনায় প্রকাশিত অন্যান্য পত্রিকা : পরিদর্শক, দি হিন্দু রিভিউ, দি ডেমোক্র্যাট, দি ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইত্যাদি। স্বদেশী আন্দোলনের (১৯০৫- ১৯১১) অন্যতম নেতা বিপিনচন্দ্র পালের অগ্নিস্রাবী লেখা ও অনলবর্ষী বক্তৃতা বিশ শতকের প্রথম দশকে দেশবাসীকে জাতীয়তাবাদী ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ করে এবং জাতীয় মুক্তি আন্দোলনের পথ সুগম করে তোলে। মৃত্যু ২০.৫.১৯৩১।
তথ্যসূত্র : বাংলা একাডেমী, চরিতাভিধান