বিপর্যয় রোধে চাই টেকসই উদ্যোগ

52

জলবায়ু পরিবর্তন ঘটে চলছে- আরো দুই যুগ আগে থেকে আমাদের কাছে এ খবর দেয়া হচ্ছে। এর নেতিবাচক প্রভাবও যে আমাদের দারুণভাবে ক্ষতি করবে তা নিয়েও আলোচনা হচ্ছে বিশ্বব্যাপী। কিন্তু এত তাড়াতাড়ি ঘটনাগুলো ঘটবে হয়ত বুঝে উঠে কষ্টসাধ্য। সম্প্রতি প্রকৃতির বদলে যাওয়া রূপ এর আগে এত প্রকটভাবে লক্ষ্য করা যায়নি। উন্নয়নশীল বাংলাদেশের প্রাকৃতিক বিপর্যয় এবং পরিবেশগত সমস্যা পৃথিবীর উন্নত দেশের চেয়ে প্রকট আকার ধারণ করেছে। যদিও প্রাকৃতিক পরিবেশের এহেন অবস্থার জন্য উন্নত দেশগুলোই বেশি দায়ী। শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষার ঋতুবৈচিত্র্য আজকাল কোনো নিয়ম মেনে চলে না। আর এ ধরনের অনিয়ম মানুষের জীবনযাত্রাসহ দেশের অর্থনীতিতেও বিরূপ প্রভাব ফেলছে, যা আগে দেখা যায়নি।
একটু লক্ষ্য করলেই দেখা যায়, ২০১৬ সালের তুলনায় পরের বছর বাংলাদেশের ওপর দিয়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বয়ে গেছে বেশি অর্থাৎ ২০১৭ ও ১৮ সালের এপ্রিলে হাওরের বন্যা, আগস্টে উত্তরাঞ্চলের ভয়াবহ বন্যা এবং চট্টগ্রাম , কক্সবাজার, বান্দরবান ও রাঙামাটি পার্বত্য জেলায় পাহাড়ধসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ অধিক ঘটেছে। এ কারণে সাধারণ মানুষের প্রাণের ক্ষতির পাশাপাশি বোরো ,আমন ধানসহ ব্যাপক ফসলহানি হয়েছে। দেশ হয়েছে অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখোমুখি। এ বছর বৈশাখের আগমনের আগেই বসন্তের শেষ বিকালগুলো বৈরি আবহাওয়ার ছোবলে চট্টগ্রামসহ দেশব্যাপী লন্ডভন্ড হয়ে পড়ছে। আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী বৈশাখজুড়ে বৃষ্টিপাত, জলোচ্ছ¡াস ও ভ‚মিধসের মত ঝুঁকিতে থাকবে দেশ। কিন্তু এ ধরনের বড় বিপর্যয় মোকাবেলায় আমাদের প্রস্তুতি কতটুকু তা নিয়ে শংকা রয়েছে। কারণ জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে অতিরিক্ত কার্বন নিঃসরণ বন্ধে এবং ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে আর্থিক সহায়তা দিতে অর্থ বরাদ্দে আজও তেমন সাফল্য অর্জিত হয়নি। গতকাল দৈনিক পূর্বদেশে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাবে বর্ষা মৌসুমে অতিবৃষ্টি ও ভ‚মিকম্পের মত ঘটনা ঘটতে পারে। এতে ব্যাপক প্রাণহানির আশংকা রয়েছে। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, গত আট বছরে বৃহত্তর চট্টগ্রামে পাহাড় ও দেয়াল ধসে দুইশো’র অধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। এ অবস্থায় ভবিষ্যৎ করণীয় এখনই নির্ধারণ করা জরুরি। সরকারের ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয় থেকে বলা হচ্ছে যেকোন প্রাকৃতিক দুর্যোাগ মোকাবেলায় তাদের প্রস্তুতি আছে। আমরা সংশ্লিষ্ট দপ্তরের এ কথায় আশাবাদি হলেও তাদের তোড়জোড় দেখে পুরোপুরি আশ্বস্ত হতে পারছি না। তবে একথা ঠিক উন্নয়শীল কাতারে স্থান করে নেয়া এ বাংলাদেশকে অবশ্যই যেকোন বড় দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন স্বল্প, দৈর্ঘ ও মধ্য মেয়াদি উদ্যোগ বা প্রকল্প। হতে হবে টেকসই। এরজন্য বেশ্বিক সহযোগিতারও বিকল্প নেই। কারণ জলবায়ু পরিবর্তনের ঘটনাগুলোর মূল উৎস উন্নত বিশ্বের দেশ সমূহ। তারা নিজেরাই এর দায় স্বীকার করে নিয়েছে। ফলে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে এক অঙ্গীকারে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি যাতে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের চেয়ে কম থাকে, সে ব্যাপারে সব দেশ একাত্মতা ঘোষণা করেছে। এছাড়া তারা ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে আর্থিক সহযোগিতাসহ দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেয়ার আশ্বাস দিয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে গেল ৫০ বা ১০০ বছরের পরিসংখ্যান বিবেচনায় আগামীতে বাংলাদেশে ব্যাপক অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, অসময়ে প্রবল বন্যা, মরুময়তা, ঘূর্ণিঝড়, নিম্নচাপ, খরার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্ভাবনা রয়েছে। ২০২০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের কৃষি উৎপাদন ৩০ শতাংশ কমে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ কারণে দক্ষিণ এশিয়ায় ২২ শতাংশ কৃষিজমি ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। এতে দেশে খাদ্যাভাবসহ নানা অর্থনৈতিক সংকট দেখা দেয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বাংলাদেশে ক্ষরাসহিষ্ণু কৃষিপণ্য উৎপাদন, আধুনিক পদ্ধতিতে শস্য ও বীজ সংরক্ষণসহ কৃষিজমি রক্ষার্থে বনভূমি উজাড়, জলাধার ভরাট, ইটভাটা নির্মাণ বন্ধ করা ভিন্ন বিকল্প নেই। কাজেই বিশ্ব পরিবেশকে রক্ষা করতে হলে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সব দেশকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করে যেতে হবে।