বিদেশি বিনিয়োগের জন্য আরও অনুকূল পরিবেশ তৈরির আহবান

57

ব্যবসায়ীদের সাথে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ) রাষ্ট্রদূতদের এক মতবিনিময় সভা গতকাল বুধবার সকালে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের বঙ্গবন্ধু কনফারেন্স হলে অনুষ্ঠিত হয়।
চিটাগাং চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলমের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত ও হেড অব দ্যা ডেলিগেশন মিসেস রেন্সজে টিরিংক, স্পেনের রাষ্ট্রদূত আলভারো দে সালাস গিমেনেজ ডি এজকারেট, নেদারল্যান্ডস রাষ্ট্রদূত হ্যারি ভারওয়েজ, ইতালির রাষ্ট্রদূত এনরিকো নুনজিয়াতা, চিটাগাং চেম্বারের সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. নুরুন নেওয়াজ সেলিম, পরিচালক ও বিজিএমইএ’র ১ম সহ-সভাপতি মঈনুদ্দিন আহমেদ ও ওমর হাজ্জাজ, চেম্বারের প্রাক্তন সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আলী আহমেদ, প্রাক্তন পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল জুলফিকার আজিজ, বিএসআরএম’র এমডি আমীর আলী হুসেইন, ইস্পাহানি গ্রুপের চেয়ারম্যান মির্জা সালমান ইস্পাহানী, ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপ ইয়ার্ডের এমডি ইঞ্জিনিয়ার মো. সাখাওয়াত হোসেন, ফিলিপাইনস্’র অনারারী কনসাল এমএ আউয়াল, উইম্যান চেম্বারের সিনিয়র সহ-সভাপতি আবিদা মোস্তফা ও সহ-সভাপতি ডা. মুনাল মাহবুব, জেএফ’র (বাংলাদেশ) সিইও একিউআই চৌধুরী, সানশাইন স্কুল এন্ড কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ সাফিয়া গাজী রহমান, কিশোয়ান গ্রুপের পরিচালক মো. নজরুল ইসলাম মানিক, সেলেক্স সিকিউরিটিজ লি. এর জিয়া হাসান ও কবির স্টিলের ডিএমডি সারোয়ার। সভা সঞ্চালনা করেন এ কে খান এন্ড কোম্পানির এক্সিকিউটিভ কমিটির চেয়ারম্যান ও তুর্কি অনারারি কনসাল সালাহ্উদ্দীন কাসেম খান।
সভায় হেড অব দ্যা ডেলিগেশন মিসেস রেন্সজে টিরিংক বলেন, বাংলাদেশ ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সর্ববৃহৎ ব্যবসা এবং মানবিক অংশীদ্বার। অস্ত্র ছাড়া এদেশের সকল পণ্য অবাধ ও শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধা পেয়ে আসছে। গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানের কারণে চট্টগ্রাম অত্যন্ত সম্ভাবনাময় এবং ডায়নামিক সিটি। তিনি ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণে ও বিনিয়োগ আকর্ষণে উদার হওয়া এবং সংশ্লিষ্ট নীতিমালা সংস্কারের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ ও মানসম্পন্ন বিদেশি বিনিয়োগের জন্য আরো অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করার আহবান জানান।
চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ইউরোপের সাথে বাংলাদেশের বর্তমান বাণিজ্য প্রায় ২০ বিলিয়ন ইউরো। তবে বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি বৃহত্তর চট্টগ্রামে প্রায় ১ লক্ষ কোটি টাকার চলমান অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের উল্লেখ করে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ২৮টি দেশ থেকে বিনিয়োগ প্রত্যাশা করেন। এছাড়া সমাজের বিভিন্ন স্তর ও সম্ভাবনাময় খাতের উন্নয়নে চেম্বারের সাথে যৌথ প্রকল্প গ্রহণের আহবান জানান মাহবুবুল আলম।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে বিভিন্ন সেক্টরে কর্মরত বিদেশিদের প্রায় ৬ বিলিয়ন ডলার বেতন দিতে হয়। অন্যদিকে আমাদের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৫৭% কর্মক্ষম যুব শক্তি। কাজেই ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সহযোগিতায় যৌথ উদ্যোগে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে যুব শক্তিকে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর করে কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দারিদ্র্য বিমোচন করা এবং প্রশিক্ষিত জনশক্তি রপ্তানির মাধ্যমে বিদেশি মুদ্রা আয় করা সম্ভব।
স্পেন রাষ্ট্রদূত আলভারো দে সালাস গিমেনেজ ডি এজকারেট বলেন, পশ্চিমা বিশ্ব এখন প্রাচ্যের দিকে ধাবিত হচ্ছে। ফলে অর্থনৈতিক কূটনীতি অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তিনি বিনিয়োগ আকর্ষণে ‘ব্র্যান্ডিং বাংলাদেশ’ এর উপর গুরুত্বারোপ করেন।
নেদারল্যান্ডস রাষ্ট্রদূত হ্যারি ভারওয়েজ বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে এবং একই সাথে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদার হচ্ছে। তাই আরো বেশি উন্নত দেশের সাথে অংশীদারিত্ব স্থাপন করা প্রয়োজন। তিনি চট্টগ্রাম বন্দরের ক্রমবর্ধমান সক্ষমতাকে কাজে লাগানো, সামুদ্রিক ও কৃষি খাতে আরো বেশি গুরুত্ব দিয়ে অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মাধ্যমে সক্ষমতা বৃদ্ধি, নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে অংশগ্রহণমূলক অর্থনীতির উন্নয়নে কাজ করার আহবান জানান।
ইতালির রাষ্ট্রদূত এনরিকো নুনজিয়াতা বলেন, কেমিক্যাল, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, এলএনজিসহ এসব খাতে প্রকৌশলীদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে বাংলাদেশ ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সহায়তা গ্রহণ করতে পারে। তিনি যৌথ উদ্যোগে কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের মাধ্যমে এক্ষেত্রে কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জন সম্ভব বলে মনে করেন। রাষ্ট্রদূত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কোন্নয়নে বাণিজ্য প্রতিনিধিদলের সফর বিনিময়ের উপর গুরুত্বারোপ করে ভিসা পদ্ধতি সহজীকরণের বিষয় বিবেচনার আশ্বাস প্রদান করেন।
চেম্বার সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. নুরুন নেওয়াজ সেলিম মানবসম্পদের সক্ষমতা উন্নয়নে কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সহযোগিতা কামনা করেন এবং বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতসহ সম্ভাবনাময় খাতসমূহে বিনিয়োগের আহবান জানান। তিনি ইউরোপের বিভিন্ন শহরের আদলে চট্টগ্রামকে স্মার্ট সিটি হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
সঞ্চালক সালাহ্উদ্দীন কাসেম খান স্পেন থেকে কৃষি খাত, ইতালি থেকে টেক্সটাইল শিল্পের পশ্চাদসংযোগ শিল্প এবং নেদারল্যান্ডস থেকে সমুদ্র বন্দরের উন্নয়নে বিশেষজ্ঞ সহায়তা কামনা করেন।
মতবিনিময় সভায় বক্তারা বিভিন্ন শিল্পের বিশেষ করে মিড লেভেল ও টপ লেভেল ম্যানেজমেন্টের জন্য যথাযথ উপযোগী দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলা, উচ্চতর প্রশিক্ষণ, চেম্বারের মাধ্যমে সহায়তা প্রকল্প বাস্তবায়ন, কার্বন নিঃসরণ কমানো, জলবায়ু মোকাবেলায় বৈশ্বিক বরাদ্দ প্রদান, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে সমর্থন, রপ্তানি বৃদ্ধি, প্রকৌশল খাতে সহায়তা বৃদ্ধি, বৃহৎ শিল্পে কারিগরি সহায়তা, নারীর ক্ষমতা ও সমতা বৃদ্ধি, সমুদ্র থেকে ভূমি উদ্ধার, ইইউ’র জন্য বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন, ননট্রেডিশনাল পণ্যের রপ্তানি বৃদ্ধি ও রপ্তানি পণ্য বহুমুখিকরণ, তৈরি পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে মূল্যসংযোজন, চামড়া ও চামড়াজাত শিল্প, ঔষধ শিল্প ও চিংড়ি খাতে কারিগরি সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন। মতবিনিময় সভা শেষে রাষ্ট্রদূতগণ ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে পারমেনেন্ট এক্সিবিশন হল ও রেলওয়ে পলোগ্রাউন্ড মাঠে ২৭তম চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা পরিদর্শন করেন। মতবিনিময় সভায় অন্যদের মধ্যে চিটাগাং চেম্বার পরিচালকবৃন্দ কামাল মোস্তফা চৌধুরী, জহিরুল ইসলাম চৌধুরী (আলমগীর), মো. অহীদ সিরাজ চৌধুরী (স্বপন), সরওয়ার হাসান জামিল, অঞ্জন শেখর দাশ ও এস. এম. শামসুদ্দিন, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন’র বাণিজ্য উপদেষ্টা আবু সৈয়দ মুহাম্মদ বেলাল, চট্টগ্রাম ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটির ভিসি প্রফেসর মাহফুজুল হক চৌধুরী, বাংলাদেশ ব্যাংক’র জিএম মো. নুরুল আমিন, বিকেএমইএ’র সাবেক পরিচালক শওকত ওসমান, জাপানের অনারারি কনস্যুল জেনারেল মো. নুরুল ইসলাম, এইচআরসি’র সিনিয়র পরিচালক কাজী রুকুনউদ্দীন আহমেদ, জার্মানির অনারারি কনস্যুল শাকির ইস্পাহানী, দক্ষিণ আফ্রিকার অনারারি কনসাল মো. সোলায়মান আলম শেঠ, রাঙামাটি চেম্বারের সভাপতি মো. বেলায়েত হোসেন ভূঁইয়া ও পরিচালক নিকুল কুমার চাকমা, ইপিবি’র পরিচালক কংকন চাকমা, লুবরেফ বাংলাদেশ লি.’র পরিচালক সালাউদ্দিন ইউসুফ, বিন হাবীব লি. এর সালমান বিন হাবীব, ইউরো গ্যাস এলপিজি’র পরিচালক চৌধুরী ইয়ামান আনাম, চয়েস মোটরস পার্টস’র মাহবুবুল হক মিয়া, বিবিডিএন এক্সিকিউটিভ কমিটির কো-চেয়ারম্যান মুর্তজা রাফিসহ বিভিন্ন ট্রেডবডি নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।