বিদেশি পণ্যের’ নামে দেদার ঠকছেন ক্রেতা‘

94

বাহারি ডিজাইনের পণ্য দেখে হয়তো মনে করতে পারেন এটি বিদেশি পণ্য। পণ্যের প্যাকেটে ভিনদেশি লিখা থাকায় হয়তো আপনি পণ্যটির আসল সত্য জানতেই পারেননি। বেশি টাকায় কিনে নিলেন। কিন্তু বেশি দামে ভিনদেশি পণ্য মনে করে বড় সুপার শপ থেকে কেনা পণ্যটি হয়তো নিম্নমানের।
প্যাকেটের কারসাজিতে দেশে উৎপাদিত পণ্যটি ভুল তথ্য দিয়ে আপনার হাতে ধরিয়ে দেয়া হয়েছে। এভাবে অনেকেই প্রতারিত হলেও এবার এই প্রতারণার বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগে মাঠে নামছে মান নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বিএসটিআই।
মূলত, ক্রেতাদের বিভ্রান্তি দূর করতে প্রাথমিকভাবে সুপাশপগুলোতে তদারকি বাড়িয়েছে বিএসটিআই। পণ্যের মোড়ক আইন অনুযায়ী করা হচ্ছে কিনা, বিভ্রান্তিকর কিছু আছে কিনা, বাংলা ভাষায় বিবরণ আছে কিনা, দেখতে বিদেশি পণ্যের মতো কিনা এসব দেখছে তদারকি দল। এরমধ্যে কিছু পণ্য সম্পর্কে খুলশীমার্ট, বাস্কেটসহ কয়েকটি সুপারশপকে নির্দেশনা দিয়েছে বিএসটিআই। যদিও লেভেলিং আইন বাস্তবায়নে বাস্তবিক কোন পদক্ষেপ দেখা যায়নি সংস্থাটির।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, চট্টগ্রামের অভিজাত বিপণী বিতানের চতুর্থ তলায় বিভিন্ন দোকানে বিদেশি পণ্যের নামে ক্রেতাদের ঠকানো হচ্ছে। সম্প্রতি ‘সরগম টেলিকম’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান ইলেকট্রনিক পণ্যে এ ধরনের প্রতারণা করে শত শত গ্রাহককে ঠকিয়েছে বলে ভুক্তভোগী অনেকেই অভিযোগ করেছেন।
এ বিষয়ে কথা হলে বিএসটিআই চট্টগ্রামের পরিদর্শক মোহাম্মদ মামুনুর রহমান বলেন, সুপারশপ বা চেইনশপগুলোতে কিছু পণ্য দেখে মনে হয় এগুলো বিদেশি। দামও বিদেশি পণ্যের মতোই। ভিনদেশী ভাষায় পণ্যের বিবরণ থাকে। কাস্টমার এতে বিভ্রান্ত হন। অনেক ক্ষেত্রে প্রতারিত হন। আমরা পণ্য মোড়কিকরণ আইন সম্পর্কে সুপারশপগুলোকে বুঝাচ্ছি। এ ধরনের বিভ্রান্তিগুলো দূর করতে কাজ করছি।
তিনি বলেন, মোড়কজাত পণ্যের ক্ষেত্রে ৬টি বিষয় বাংলায় লিখা থাকতে হবে। এতে কোন ধরনের বিভ্রান্তির সৃষ্টি করা যাবে না। অনেক চিপস বা অন্য পণ্যের গায়ে ইংরেজি, আরবি এসব ভাষায় বিবরণ লিখা। সেটা করা যাবে না। অবশ্যই বাংলায় লিখা থাকতে হবে। বাংলার পাশাপাশি অন্যান্য ভাষা ব্যবহার করা যাবে।
পণ্যের মোড়কের কারসাজিতে ভোক্তাদের প্রতারণায় মনিটরিং সংস্থাগুলোর গাফেলতি রয়েছে বলে মনে করেন কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এসএম নাজের হোসাইন। তিনি বলেন, মনিটরিং ব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে এমন প্রতারণার ঘটনা ঘটছে। যারা মনিটরিং করার কথা তারা সেটা যথাযতভাবে করছেনা। জেলা প্রশাসন, ভোক্তা অধিদপ্তর কিছু করতে পারছে না। বিএসটিআই তো কোন ব্যবস্থা নিয়েছে, এমন নজিরও নেই। শুধুমাত্র র‌্যাবের কিছু অভিযানে লেভেলিং পরিবর্তন করার এমন কিছু প্রতারণা ধরা পড়েছে। এমনভাবে করা হয় ভোক্তা বুঝার কোন সুযোগ থাকে না।
ওজন ও পরিমাপ মানদন্ড আইন ২০১৮ এ মোড়কজাত পণ্যের ক্ষেত্রে ৬টি নির্দেশনা স্পষ্ট করেছে। এগুলো হল মোড়কের ভিতরের পণ্যের পরিচয়, পণ্যের নিট পরিমাণ এবং পণ্য মোড়কাহত করিবার দির্নিষ্ট পরিমাণ বা সংখ্যা, মোড়কজাত পণ্যের সর্বোচ্চ খুচরা বিক্রয় মূল্য, পণ্য উৎপাদনের তারিখ ও প্রযোজ্য ক্ষেত্রে উপযুক্ত ব্যবহারের মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ এবং উৎপাদনকারী, মোড়কজাতকারী, পরিবেশক বা বিপণনকারীর নাম এবং কারখানা ও প্রতিষ্ঠানের পূর্ণ ঠিকানা উল্লেখ থাকতে হবে। এ সকল তথ্য অবশ্যই বাংলা ভাষায় অধিক প্রাধ্যান্য দিয়ে থাকতে হবে।