বিদেশি উপহারের নামে প্রতারণা ৩ বাংলাদেশি গ্রেপ্তার

22

বিদেশ থেকে উপহার আসার মিথ্যা তথ্য দিয়ে শুল্ক পরিশোধের নামে মানুষের কাছ অর্থ হাতিয়ে নেওয়া বিদেশি চক্রের সঙ্গে যোগসাজশ থাকার অভিযোগে তিন বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
এরা হলেন- কায়েস হোসেন (২৫), তার স্ত্রী শাহিদা খাতুন (২৫) ও সুজন মাঝি (২৮)।
তাদেরকে শনিবার রাতে যাত্রাবাড়ি এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে সিআইডি বিশেষ পুলিশ সুপার রেজাউল মাসুদ জানিয়েছেন।
সিআইডি সদর দপ্তরে রোববার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, এরা বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ‘অ্যাকাউন্ট হোল্ডার’ সংগ্রহ করতো। এছাড়াও বিভিন্ন নামে অ্যাকাউন্ট খুলে নাইজেরিয়ানদের সরবরাহ করত। কায়েসের নামে এধরনের ১৫টি অ্যাকাউন্ট ও অন্যান্য নামে আরও ৩৩ অ্যাকাউন্ট পেয়েছে সিআইডি।
এই ধরনের প্রতারণার যে সব অভিযোগ পেয়ে সিআইডি পেয়েছে তাতে একটি নির্দিষ্ট ধরনে চক্রটি এসব প্রতারণা করে। কাউকে লক্ষ্য ঠিক করে বিদেশি নামের কোনো অ্যাকাউন্ট ফেইসবুক থেকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠানোর মাধ্যমে এর শুরু হয়।
ওই ব্যক্তি ফেইসবুকে রিকোয়েস্ট গ্রহণ করলে চক্রটির সদস্যরা মেসেঞ্জার ও ওয়াটসঅ্যাপে তার সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করে তার ‘বিদেশি বন্ধু’ আইফোন, আইপ্যাড ও কিছু ডলারের কিছু উপহার পাঠাবে বলে জানায়।
কিন্তু কিছুদিন পর শুল্ক কর্তকর্তা পরিচয়ে ভুক্তভোগীকে ফোন করে বলা হয়, বিদেশি বন্ধুর পাঠানো ওই উপহার দেশের নিয়ম অনুযায়ী শুল্ক পরিশোধ না করে আনা হয়েছে। তাই শুল্ক হিসেবে নির্দিষ্ট পরিমাণ (হাজারে বা লাখে) টাকা একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে দিতে বলা হয়।
ওই টাকা পেয়ে ভুক্তভোগীকে দ্বিতীয়বার ফোন করে বলা হয়, উপহারের বাক্সে কিছু ডলার বা অন্য কোনো বিদেশি মুদ্রা রয়েছে। সেজন্য আরও টাকা (সাধারণত লাখে) দিতে হবে। না হলে শুল্ক আইন ও মানি লন্ডারিং আইনে মামলা হবে। সাধারণত এই পর্যায়ে ভুক্তভোগীরা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
রেজাউল মাসুদ বলেন, শনিবার গ্রেপ্তার এই তিন বাংলাদেশি প্রতারণার কাজে ব্যবহারের জন্য বিভিন্ন নামে ব্যাংক হিসাব খুলতেন। ভুক্তভোগীরা সেখানে টাকা পাঠানোর পর তা তুলে নাইজেরীয়দের হাতে দিত। তার বিনিময়ে ৪ থেকে ৫ শতাংশ হারে কমিশন পেত।
‘তাদের কাছ থেকে ৪৮টি চেক বই, চারটি মোবাইল ফোন ও একটি ডেবিট কার্ড উদ্ধার করা হয়েছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে এই সিআইডি কর্মকর্তা বলেন, এ চক্রের সঙ্গে ব্যাংকের কেউ জড়িত থাকতে পারে, তবে সে বিষয়ে আমরা তদন্ত করছি।
তবে প্রতারণার কাজে ব্যবহার হওয়া এসব অ্যাকাউন্ট কোন কোন ব্যাংকে খোলা হয়েছে সেবিষয়ে কিছু বলতে চাননি।
একই ধরনের অভিযোগে মঙ্গলবার রাজধানীর পল্লবী এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১১ নাইজেরীয়সহ ১২ জনকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি। পল্লবী থানায় তাদের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করা হয়।
পরদিন রাতে ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় ওই চক্রের সদস্য আলবার্ট, চুকওয়ামা ও নুপুর খাতুনকে। তাদেরও পল্লবী থানার মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
এর আগে ৯ জুলাই রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ১৬ জন নাইজেরীয় ও দুই বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি।
সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার জানান, সিম বিক্রিতে প্রতারণার অভিযোগে মিঠুন সরকার (২৯) নামে একজনকে ফরিদপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তিনি বলেন, মিঠুন ফেইসবুকে বিশেষ নম্বরের মোবাইল সিম বিক্রির বিজ্ঞাপন দিয়ে মোবাইল ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে পুরো টাকা আগাম পেমেন্ট নিয়ে টাকা হাতিয়ে নিত।
তার কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়া ১০ লাখ ১১হাজার ২০০ টাকা উদ্ধার করা হয় বলে তিনি জানান। খবর বিডিনিউজের