বিচার বিভাগের ভূমিকা নিয়েও ফখরুলের প্রশ্ন

50

উচ্চ আদালতে বেশ কয়েকজন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বিচার বিভাগের বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ এনেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ অবস্থায় আদৌ সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব কি না- সে বিষয়েও সংশয় প্রকাশ করেছেন তিনি।
গতকাল শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে ফখরুল বলেন, ‘অবাক বিস্ময়ে লক্ষ্য করছি যে, নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন এমনকি বিচার বিভাগ, তারা আজকে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করবার জন্য একজোট হয়েছে। এটা আমাদের কাছে শুধু বিস্ময়কর নয়, অত্যন্ত আতঙ্কের। এই কথাগুলো বলছি, অত্যন্ত দায়িত্ব নিয়ে বলছি’।
গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত অন্তত আটটি আসনে বিএনপির প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র হাই কোর্টের আদেশে বাতিল হয়ে গেছে। সে সব আসনে নির্বাচন স্থগিত করে পুনঃতফসিল দেওয়ার জন্য ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশনে লিখিত আবেদন করেছে দলটি। তার আগে তিন আসনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্রও নির্বাচন কমিশন বাতিল করে দিয়েছে দুর্নীতি মামলায় তার দুই বছরের বেশি দন্ড হওয়ার কারণে। খবর বিডিনিউজের
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের কাছে মনে হয়েছে, একদম উদ্দেশ্যমূলকভাবে আমাদের প্রার্থীদের প্রার্থিতা বাতিল করছে। একটা উদাহরণ আমি দেখাতে চাই, সিলেট-২ আসনে। সেখানে আমাদের গুম হয়ে যাওয়া নেতা ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটি স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। তিনি পদত্যাগ করে প্রার্থী হয়েছেন। তিন বছর আগে কেন পদত্যাগ করেননি সেই অভিযোগে তার প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছে। অন্যদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া আওয়ামী লীগ নেতা এনামুল হক সরদার জৈন্তাপুর সরকারি ইমরান আহমেদ মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে কর্মরত আছেন। লুনার প্রার্থিতা বাতিল হয়েছে, কিন্তু এনামুল হক সরদারের প্রার্থিতা বাতিল হয়নি’।
ফখরুল বলেন, ‘লুনার প্রার্থিতা নির্বাচন কমিশন থেকে বাতিল হয়নি। কারণ আমাদের দেশে যে আইন আছে, সরকারি চাকরি না করলে ওই তিন বছরের বাধ্যবাধকতা নেই। স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে থেকে নির্বাচন করা সম্ভব, এমনকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে আছে নির্বাচন চলাকালেও পদত্যাগ করতে হবে না, নির্বাচিত হলে তাকে পদত্যাগ করতে হবে। হাই কোর্ট যে আদেশ দিয়েছে এই আদেশটাকে আমরা কি বলব? এটাকে কি আইন সম্মত বলব না, বেআইনি বলব? এটা কি ইনোসেন্ট অর্ডার না উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আদেশ বলব? আমরা বক্তব্য হচ্ছে- আজকে এই কাজগুলো কেন করা হচ্ছে?’
নির্বাচন কমিশন যাকে বৈধ ঘোষণা করেছে, নির্বাচন চলাকালীন সময়ে তার প্রার্থিতা বাতিল করার এখতিয়ার হাই কোর্টের আছে কি না- সেই প্রশ্ন তোলেন ফখরুল। ‘আইনটা হচ্ছে, নির্বাচন কমিশন যখন ফাইনালি বলে দিল সে বৈধ, তারপর সে প্রতীক নিয়ে চলে গেল। তারপরে ট্রাইব্যুনালে যাওয়ার বিধান আছে- সেটা নির্বাচনের পরে, আগে নয়’।
ফখরুল বলেন, ‘প্রত্যেকটা জায়গায় হস্তক্ষেপ করা হয়েছে। শুধু হস্তক্ষেপ নয়, আমার দলের প্রার্থী কাকে প্রতীক দেব, সেকথা হাই কোর্ট থেকে বলে দেওয়া হচ্ছে। তাহলে আমি কি করে বুঝব, হাই কোর্ট থেকে আমি ন্যায়বিচার বা সুবিচার পাচ্ছি। আমি কি করে বলব, হাই কোর্ট তার আইনের প্রয়োগ করছেন? আমি বুঝতে পারছি না, মানুষ বুঝতে পারছে না’।
এভাবে নির্বাচনকে একটি ‘তামাশায়’ পরিণত করা হয়েছে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আজকে সকলের কাছে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, এই নির্বাচন আদৌ অনুষ্ঠিত হবার মত অবস্থা আছে কিনা’। ফখরুল বলেন, তফসিল ঘোষণার পর বিএনপি প্রার্থী ও নেতা-কর্মীরা নির্বিঘ্নে প্রচারে নামতে পারবেন, তাদের ‘গ্রেপ্তার-হয়রানি’ বন্ধ করা হবে বলে তারা আশা করেছিলেন। কিন্তু বাস্তবে তা হচ্ছে না। আজকের পত্রিকাতেও আছে- ‘বিএনপি করনার্ড’। একেবারে অবিশ্বাস্য একটা পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে যে পরিস্থিতিতে কোনো মতেই একটা অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। এটা হবার কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না’।
সরকার ও নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশ্যে ফখরুল বলেন, ‘আমরা এখনো আশা করছি যে, তারা শেষ মুহূর্তে হলেও সংবিৎ ফিরে পাবে, সরকার তার সংবিৎ ফিরে পাবে এবং এই নির্বাচন অনুষ্ঠানের সাথে জড়িত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সেনা বাহিনী, যারা ২৪ তারিখ নামবে বলা হয়েছে, সকলের মধ্যে দেশপ্রেম-দায়িত্ববোধ কর্তব্যবোধ ও তাদের চার্টারে যা বলা আছে সেভাবে তারা দায়িত্ব পালন করবে’।