বিক্ষোভে উত্তাল পাকিস্তান

6

পূর্বদেশ ডেস্ক

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে গ্রেপ্তার ঘিরে উত্তাল পাকিস্তান। দেশজুড়ে চলছে বিক্ষোভ। চলমান এ বিক্ষোভ সহিংস রূপ নিয়েছে। পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। এতে গতকাল বুধবার পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ১০ জনে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া বহু আহতের খবর পাওয়া গেছে।
বিক্ষোভ দমনে সারাদেশে ধরপাকড় অব্যাহত রেখেছে পুলিশ। পিটিআইয়ের ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মেহমুদ কুরেশি ও মহাসচিব আসাদ উমরসহ কয়েক হাজার নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে।
আল-কাদরি ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় মঙ্গলবার ইসলামাবাদ হাইকোর্ট (আইএইচসি) প্রাঙ্গণ থেকে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তেহরিক-ই-ইনসাফের প্রধান (পিটিআই) ইমরান খান। সেই মামলায় গতকাল ইসলামাবাদ পুলিশ লাইনে গঠিত বিশেষ আদালতে তোলা হয় তাকে। পরে আদালত ইমরান খানের আটদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। খবর বিবিসি, ডন।
পাকিস্তানের সংবাদ মাধ্যম ডন প্রতিবেদনে জানায়, পিটিআই চেয়ারম্যান ইমরান খানের ১৪ দিনের রিমান্ড চেয়ে বিশেষ আদালতে আবেদন করে ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টেবিলিটি ব্যুরো (এনএবি)। শুনানি শেষে বিচারক আটদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। এছাড়াও গতকাল একটি দায়রা আদালত তোশাখানা মামলায় ইমরান খানকে অভিযুক্ত করেছে। উভয় শুনানি ইসলামাবাদ পুলিশ লাইনে হয়। মঙ্গলবার তাকে সেখানে নেয়ার পর কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে ‘এককালীন ব্যবস্থা’ হিসেবে সেটিকে আদালতের মর্যাদা দেয়া হয়। ইমরান খানের মামলার শুনানিতে বিচারক হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন মোহাম্মদ বশির।
শুনানির সময় ইমরান খান আদালতকে বলেন, গ্রেপ্তারের পর আমাকে নির্যাতন করা হয়েছে। এমনকি বাথরুমেও যেতে দেওয়া হয়নি। যখন আমাকে গ্রেপ্তার করা হয়, তখন পরোয়ানা দেখানো হয়নি। ব্যুরোর অফিসে নেয়ার পর সেটি দেখানো হয়েছে। আমার একজন চিকিৎসকের প্রয়োজন।
এদিকে বিক্ষোভের মুখে পাঞ্জাব ও খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। এ ছাড়া রাজধানী ইসলামাবাদ এবং বেলুচিস্তান প্রদেশে সেনা মোতায়েন করা হচ্ছে। সিন্ধু প্রদেশে জারি করা হয়েছে ১৪৪ ধারা।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পাঞ্জাব সরকারের সেনা নামানোর আবেদনে অনুমোদন দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে কাজ করবেন সেনাসদস্যরা।
ইমরান গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে পাঞ্জাবের রাজধানী লাহোরসহ প্রাদেশিক একাধিক শহরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। পাঞ্জাব পুলিশ বলছে, পিটিআইর সমর্থকেরা সেখানে অন্তত ১৪টি সরকারি স্থাপনায় আগুন দিয়েছেন।
এদিকে বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিবেচনায় ইসলামাবাদ প্রশাসন সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানিয়েছে। তবে ইসলামাবাদ ও তিন প্রদেশে সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছে ইমরান খানের দল পিটিআই।
পাকিস্তানে মুঠোফোনে ইন্টারনেটসেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ফেসবুক, টুইটার ও ইউটিউব ‘ঠিকমতো কাজ করছে না’ বলে দাবি করেছেন ব্যবহারকারীরা।
এদিকে বিক্ষোভকারীদের প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছে সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনীর আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক বিবৃতিতে এ হুঁশিয়ারি দেয়। বিবৃতিতে এ সহিংসতাকে ‘কালো অধ্যায়’ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অভিযোগ : ইমরান খানের দল অভিযোগ করছে, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার জন্য খানকে মিথ্যে মামলায় গ্রেপ্তার করেছে সরকার। পাকিস্তানের সরকার অবশ্য ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের পেছনে ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা’র কথা অস্বীকার করেছে।
সরকারের আইনমন্ত্রী আজম নাজির তারার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ইমরান খানের বিরুদ্ধে মামলাটি করেছে পাকিস্তানের ‘ন্যাশনাল একাউন্টেবিলিটি ব্যুরো, যা পাকিস্তানের দুর্নীতি বিরোধী সর্বোচ্চ সংস্থা। আদালতে বার বার তলব করার পরওতিনি হাজির হতে অস্বীকার করেছেন।
আইনমন্ত্রী বলেন, যখনই তাকে আদালতে ডাকা হয়েছে, তিনি তার সময়মতো সেখানে গেছেন, তাও আবার চূড়ান্ত হুঁশিয়ারি পাওয়ার পর।
পাকিস্তানে সাবেক সরকার প্রধান বা রাজনীতিকদের গ্রেপ্তার করা কোনো নতুন ঘটনা নয়। তবে সেখানে সেনাবাহিনীকে এভাবে সরাসরি চ্যালেঞ্জ করার ঘটনা খুবই বিরল। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী এ পর্যন্ত অনেক সেনা অভ্যুত্থান করেছে এবং তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে তারাই দেশটি শাসন করেছে।
ইমরান খানকে গত বছরের এপ্রিলে ক্ষমতাচ্যূত করা হয়। তিনি চার বছরেরও কম সময় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন।
গত বছরের নভেম্বরে যখন তিনি পাকিস্তানের ওয়াজিরাবাদ শহরে প্রচারণা করছিলেন, তখন তার পায়ে গুলি করা হয়। তিনি এই ঘটনার জন্য একজন ঊর্ধ্বতন সেনা গোয়েন্দা কর্মকর্তাকে দায়ী করেছিলেন।
ইমরান খানের দল পাকিস্তানের তেহরিক-ই-ইনসাফ পার্টির একজন সিনিয়র নেতা ফাওয়াদ চৌধুরি বলেছেন, সরকার ষড়যন্ত্র করে পাঞ্জাবে জনগণ এবং সেনাবাহিনীকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।
তিনি গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময় বলেন, রাজনৈতিক লড়াইটা চলছে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে, কিন্তু পিডিএম সরকার জনগণ এবং সেনাবাহিনীকে মুখোমুখি করে দিয়েছে। তার মতে, তেহরিক-ই-ইনসাফ পার্টি হচ্ছে পাকিস্তানের মধ্যবিত্তদের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল, অন্যদিকে সেনাবাহিনী হচ্ছে পাকিস্তানে মধ্যবিত্তের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান।
তিনি পাকিস্তানের সেনা প্রধান এবং সেনা গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই’ এর প্রধানের প্রতি আহŸান জানান এই ষড়যন্ত্রে সামিল না হওয়ার জন্য। তিনি তার দলের কর্মীদের প্রতি শান্ত থাকারও আহŸান জানান।