বিএসসির বহরে যুক্ত হচ্ছে ৪ জাহাজ

20

ফারুক আবদুল্লাহ

রাষ্ট্রায়ত্ত জাহাজ পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের বহরে যুক্ত হচ্ছে নতুন চারটি জাহাজ। এর মধ্যে দুটি ক্রুড অয়েল মাদার ট্যাংকার এবং দুটি মাদার বাল্ক ক্যারিয়ার রয়েছে। বর্তমানে প্রতিটি ক্রুড অয়েল ট্যাংকারের দাম ৭৮০ কোটি এবং মাদার বাল্ক ক্যারিয়ারের দাম পড়ছে ৪৬২ কোটি টাকা। নতুন ৪ টি জাহাজ যুক্ত হলে প্রতি বছর ১১ কোটি ৩৭ লাখ ডলার আয় করা সম্ভব হবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতিষ্ঠাকাল থেকে আন্তর্জাতিক নৌপথে নিরাপদ ও দক্ষ হাতে পণ্য পরিবহন নিশ্চিত করে দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে ভূমিকা রেখে চলেছে বিএসসি। দেশের আমদানি-রপ্তানির বিশাল একটি অংশ বিএসসি’র জাহাজের মাধ্যমে পরিবহন করা হয়। এর মাধ্যমে বিএসসি পরিবহন খাতে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছে। পাশাপাশি জাতির যেকোনো দুর্যোগ মুহূর্তে বিএসসি’র জাহাজসমূহের ভূমিকা রয়েছে। এছাড়া বিদেশি পণ্য পরিবহন করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে বিএসসির।
বিএসসির তথ্য মতে, চীনের ঋণ সহায়তায় জাহাজ চারটি কেনা হচ্ছে। এই ঋণ পরিশোধের সময় ২০ বছর এবং গ্রেস পিরিয়ড ৫ বছর। এতে সুদের হার হলো ২ শতাংশ। চারটি জাহাজের মধ্যে দুটি ক্রুড অয়েল মাদার ট্যাংকার এবং দুটি মাদার বাল্ক ক্যারিয়ার রয়েছে। বর্তমানে প্রতিটি ক্রুড অয়েল ট্যাংকারের দাম ৭৮০ কোটি এবং মাদার বাল্ক ক্যারিয়ারের দাম পড়ছে ৪৬২ কোটি টাকা। এ প্রকল্পে ঋণ সহয়তার পরিমাণ আরএমবি ১,৬৭৬.৭৪ মিলিয়ন। প্রকল্পটি চ‚ড়ান্ত অনুমোদন পাওয়ার পূর্বে বিভিন্ন ধাপে সংশ্লিষ্ট কমিটির যাচাই-বাছাই ও জাহাজের মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হওয়ায় অনুমোদন লাভ করে। প্রকল্পের নেগোশিয়েশন কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়। নেগোশিয়েশন কমিটির নিগোশিয়েটেড দর বিএসসির বোর্ড সভায় অনুমোদিত হয়। আর প্রকল্পটির প্রক্রিয়াকরণ প্রস্তাব অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত কমিটি (সিসিইএ) কর্তৃক নীতিগতভাবে অনুমোদনের সুপারিশ ২০১৮ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক অনুমোদিত হয়। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি কর্তৃক প্রকল্পটি গত ১৮ এপ্রিল অনুমোদিত হয় এবং গত ১৭ জুলাই ঈধনরহবঃ ঈড়সসরঃঃবব ড়হ এড়াবৎহসবহঃ চঁৎপযধংব (ঈঈএচ) কর্তৃক ক্রয়ের বিষয়টি চ‚ড়ান্তভাবে অনুমোদিত হয়। আগামী ২০২৬ সালের মধ্যে জাহাজ চারটি হস্তান্তার করা হবে।
এছাড়া বর্তমানে বিএসসির বহরে ৫টি জাহাজ রয়েছে। গত ২০০৯-১০ অর্থবছরে সংস্থাটির নীট আয় ছিল ১৩ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। এরপর দীর্ঘ ১৪ বছরের ব্যবধানে প্রতিষ্ঠানে একক অর্থবছরে নীট মুনাফা করেছে ২২৫ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এটি ২০২১-২২ অর্থবছরের সাফল্য। সর্বশেষ জাহাজের ভাড়া এবং কমিশন বাবদ ২০২২-২৩ অর্থবছরে আয় হয়েছে ৩ কোটি ৩৬ লাখ ৩৩ হাজার ৮২৪ ডলার। নতুন ৪টি জাহাজ যুক্ত হলে প্রতি বছরের আরও ১১ কোটি ৩৭ লাখ ডলার আয় করা সম্ভব হবে।
বিএসসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমডোর মো. জিয়াউল হক বলেন, বিএসসি বিদ্যমান জাহাজ বহরের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পাশাপাশি দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে। সংস্থাটির জাহাজের মাধ্যমে ক্রুড অয়েল, গম, চাল, সিমেন্ট ক্লিংকার, সার ইত্যাদি পণ্য পরিবহন করে ভাড়া বাবদ বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় এবং আন্তর্জাতিক রুটে বিএসসির জাহাজ ভাড়া প্রদান করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে আসছে।
তিনি বলেন, নতুন জাহাজগুলো বিএসসি বহরে যুক্ত হলে ক্রুড অয়েল ট্যাংকার জাহাজ দুটির মাধ্যমে বছরে প্রায় ২০ লাখ মেট্রিক টন ক্রুড অয়েল এবং বাল্ক জাহাজ দুটির মাধ্যমে বছরে প্রায় ১৫.২০ লাখ মেট্রিক টন (বাল্ক) কার্গো পরিবহন সক্ষমতা অর্জন করবে। সেই সঙ্গে সমূদ্রে পরিচালনার জন্য জাহাজ প্রতি বছরে কমপক্ষে ৩৫ জন হিসাবে ৪ টি জাহাজে প্রায় ১৪০ জনের মেরিন অফিসার এবং ক্রুর কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। এছাড়া জাহাজ পরিচালনাকালে পোর্ট চার্জ, বীমা, রেজিস্ট্রেশন, মেরামত, রক্ষণাবেক্ষণ ও শুল্ককর আদায় ইত্যাদি খাতে সরকারের প্রচুর রাজস্ব আয় হবে। সরকারের জাহাজ ভাড়া বাবদ বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক অর্থ উপার্জন এবং সাশ্রয় হবে।