বিএমডিসি অভিযুক্ত চিকিৎসকের পক্ষ নিয়েছে

39

শিশু রাফিদা খান রাইফার মৃত্যুর ঘটনায় বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটি অভিযুক্ত চিকিৎসকের পক্ষ নিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন রাইফার বাবা সাংবাদিক রুবেল খান। গতকাল শুক্রবার সকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের এ রহমান হলে রাইফার প্রথম মৃত্যুবাষিকী উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন। এসময় রুবেল খান দ্রæত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল, অভিযুক্তদের বিচার নিশ্চিত করা এবং স্বাস্থ্যখাতের বিশৃঙ্খলা ও অনিয়ম দূর করতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে রুবেল খান বলেন, রাইফার মৃত্যুর পর বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়। কিন্তু তারা তদন্তের সময় মামলার বাদী হিসেবে আমার সঙ্গে কোনো কথা বলেননি। তারা ম্যাক্স হাসপাতাল ও চিকিৎসকদের পক্ষে গত ৫ মে মহানগর মুখ্য হাকিম আদালতে অসম্পূর্ণ তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছেন, যেটি গ্রহণ না করতে আমি আদালতে আবেদন জানিয়েছি।
তিনি বলেন, আমি জানি আমার মেয়ে আর ফিরে আসবে না। তবে অভিযুক্ত চিকিৎসকের শাস্তি হলে দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা বাড়বে। চিকিৎসা সেবায় আমূল পরিবর্তন আসবে। সবাই জবাবদিহিতার মধ্যে থাকবে। সরকারের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে। চিকিৎসার জন্য কেউ দেশের বাইরে যাবে না। দেশের টাকা দেশেই থাকবে।
দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করা রাইফার মৃত্যুর এক বছর পার হতে চললেও চিকিৎসকের অবহেলা কিংবা ভুলে মানুষের মৃত্যু কমেনি বরং বেড়েছে। এ জন্য চিকিৎসা খাতে শৃঙ্খলা প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। তবেই রাইফার মতো কেউ অকালে ঝরে যাবে না। কোনো নিষ্পাপ শিশু কিংবা মানুষের মৃত্যু হবে না। যোগ করেন সাংবাদিক রুবেল খান।
তিনি বলেন, অপরাধী কারও ভাই কিংবা বন্ধু হতে পারে না। অপরাধীর পরিচয় কেবল অপরাধী হিসেবেই বিবেচনা করতে হবে। একজন চিকিৎসক অপরাধ করলে তাকেও অপরাধী হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। কাউকে আইনের ঊর্ধ্বে ভাবার সুযোগ নেই। চিকিৎসকের অবহেলা এবং ভুল চিকিৎসায় যদি কারও মৃত্যু হয়, এতে দায়ি চিকিৎসকের যদি শাস্তি না হয়, তবে দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থায় সংকট তৈরি হবে।
রুবেল খান বলেন, চট্টগ্রামের সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদনে অভিযুক্ত চিকিৎসকের অবহেলার প্রমাণ পেয়েছে বলে উল্লেখ করেছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদনে ম্যাক্স হাসপাতালে ১১টি ত্রুটি পেয়েছে বলে উল্লেখ করেছে। ওই হাসপাতালের বিভিন্ন অনিয়মের প্রমাণ পেয়ে র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করেছে। এর পরেও আমার মেয়ের ‘মেডিকেল মার্ডারের’ বিচারের জন্য আর কি প্রমাণের প্রয়োজন আছে?
মামলার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে রুবেল খান বলেন, পুলিশ জানিয়েছে, তদন্ত চলছে। তারা বিএমডিসি প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষায় আছে। আদালতে দেওয়া বিএসডিসি প্রতিবেদনে নিয়ে আমি আপত্তি জানিয়েছি। বিএমডিসি’র প্রতিবেদন পেলে পুলিশও তাদের প্রতিবেদন দেওয়ার কথা জানিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলেনে বিএফইউজে’র সহসভাপতি রিয়াজ হায়দার চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব কাজী মহসিন, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি নাজিমুদ্দিন শ্যামল, সহসভাপতি মোহাম্মদ আলী, সাধারণ সম্পাদক হাসান ফেরদৌস, যুগ্ম সম্পাদক সবুর শুভ, প্রচার সম্পাদক আহমেদ কুতুব, নির্বাহী সদস্য উত্তম সেন গুপ্ত, চট্টগ্রাম সাংবাদিক হাউজিং কো-অপারেটিভ সোসাইটির চেয়ারম্যান স্বপন মল্লিক উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে রাইফার প্রথম মৃত্যুবাষিকীতে সাংবাদিক-জনতা সমাবেশের ডাক দিয়েছে চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন। আজ শনিবার সকাল ১১টায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব চত্বরে এই সমাবেশের আয়োজন করা হবে। এতে সকল পেশাজীবীসহ সর্বস্তরের সকলকে উপস্থিত হওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন সিইউজে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।
উল্লেখ্য, গলায় ব্যথা নিয়ে গত বছরের ২৮ জুন বিকেলে নগরীর ম্যাক্স হাসপাতালে ভর্তি করা হয় শিশু রাইফাকে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরদিন মৃত্যু হয় রাইফার। ওই বছরেরই ১৮ জুলাই চকবাজার থানায় হাসপাতালের চার চিকিৎসকের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করেন সাংবাদিক রুবেল খান। দুই দিন পর ২০ জুলাই পুলিশ তা মামলা হিসেবে গ্রহণ করে। মামলায় যে চার চিকিৎসককে আসামি করা হয়, তারা হলেন শিশু বিশেষজ্ঞ বিধান রায় চৌধুরী, ম্যাক্স হাসপাতালের দায়িত্বরত চিকিৎসক দেবাশীষ সেন গুপ্ত, শুভ্র দেব ও ম্যাক্স হাসপাতালের পরিচালক ডা. লিয়াকত আলী। রাইফার পরিবারের অভিযোগ, চার চিকিৎসকের অবহেলা ও গাফিলতিতে রোগ সঠিকভাবে নির্ণয় না হওয়া এবং ক্ষতিকর অ্যান্টিবায়োটিক ও অতিরিক্ত মাত্রায় সেডিল প্রয়োগের কারণে তার আড়াই বছর বয়সী মেয়েটির মৃত্যু হয়েছে। ঘটনার পর থেকেই সাংবাদিক সমাজ, বিভিন্ন পেশাজীবী ও সাধারণ মানুষ অভিযুক্তদের শাস্তির দাবিতে মাঠে নামে।