বিএনপির স্থায়ী কমিটির সঙ্গে বসতে চায় ঐক্যফ্রন্ট

25

আন্দোলনের কর্মসূচির ধরন নিয়ে জোটের মধ্যকার চলমান সমস্যা সমাধানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করতে চায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। জোটের নেতারা বলছেন, গত ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ঢাকা দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগে ঐক্যফ্রন্টের ৪টি পথসভা করার কথা ছিল। কিন্তু বিএনপির কারণে সেগুলো করা হয়নি। এভাবে কর্মসূচি ঘোষণা করে তা পালন করতে না পারলে ফ্রন্টের প্রতি মানুষের আস্থা নষ্ট হয়ে যাবে। ফলে আগামী দিনের কর্মসূচি, কর্মসূচির ধরন এবং কীভাবে তা পালন করতে হবে এসব বিষয়ে সমাধানের জন্য বিএনপির স্থায়ী কমিটির সঙ্গে ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটি বৈঠক করতে চায়। গতকাল অনুষ্ঠিত ফ্রন্টের বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খানকে বৈঠক করার প্রস্তাব দেন ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম উদ্যোক্তা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
এ বিষয়ে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটিকে বৈঠক করার প্রস্তাব দিয়েছি। তবে এ বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। এর বাইরে কিছু বলতে পারবো না। ’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির এক নেতা বলেন, বৈঠকের একপর্যায়ে জেএসডির নেতা শহীদুল্লাহ কাউসার বলেন, আন্দোলনে যাওয়ার শর্তে আমরা বিএনপিকে সিটি নির্বাচনে সমর্থন দিয়েছি। তাহলে এখন আমাদের সবাইকে রাস্তায় নামা উচিত। তখন বিএনপি নেতা মঈন খান বলেন, আমাদের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে কেউ হরতাল দিতে রাজি ছিলেন না। তখন আমি জোটের সমর্থনের কথাটি উপস্থাপন করি। এরপরই নির্বাচনের পরের দিন হরতাল দেওয়ার জন্য স্থায়ী কমিটি রাজি হয়েছে। তখন জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, তাহলে আমরা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সঙ্গে বৈঠক করি। আমাদের মধ্যে যেসব সমস্যা আছে সেগুলো নিয়ে কথা বলে সমাধান করি। এর পরিপ্রেক্ষিতে মঈন খান বলেন, স্থায়ী কমিটির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে ফ্রন্টের সঙ্গে বৈঠক করার বিষয়ে রাজি করাতে হবে আগে।
বৈঠকের সূত্র জানান, ঘোষণা দিয়েও পথসভা করতে না পারায় বৈঠকে ক্ষোভ প্রকাশ করেন জেএসডি সভাপতি আসম আব্দুর রব। তিনি বলেন, আগেও কয়েকবার কর্মসূচির ঘোষণা দিয়ে আমরা পালন করতে পারিনি। এবারও নির্বাচনের আগে পথসভা করার ঘোষণা দিয়ে করতে পারিনি। যদিও আমি মেয়র প্রার্থীদের অনুরোধে তিনটি পথসভায় অংশ নিয়েছি। নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাও একটি সভায় অংশ নিয়েছেন জোটের পক্ষ থেকে। কিন্তু এভাবে কর্মসূচি দিয়ে পালন করতে না পারা ঐক্যফ্রন্টের জন্য অশনি সংকেত। এভাবে চলতে থাকলে ফ্রন্টের ওপর মানুষের আস্থা হারাবে। পাশ থেকে আরেক নেতা বলেন, বিএনপি সময় দেয়নি বলে পথসভা করা যায়নি। অথচ তারাই ফ্রন্টকে নির্বাচনের মাঠে নামতে অনুরোধ করেছে। তবে, বৈঠকে উপস্থিত বিএনপির নেতা মঈন খান এসব বিষয়ে কোনও কথা বলেননি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আসম আব্দুর রব বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বৈঠকে সিটি নির্বাচন ও আমাদের কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আশা করি সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।’
কর্মসূচি ঘোষণা করে না পালন করার বিষয়ে বাংলা ট্রিবিউনের এক প্রশ্নের জবাবে কামাল হোসেন বলেন, ‘আপনি সঠিকভাবে এগুলো চিহ্নিত করেছেন। এগুলো নিয়ে আজকে আমাদের আলোচনা হয়েছে, আগামীতে আমাদের কর্মসূচি আরও জোরদার করতে হবে। জনগণের মাঝে গিয়ে তাদের নিয়ে পরিবর্তন আনতে হবে।’
বৈঠকে উপস্থিত দুই নেতা জানান, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পরিধি বাড়ানোর বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। জোটে ইসলামি দলগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করারও প্রস্তাব দেন জাফরুল্লাহ। এ বিষয়ে বিএনপির মধ্যেও আলোচনা চলছে বলেও জানিয়েছে তাদের প্রতিনিধি। তবে এ নিয়ে কামাল হোসেন কোনও কথা বলেননি। আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার দুই বছরের কারাবাসের প্রতিবাদে ঘোষিত প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন শেষে হাইকোর্ট পর্যন্ত পদযাত্রা করার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। তবে এ নিয়ে কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। এছাড়া সিটি নির্বাচনে ভোটারের অনুপস্থিতি এবং নির্বাচনের দিন বিএনপির মাঠ ছেড়ে দেওয়ার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।