বিএনপির মনোনয়ন বাণিজ্যে সুইস ব্যাংকে টাকা বেড়েছে

87

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, একাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে বিএনপির ‘মনোনয়ন বাণিজ্যের’ অর্থের সন্ধান করলেই সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের টাকা বৃদ্ধির হিসাব বেরিয়ে আসবে। গতকাল শনিবার জাতীয় সংসদে অর্থবিল ২০১৯ এর জনমত যাচাইয়ের প্র্রস্তাবের আলোচনায় এ কথা বলেন তিনি।
সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে, গত বছর সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিদের অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার ৩৪৩ কোটি টাকা, যা আগের বছরের থেকে ১২৭৪ কোটি টাকা বেশি।
অর্থবিল নিয়ে জনমত যাচাইয়ের প্রস্তাবের আলোচনায় বিএনপির সাংসদ রুমিন ফারহানা সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের টাকার বিষয়টি আনেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আরেকজন বললেন, সুইস ব্যাংকে টাকার কথা। উনাকে আমি বলব, সুইস ব্যাংকে টাকাওয়ালা হিসেবে কাদের নাম লিস্টে এসেছে উনি যেন একটু গিয়ে দেখেন। যাদের প্রশংসায় তারা পঞ্চমুখ থাকেন আর যাদের কথা তারা এত বেশি বলেন, তাদের কথাটাই এসেছে। শুধু তাই নয় এমন কথাও এসেছে, এই যে নির্বাচনটা হল ২০১৮ সালে। যারা একেকটা নির্বাচনে ৩০০টা সিটে, আমি বিএনপির কথাই বলছি। ৩০০ সিটে ৬৯২ জন মনোনয়ন পেল। একটা সিটে কোথাও তিনের অধিক, কোথাও দুয়ের অধিক নমিনেশন দিয়ে এই যে নির্বাচন বাণিজ্যটা করে সেই টাকাগুলো কোথায় রাখল? এই খোঁজটা করলে সুইস ব্যাংকের হিসাব তিনি পেয়ে যাবেন। খবর বিডিনিউজের
ঋণ খেলাপি বিষয়ে এক সাংসদের বক্তবের পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর অবৈধভাবে মিলিটারি ডিক্টেটররা ক্ষমতা দখল করে দল গঠন করতে গিয়ে কিছু লোককে অবৈধভাবে সুযোগ-সুবিধা পাইয়ে দিতে ব্যাংক থেকে অকাতরে ঋণ দেওয়া এবং ঋণ শোধ না করার সংস্কৃতি চালু করে।
১৯৭৫-এর পর যে মিলিটারি ডিক্টেটর জিয়া ক্ষমতায় এসেছিল, তখন থেকেই ঋণ খেলাপির কালচার শুরু হয়েছে। এরপর তো একের পর এক একইভাবে ক্ষমতা দখল। কাজেই সেখান থেকে বের করে আনা অত্যন্ত কষ্টকর।
খেলাপি কমানোর জন্য ইতোমধ্যে ব্যবস্থা নিয়েছেন বলে দাবি করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, খেলাপি ঋণ হ্রাসের জন্য অর্থমন্ত্রী যেই উদ্যোগের ঘোষণা দিয়েছেন, তা অত্যন্ত সময় উপযোগী। পাশাপাশি আমার সুপারিশ থাকবে যেন ব্যাংক ঋণের উপর সুদের হার এক অংকের মধ্যে রাখা হয় অর্থাৎ সিঙ্গেল ডিজিট। এটি করা গেলে শিল্প ও ব্যবসা খাতকে প্রতিযোগিতা সক্ষম করে গড়ে তোলা সক্ষম হবে। কারণ উচ্চহারে সুদ থাকলে কোনো ইন্ডাস্ট্রি বিকশিত হবে না।
প্রস্তাবিত বাজেটে আবাসন ও অর্থনৈতিক অঞ্চলে শিল্প বিনিয়োগে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। অর্থবিল নিয়ে জনমত যাচাইয়ের প্রস্তাবের আলোচনায় এক সাংসদের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে সংসদ নেতা বলেন, অনেক সময় মানুষের কিছু অপ্রদর্শিত অর্থ আসে। কিন্তু এই অপ্রদর্শিত অর্থটা কোনও কাজে লাগানো যায় না। এখন তাকে যদি সুযোগ দেওয়া হয়, যেন এই টাকা মূলধারায় চলে আসে। সে কারণেই এই সুযোগটা দেওয়া হচ্ছে। তবে এটা ঠিক যদি দেখি এখানে দুর্নীতি বাড়ছে, সেটা আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারব। দুর্নীতিকে আমরা কখনো প্রশ্রয় দেব না। দুর্নীতি, সন্ত্রাস, মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে।
বাংলাদেশকে কল্যাণ রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কল্যাণ রাষ্ট্রই যদি না হবে, তাহলে আজকের বাংলাদেশ দারিদ্র্যমুক্ত হয় না, আজকে বাংলাদেশের মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছায় না, শিক্ষার হার বৃদ্ধি পায় না, মানুষের জীবন-মান উন্নত হয় না।
বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় শেখ হাসিনা জানান, আগামী অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ২০ শতাংশ ধরা হলেও ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশ পেরিয়ে যাবে।
আগামী অর্থবছরের বাজেট এমনভাবে করা হয়েছে যা প্রবৃদ্ধি দুই অংকের ঘরে নিয়ে যেতে ভূমিকা রাখবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, দেশের প্রত্যেক জনগণ এই বাজেট থেকে উপকৃত হবে।
সাধারণ আলোচনায় পুঁজিবাজারের স্টক লভ্যাংশ এবং রিজার্ভের ওপর অতিরিক্ত করারোপসহ বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে বাজেটে যে প্রস্তাব আনা হয়েছিল, তা পরিবর্তনের সুপারিশ করেছেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, একটি সমৃদ্ধ অর্থনীতির জন্য প্রয়োজন বিকশিত একটি পুঁজিবাজার। এই বাজেটে পুঁজিবাজারের জন্য অনেক প্রণোদনা থাকছে। এই সব প্রস্তাব বাস্তবায়নের মাধ্যমে পুঁজিবাজারের সম্প্রসারণ হবে। এভাবে পুঁজিবাজার তার কাক্সিক্ষত ভূমিকা পালনে সক্ষম হবে বলে আমি আশা করি।
সরকার তারুণ্যের শক্তিকে কাজে লাগাতে চায় মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাজেটে স্টার্টআপদের (তরুণ নতুন উদ্যোক্তা) জন্য ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা অত্যন্ত সময়োপযোগী।
পাশাপাশি প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাঠানো অর্থের উপর আগামী অর্থবছর থেকে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনার প্রস্তাবের ফলে রেমিটেন্স পাঠাতে ব্যয় কমবে। এর ফলে বৈধ পথে অর্থ পাঠাতে প্রবাসীরা উৎসাহিত হবেন বলে আশা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার ১০ বছরে যে ‘অভূতপূর্ব উন্নতি’ করেছে তা দেশে-বিদেশে প্রশংসিত হচ্ছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা আমাদের একটি বড় সাফল্য।
উন্নয়ন বাজেটে বৈদেশিক নির্ভরশীলতা কমানোর তথ্য জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন করতে পেরেছি বলেই বাজেটে বৈদেশিক অনুদান মাত্র দশমিক ৮ শতাংশ। আমরা পরনির্ভরশীলতা কমিয়ে আত্মনির্ভরশীল হয়েছি।
রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক ও বস্ত্র শিল্পের জন্য বড় ধরনের কর অব্যাহতির যে সুযোগ চলতি অর্থবছরে শেষ হওয়ার কথা ছিল, তা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব রাখা হয়েছে বাজেটে। এছাড়া বর্তমানে তৈরি পোশাকের চারটি খাত ৪ শতাংশ রপ্তানি প্রণোদনার পাশাপাশি আগামী অর্থবছর থেকে তৈরি পোশাকের বাকি সব খাতের জন্য এক শতাংশ রপ্তানি প্রণোদনা প্রস্তাব করা হয়েছে।
পোশাক খাত নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তৈরি পোশাক দ্রæত বিকাশমান ও সব থেকে সম্ভাবনাময় খাত। তৈরি পোশাকের সব খাতের রপ্তানির ক্ষেত্রে এক শতাংশ প্রণোদনার যে প্রস্তাব করা হয়েছে তা ‘যুগান্তকারী পদক্ষেপ’। এতে তৈরি পোশাক খাত আরও বিকশিত হবে। কর্মসংস্থানে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
তিনি বলেন, অর্থনৈতিক সব ক্ষেত্রে দূরদর্শী সময়োপযোগী পদক্ষেপের কারণে সামগ্রিক অর্থনীতি স্থিতিশীল, বাজেট ঘাটতি সহনশীল, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পর্যাপ্ত এবং মুদ্রা বিনিময় হার বাণিজ্য সহায়ক। বাজেট ঘাতটি সব সময় ৫ শতাংশ ধরে রাখছি।

বাজেটে যেসব পরিবর্তনের
সুপারিশ প্রধানমন্ত্রীর
সুদের হার এক অঙ্কে নামিয়ে আনার নির্দেশ

ব্যাংক ঋণের সুদের হার এক অঙ্কে (সিঙ্গেল ডিজিট) নামিয়ে আনতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল শনিবার সংসদে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ নির্দেশ দেন।
খেলাপি ঋণ কমাতে অর্থমন্ত্রীর উদ্যোগকে সময়োপযোগী আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উচ্চ হারে সুদ থাকলে শিল্প বিকশিত হবে না। এ জন্য আমার সুপারিশ থাকবে যেন ব্যাংক ঋণের ওপর সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে রাখতে যথার্থ পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এটি করা হলে দেশের শিল্প ও ব্যবসা খাতকে সক্ষম করে গড়ে তোলা সম্ভব হবে। এজন্য আমাদের এই ব্যবস্থা নিতে হবে।
পুঁজিবাজারের বিষয়ে তিনি বলেন, পুঁজিবাজারের ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের স্বার্থরক্ষায় আমরা কোম্পানিগুলোকে ক্যাশ ডিভিডেন্ডে উৎসাহিত করার জন্য স্টক ডিভিডেন্ডের ওপর ১৫ শতাংশ হারে কর আরোপের প্রস্তাব করেছিলাম। এ বিষয়ে ব্যবসায়ী সমাজের কেউ কেউ আপত্তি জানিয়েছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে জানানো হয় যে, বাংলাদেশ ব্যাংকের চাহিদা অনুযায়ী পরিশোধিত মূলধন বাড়ানোর জন্য ব্যাংকগুলো নগদ লভ্যাংশ দিতে পারে না। ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের এমন মন্তব্যের পাশাপাশি পুঁজিবাজারে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ আমাদের ভাবতে হবে। কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করে বিনিয়োগকারীও নগদ লভ্যাংশ প্রত্যাশা করেন। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে আমি প্রস্তাব করছি যে, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোনও কোম্পানি যে পরিমাণ স্টক লভ্যাংশ ঘোষণা করবে কমপক্ষে তার সমপরিমাণ নগদ লভ্যাংশ দিতে হবে। যদি কোম্পানির ঘোষিত স্টক লভ্যাংশের পরিমাণ নগদ লভ্যাংশের চেয়ে বেশি হয়, তাহলে স্টক লভ্যাংশে ওপর ১০ শতাংশ হারে কর দিতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, নগদ লভ্যাংশ উৎসাহিত করায় আমরা আরও প্রস্তাব করেছিলাম যে, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির পরিশোধিত মূলধনের ৫০ শতাংশের বেশি রিটেইন আর্নিং, রিজার্ভ থাকলে অতিরিক্ত রিটেইন আর্নিং, রিজার্ভের ওপর ১৫ শতাংশ হারে কর আরোপ করা হবে। এ বিষয়েও ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা কেউ কেউ আপত্তি করেছেন। সেই প্রেক্ষাপটে এই ধারাটির আংশিক সংশোধনপূর্বক আমি প্রস্তাব করছি যে, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোনও কোম্পানি কোনও অর্থবছরে কর-পরবর্তী নিট লাভের সর্বোচ্চ ৭০ শতাংশ রিটেইন আর্নিং, ফান্ড, রিজার্ভে স্থানান্তর করতে পারবে। অর্থাৎ কমপক্ষে ৩০ শতাংশ ডিভিডেন্ট, স্টক ও ক্যাশ দিতে হবে। তবে কোনও কোম্পানি এমনটা করতে ব্যর্থ হয় তাহলে প্রতিবছরে রিটেইন আর্নিং, ফান্ড, রিজার্ভের মোট অর্থের ওপর ১০ শতাংশ হারে কর আরোপ করা হবে। উপরোক্ত বিষয়গুলো বিচার-বিশ্লেষণ করে পুঁজিবাজার-সংক্রান্ত আয়কর আইনের প্রস্তাবিত ধারাগুলো আমরা বিবেচনা করবো।
মূসকের ক্ষেত্রেও বেশকিছু পরিবর্তনের সুপারিশ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় পর্যায়ে একাধিক মূসক হার প্রবর্তনের প্রস্তাব করা হয়েছে। ১৫ শতাংশের নিম্নহারের উপকরণ কর রেয়াত দেওয়ার সুযোগ না থাকায় ব্যবসায়ীরা হ্রাসকৃত হারের পরিবর্তে উপকরণ কর গ্রহণ করে ১৫ শতাংশ হারে কর দেওয়ার সুযোগ সৃষ্টির দাবি করেছেন। হ্রাসকৃত হারের পাশাপাশি কেউ চাইলে যেন ১৫ শতাংশ কর দিয়ে রেয়াত পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারে, আইনে সেই বিধান আনার প্রস্তাব করছি। দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করে তাঁতশিল্পে ব্যবহৃত সুতাশিল্পের ওপর ৫ শতাংশ মূসকের পরিবর্তে প্রতিকেজি সুতায় ৪ টাকা হারে সুনির্দিষ্ট করের প্রস্তাব করছি।
তিনি বলেন, দেশীয় শিল্পের প্রতিরক্ষণ, প্রণোদনা দিতে প্রস্তাবিত বাজেটে বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে শুল্কহার হ্রাস-বৃদ্ধি করা হয়েছে। তবে সেক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে এর ফলে দেশীয় কাগজ ও গ্যাস উৎপাদনকারী শিল্পসহ অন্যান্য শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। দেশীয় মুদ্রণ শিল্পের প্রণোদনা দেওয়া ও বন্ড ব্যবস্থার অপব্যবহার ঠেকাতে দেশে উৎপন্ন হয় না এমন পেপারগুলোর শুল্কহার যৌক্তিক করা হবে। খবর বাংলা ট্রিবিউনের
আর্থিক খাতে সার্বিক শৃঙ্খলা আনতে বাজেটে বেশকিছু সুনির্দিষ্ট কার্যক্রমের কথা বলা হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অর্থনৈতিক সব ক্ষেত্রে দূরদর্শী সময়োপযোগী পদক্ষেপের কারণে সামগ্রিক অর্থনীতি স্থিতিশীল, বাজেট ঘাটতি সহনশীল। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পর্যাপ্ত, মুদ্রা বিনিময় হার বাণিজ্য সহায়ক। বাজেট ঘাটতি সবসময় ৫ শতাংশ ধরে রাখছি। কখনও এর থেকে কমও হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান সরকার ১০ বছরে যে অভূতপূর্ব উন্নতি করছে তা দেশে-বিদেশে প্রশংসিত হচ্ছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা আমাদের একটি বড় সাফল্য। আমরা দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন করতে পেরেছি বলেই বাজেটে বৈদেশিক অনুদান মাত্র দশমিক ৮ শতাংশ। আমরা পরনির্ভরশীলতা কমিয়ে আত্মনির্ভরশীল হয়েছি, আত্মমর্যাদাশীল হয়েছি। উন্নয়নটা আমরা প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারছি। দেশের প্রত্যেক মানুষ এই বাজেট থেকে উপকৃত হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, যুবকদের কর্মসংস্থানের জন্য ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ অত্যন্ত সময়োপযোগী। প্রবাসী বাংলাদেশিদের অর্থ পাঠাতে ২ শতাংশ প্রণোদনার প্রস্তাবে রেমিট্যান্স পাঠানোর বর্ধিত ব্যয় লাঘব হবে। প্রবাসী কর্মীরা বৈধ পথে অর্থ পাঠাতে উৎসাহিত হবেন। প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিমা সুবিধার আওতায় আনার পরিকল্পনাও আমাদের রয়েছে।
তিনি বলেন, তৈরি পোশাক দ্রæত বিকাশমান ও সব থেকে সম্ভাবনাময় খাত। তৈরি পোশাক রফতানির ক্ষেত্রে অর্থবছরে ১ শতাংশ প্রণোদনার যে প্রস্তাব করা হয়েছে তা যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এতে তৈরি পোশাক খাত আরও বিকশিত হবে। কর্মসংস্থানে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
দুর্নীতিকে দেশের জন্য একটি বড় সমস্যা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের একটি সমস্যা দুর্নীতি। অবৈধভাবে যারা ক্ষমতায় আসে তারা নিজেরাও দুর্নীতির আশ্রয় নেয়। সমাজে দুর্নীতিটাকে তারা ব্যাধির মতো ছড়িয়ে দেয়। এটা মানুষের একটি মানসিক রোগে পরিণত হয়ে যায়। দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমার নীতি হচ্ছে ‘জিরো টলারেন্স’। দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গড়তে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। এলক্ষ্যে আমরা একগুচ্ছ সংস্কার প্রস্তাব বাজেটে উপস্থাপন করেছি। ব্যবসা-বাণিজ্য সহজীকরণ, বিনিয়োগ সহজীকরণে আমরা ওএসএফ চালু করেছি। ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কাজ এগিয়ে চলছে। দেশ-বিদেশ থেকে প্রচুর বিনিয়োগের প্রস্তাব পাচ্ছি। এগুলো কর্মসংস্থানে ব্যাপক অবদান রাখবে।
আগামী ৫ বছরের পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, আমরা আগামী ২০২৩-২৪ সালে প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশে উন্নীতকরণ, মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৭৫০ ডলার, রফতানি ৭২ বিলিয়ন ডলার, বিদ্যুৎ সরবরাহ ২৮ হাজার মেগাওয়াট ও অতি দারিদ্র্যের হার ৪ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য স্থির করেছি। এবারের বাজেট এসব লক্ষ্য অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
তিনি বলেন, সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা আরও সুদৃঢ় হয়েছে। তার প্রমাণ গত ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন। আস্থা রেখেছে বলেই আমাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেবল শিক্ষা মন্ত্রণালয় নয়, ২৯টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ বিষয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করে। এসব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের অধীনে বাজেটে ৮৭ হাজার ৬২০ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যা মোট বরাদ্দের ১৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ।