বিএনপির পুনঃনির্বাচনের দাবি বাচ্চাসুলভ আবদার

35

তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, প্রবাসীরা দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি। তাদের পরিশ্রমের টাকায় দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এই প্রবাসীরাই অর্থনীতিতে রক্ত সঞ্চালন করে যাচ্ছেন। দেশের উন্নয়নে তাদের অবদান অপরিসীম।
তথ্যমন্ত্রী গতকাল শনিবার সকালে আবুধাবী বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি ইফতেখার হোসেন বাবুলের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
ইফতেখার হোসেন বাবুল সংযুক্ত আরব আমিরাতের ইয়ার অব শেখ জায়েদ দিবসে লিডিং এক্সাম্পল এওয়ার্ডে ভূষিত হওয়ায় চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ মিলনায়তনে এ সংবর্ধনার আয়োজন করে প্রত্যয়ী, প্রবাসী কল্যাণ সংস্থা।
তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আমরা বাংলাদেশিরা মেধাবী। সারাবিশ্বে বাংলাদেশিরা মেধার স্বাক্ষর রাখছেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এক কোটিরও বেশি প্রবাসী রয়েছেন। তারা শ্রম আর মেধার স্বাক্ষর রাখতে পারছেন বলেই সেখানে সাফল্যের সাথে থাকতে পারছেন। সিকাগোর এক সময়কার সবোচ্চ সিয়ার্স টাওয়ারের স্থপতিও বাঙালি। মধ্যপ্রাচ্যের সুরম্য অট্টালিকা নির্মাণে প্রবাসী বাঙালিদের ভূমিকা রয়েছে। মরুভূমিকে সুন্দর শহরে পরিণত করেছেন বাঙালিরাই।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, শেখ হাসিনার সরকার প্রবাসীদের কল্যাণে অনেক কিছুই করেছে। ৩টি এনআরবি ব্যাংক দেয়া হয়েছে। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক করা হয়েছে। যারা রেমিট্যান্স বেশি পাঠাচ্ছেন তাদেরকে সম্মানিত করা হচ্ছে। সরকারি প্লট ও ফ্ল্যাট বরাদ্দ দিলে সেখানে প্রবাসীদের জন্য বিশেষ কোটা ও প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে। প্রবাসীরা যাতে প্রবাসে থেকে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন সে ব্যাপারে সরকার এবং নির্বাচন কমিশন কাজ করছে। তিনি বলেন, প্রবাসীরা একেক জন বিদেশে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে কাজ করছেন। তারা আচার আচরণের মাধ্যমে বিদেশেও দেশের সম্মান তুলে ধরতে পারেন। এ ব্যাপারে প্রবাসীরা সচেতন। প্রবাসে গুটিকয়েক মানুষের জন্য যেনো দেশের সম্মান নষ্ট না হয় সে ব্যাপারে প্রবাসীদের সচেতন থাকার আহবান জানান ড. হাছান মাহমুদ।
তিনি বলেন, কয়েক বছর আগে সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিলেও বাংলাদেশে তার প্রভাব পড়েনি। তার কারণ প্রবাসীরা। তারা নিয়মিতই রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। তাই অর্থনীতির চাকা সচল ছিল।
তিনি বলেন, সংবর্ধিত ইফতেখার হোসেন বাবুল একজন জনপ্রিয় নেতা। তিনি প্রবাসে সকলের সুখদুঃখে এগিয়ে আসেন। সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চালান। বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ প্রচার করছেন। তার পাওয়া এওয়ার্ড দেশের সম্মান। তার সম্মানে দেশ গর্বিত। তার কাছ থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে।
বিএনপির পুনঃনির্বাচনের দাবিকে বাচ্চাসুলভ আবদার বলে মন্তব্য করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, কোনো ফুটবল ম্যাচে ১০ গোল খেয়ে হেরে যাওয়ার পর কেউ যদি আবার খেলার আবদার করে তা কেবল ছোট্ট শিশুদের কান্নাকাটি ছাড়া আর কিছুই নয়। ৫ বছর পর আবার নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়ার জন্য বিএনপির প্রতি আহবান জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর সরকার ৫ বছর সফলভাবেই দেশ পরিচালনা করেছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনের পরও আগামী ৫ বছর সরকার দেশ পরিচালনা করবে। ৫ বছর পর আবার নির্বাচন হবে। ইতিবাচক রাজনীতি করার মাধ্যমে ৫ বছর পর আবার নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে বিএনপিকে নেতিবাচক রাজনীতি পরিহার করার আহবান জানান তিনি।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনে ও সংলাপে অংশগ্রহণকারি রাজনৈতিক দল এবং জোটকে চা-চক্রে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। অত্যন্ত দুঃখজনক এই আমন্ত্রণে বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্ট সাড়া দেয়নি। তাদের সাড়া না দেওয়া স্বাভাবিক বলে মন্তব্য করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, যারা নেতিবাচক রাজনীতি করে তাদের এই চা-চক্রে না যাওয়া স্বাভাবিক। তারা মানুষকে জিম্মি করে রাজনীতি করে, রাজনীতির নামে তারা মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছে। প্রধানমন্ত্রী তাদের প্রতি অনেক বদান্যতা দেখিয়েছেন। যে দলের নেত্রী নিজের জন্মের তারিখ বদলে দিয়ে ১৫ আগস্ট হত্যাকান্ডকে উপহাস করে, হত্যাকারীদের উৎসাহিত করার জন্য কেক কাটেন তারা প্রধানমন্ত্রীর চা-চক্রে যাবেন না এটাই খুব স্বাভাবিক। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ছেলের মৃত্যুর পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেখতে গেলে তাঁকে ১০ মিনিট দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছিল। এটা কোন সৌজন্যতা।
সংগঠনের সভাপতি এম আবদুস সালামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এমএ সালাম বলেন, প্রবাসীরা পরিশ্রম করে টাকা কামিয়ে দেশে পাঠান। সেই টাকা দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে। তাদের টাকায় দেশ এগিয়ে যাচ্ছে।
সংবর্ধিত অতিথি ইফতেখার হোসেন বাবুল বলেন, এই এওয়ার্ড আমার নয়, গোটা দেশের। আমরা দেশের সুনাম রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছি। দেশ স্বাধীন হয়েছে বলেই এক কোটি মানুষ বিদেশে আছেন। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে আমরা সহায়তা করছি। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করছি।
অনুষ্ঠানে প্রবাসীরা তাদের বক্তব্যে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বিমানবন্দরে প্রবাসীদের হয়রানি ও অপমান করা হয়। তাতে আমাদের কষ্ট লাগে। শ্রমিকের মত ব্যবহার করে। লাগেজ খুলে মালপত্র নষ্ট করে ফেলে। বৈধ জিনিস নিতে না দিলেও হেরোইন, ইয়াবা নিতে বাধা দেয় না দুর্নীতিবাজরা। এসব বন্ধ হওয়া দরকার।
সভায় রাঙ্গুনিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খলিলুর রহমান, রাঙ্গুনিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী শাহ, জেলা পরিষদের সদস্য আখতার উদ্দিন মাহমুদ পারভেজ, আবুধাবী বঙ্গবন্ধু পরিষদ সাধারণ সম্পাদক নাছির তালুুকদার, ওমান বঙ্গবন্ধু পরিষদ সাধারণ সম্পাদক মো, জসিম উদ্দিন, মোহাম্মদ জমির হোসাইন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।