বিএনপির এমপিদের কটাক্ষ করলেন গয়েশ্বর

23

খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য বিএনপির সংসদ সদস্যদের সাম্প্রতিক তৎপরতায় অসন্তোষ জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। বিএনপি চেয়ারপারসনের মুক্তি দাবিতে শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা সভায় তিনি বলেছেন, খালেদা জিয়া আপস করে মুক্তি নেবেন না।
দুর্নীতির দুই মামলায় দÐ নিয়ে কারাবন্দি খালেদা জিয়াকে দেখে এসে বিএনপির সাত সংসদ সদস্য তার জামিনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন। তারা এটাও বলেন যে মুক্তি পেলে খালেদা জিয়া বিদেশে যাবেন। খবর বিডিনিউজের
ভোটের ফল প্রত্যাখ্যানের পর সংসদে যাওয়ার বিরোধিতাকারী গয়েশ্বর দলের ওই সংসদ সদস্যদের তৎপরতার প্রকাশ্য সমালোচনা করেন প্রেস ক্লাবে শিশু কিশোর মেলা আয়োজিত ওই সভায়।
তিনি বলেন, “আমরা অনেকে গুজবের দিকে ছুটছি। আবার অতি দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আমাদের কিছু কিছু নেতৃবৃন্দ ইতিমধ্যে ম্যাডামের সাথে হাসপাতালে দেখা করছেন। উনাদেরকে নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলে। উনারা যে খুব বেশি আন্তরিক ম্যাডামের মুক্তির জন্য, সেটা আমাদের সামনে এবং জনগণের সামনে আশ্বস্ত করার জন্য একটা জিনিস তারা ভালো করছেন। সেটা হল- ম্যাডামের যে আপসহী উপাধিটা আছে- এটা খারিজ করতে গিয়ে ধরা খাইছেন।
গয়েশ্বর বলেন, “আমি মনে করি গণতন্ত্রের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আপসহীন। তাকে অনুকম্পা করতে পারে, এমন যোগ্যতা বাংলাদেশে কারও আছে বলে মনে হয় না।” কারা হেফাজতে বিএসএমএমইউতে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা দুর্বল হলেও তিনি মানসিকভাবে দৃঢ় রয়েছেন বলে মনে করেন গয়েশ্বর।
তিনি বলেন, শারীরিকভাবে দুর্বল থাকলেও তিনি মানসিকভাবে সবল এবং তিনি মাথা নত করার ব্যক্তি নন। কারণ খালেদা জিয়ার একটি নাম আছে মা-বাবার দেওয়া ‘পুতুল’। এটি মাটির পুতুল নয় যে আছাড় দিলাম। এই পুতুল প্রতিবাদ করতে জানে, এই পুতুল কথা বলতে জানে। এই পুতুলের কথা বন্ধ করতে পারবে না।”
দলীয় নেত্রীর মুক্তিতে আন্দোলনের উপরই জোর দিচ্ছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য। তিনি বলেন, “আজকে পত্রিকায় ওবায়দুল কাদের বা অন্যান্যদের কথা দেখলাম; সেই কথাগুলোতে বোঝা যায়, আদালত কতটুকু নিয়ন্ত্রিত। প্রতিদিন কত মামলার রায় হয়, খালেদা জিয়ার মামলার রায় হয় না, বিব্রতবোধ করেন। আমরা চেষ্টা করব, গণতন্ত্রের নেত্রীর মুক্তি আন্দোলন আমরা করব এবং করছি যতটুকুই করছি। আরও যতটুকু যৌক্তিক করা দরকার, সেটা করব। সেই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বেগম জিয়া মুক্তি লাভ করবেন।”
ক্যাসিনো বন্ধে অভিযান ধরে গয়েশ্বর রায় বলেন, অপকর্ম ঢাকতে সরকার ‘বানর নাচের খেলা’ দেখাচ্ছে। তিনি বলেন, “আগে বায়তুল মোকাররমের আশে-পাশে বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে দেখতাম বানর নাচায়। ওই বানরটা নাচায় লোক সমবেত করতে। তারপরে সব ভেজাল ওষুধ, এটা-সেটা বিক্রি করে। বর্তমান সরকার এমন একটা বানর নাচানোর ব্যবস্থা করেছে, যাতে মানুষ সেদিকে আকৃষ্ট থাকে, আর উনারা যে অপকর্ম করছে সেই অপকর্ম যেন নির্দ্বিধায় করতে পারে। এর বাইরে আমার অন্য কিছু মনে হয় না।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের অভিযান নিয়ে প্রশ্ন তুলে গয়েশ্বর বলেন, ছোট-খাটো দুই-একটা টোকাই-গল্প-ইতিহাস-নাটকের মতো সৃষ্টি করে কিছু সময়ের জন্য চমক সৃষ্টি করা যায়, কিন্তু প্রকৃত অর্থে দুর্নীতির হাত থেকে দেশকে রক্ষা করা যায় না এবং দেশ মুক্ত করা যায় না।”
তিনি বলেন, “আজকের পত্রিকায় দেখলাম, ৭৬ হাজার কোটিপতি। ৫ বছর আগে না কি ১৯ হাজার ছিল, এখন ৭৬ হাজার কোটিপতি। কার কল্যাণে হইছে? এই প্রধানমন্ত্রীর কল্যাণে। আর কত কোটি টাকা যে বিদেশে গেছে, তাদের যদি হিসাব হয়, তাহলে কোটিপতির সংখ্যা কত? এই কোটিপতিদের যদি তালিকা প্রকাশ করা হয়, দেখা যাবে আওয়ামী লীগ করে না এমন কোনো কোটিপতি হয় নাই।”
আলোচনা সভায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, ছড়াকার আবু সালেহ, জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক জোটের মহাসচিব রফিকুল ইসলাম, শিশু-কিশোর মেলার সভাপতি জাহাঙ্গীর শিকদার বক্তব্য রাখেন।