বায়েজিদ সংযোগ সড়কে কাটা পাহাড়ের কান্না

188

ছয় কিলোমিটার সড়ক তৈরি করতে কাটা হয়েছে এক ডজনেরও বেশি পাহাড়। পরিবেশ অধিদপ্তরের বার বার জরিমানার পরও ফৌজদারহাট-বায়েজিদ সংযোগ সড়ক তৈরি করে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-সিডিএ। মাঝ বরাবর কাটা পাহাড়ের কান্না শুনছে না কেউ। খাড়াভাবে কাটা পাহাড়গুলো থেকে ধসে পড়ছে মাটি। নিয়মিত পাহাড়ধসের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে সড়কটি।
নগরের যানজট ও যাতায়াতে সময় কমাতে এবং মূল শহরে প্রবেশ না করেই গাড়ি উত্তর ও দক্ষিণ চট্টগ্রামে যাতায়াতের উদ্দেশ্যে সড়কটি নির্মাণ করা হয়। এক ডজনেরও বেশি পাহাড় কাটা পড়ে স্বপ্নের এ সড়ক নির্মাণে। অনানুষ্ঠানিকভাবে চালু হওয়া সড়কটির এখনো অনেক কাজ বাকি। এরই মধ্যে সড়কের বিভিন্ন জায়গায় পাহাড়ধস দেখা দিয়েছে। গত একমাস ধরে সড়কটির বেশ কয়েকটি পয়েন্টে পাহাড়ের মাটি ধসে পড়েছে। বাধ্য হয়ে সিডিএ এসব জায়গায় রাস্তার একপাশ বন্ধ রেখেছে। পাহাড়ধস রোধে কোনো ব্যবস্থা নেই সিডিএ’র। এতে করে আরো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে সড়কটি।
বাইপাস সড়কে যাতায়াতকারী নাজমূল হাসান জানান, পাহাড়ের মাঝে সড়কটি খুবই দৃষ্টিনন্দন দেখায়। প্রচুর মানুষ বিকালের দিকে এখানে বেড়াতে আসেন। কিন্তু খাড়াভাবে পাহাড় কাটায় পুরো এলাকাটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। ন্যাড়া করে রাখা পাহাড়ের দিকে তাকাতেই ভয় লাগে। যে কোনো সময় পাহাড়ের মাটি ধসে পড়তে পারে। কয়েকটি জায়গায় ইতিমধ্যে পাহাড় ধসে পড়ায় পথচারীদের মাঝে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। ভারী বৃষ্টিপাত হলে বড় ধরনের ধস দেখা দিতে পারে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুন্ডের ফৌজদারহাট টোল রোডের মুখ থেকে বায়েজিদ বোস্তামি পর্যন্ত সংযোগ সড়কটি নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয় ১৯৯৭ সালে। ওই সময়ের ৩৩ কোটি ৮১ লাখ টাকার প্রকল্পটি শেষতক ৩২০ কোটিতে গিয়ে ঠেকেছে। চট্টগ্রাম বাইপাস সড়ক নামের ওই প্রকল্পের জন্য ৯২০ কাঠা জমি অধিগ্রহণ করা হয়। ২০১৯ সালের ১২ মে পরিবেশ অধিদফতর প্রকল্পটির জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর ছাড়পত্র দেয়। প্রকল্পের আওতায় একটি রেলওয়ে ওভারব্রিজসহ ছয়টি ব্রিজ এবং কয়েকটি কালভার্ট নির্মাণ করা হয়। প্রকল্পের ৬ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণে কাটা হয় এক ডজনেরও বেশি পাহাড়। কথা ছিলো পাহাড় ঘেঁষে সড়কটি নির্মাণ করা হবে। কিন্তু কয়েকটি পাহাড়ের মাঝ বরাবর কেটে করা হয়েছে সড়কটি। পাহাড় কাটার জন্য সিডিএকে একাধিকবার জরিমানা করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। সর্বশেষ পাহাড়কে ৪৫ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে কেটে গাছ লাগিয়ে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়ার শর্তও দেয় পরিবেশ অধিদপ্তর। কোনও নির্দেশনা মানেনি সিডিএ। খাড়াভাবে ৯০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে পাহাড় কেটেছে সিডিএ। যার কারণে সোজা দাঁড়িয়ে থাকা পাহাড় আরো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
এ ব্যাপারে জানতে সিডিএ চেয়ারম্যান এম জহিরুল আলম দোভাষ এবং বাইপাস সড়কের প্রকল্প পরিচালক ও সিডিএ’র নির্বাহী প্রকৌশলী রাজীব দাশকে একাধিবার ফোন করা হলেও কেউ সাড়া দেননি।
বায়েজিদ বাইপাস সড়ক তৈরিতে পাহাড় কাটাসহ নানা অভিযোগ থাকলেও এটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সড়কে রূপ নিয়েছে। একেখান মোড় ও জাকির হোসেন রোডের যানজট পরিহার করে সহজে বাইপাস সড়ক ব্যবহার করে মূল শহরে প্রবেশ করা যাচ্ছে। একইসাথে খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি অঞ্চলের গাড়িগুলো যাতায়াতে এই সড়ক ব্যবহারে সুবিধা পাচ্ছে। তাছাড়া যানজট এড়াতে দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারগামী গাড়িও এই সড়কটি ব্যবহার করছে। আবার প্রাকৃতিক পরিবেশ ও দৃষ্টিনন্দন হওয়াতে প্রচুর মানুষের আনাগোনা বাড়ছে সড়কটিতে। অনেকটা বিনোদন স্পট হিসাবেও রূপ পেতে শুরু করেছিল সড়কটি। তবে পাহাড়ধসের কারণে এখন ভয়কর রূপ নিয়েছে এই সড়কটি।