বাড়ছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বড় ঝুঁকিতে বাংলাদেশ

121

টিকে থাকার ক্ষেত্রে জলবায়ু পরিবর্তন সবচেয়ে বড় হুমকি বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, এর কারণে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হলো জাপান, চীন, বাংলাদেশ ও ভারত। সোমবার থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে আসিয়ান সম্মেলনে যোগ দিয়ে এসব কথা বলেন তিনি।
সুনির্দিষ্ট সময় পর পর প্রাকৃতিক ধারাবাহিকতায় বদলে যায় জলবায়ু। মানুষ সৃষ্ট কারণেই এই স্বাভাবিক বদলের ধারাবাহিকতা ক্ষুণ্ন হয়েছে,বিশ্ব বহুদিন থেকে এক আকস্মিক পরিবর্তনের মুখোমুখি। বিজ্ঞানীরা প্রমাণ পেয়েছেন, শিল্পবিপ্লব পরবর্তী যুগে উন্নত দেশগুলোর মাত্রাতিরিক্তি জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বৈশ্বিক উষ্ণতার মাত্রাকে ভয়াবহ পর্যায়ে নিয়ে গেছে। উষ্ণায়নের কারণে গলছে হিমবাহের বরফ, উত্তপ্ত হচ্ছে সমুদ্র, বাড়ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক ঋতুচক্র। দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষি, স্থানচ্যুত হচ্ছে মান্ষু। অভিবাসী কিংবা শরণার্থীতে রূপান্তরিত হচ্ছে তারা। এরইমধ্যে বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, জলবায়ু ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান একেবারেই সামনের কাতারে। খবর বাংলা ট্রিবিউনের
অক্টোবরের শেষে বিজ্ঞান সাময়িকী ন্যাচার কমিউনিকেশনস-এ প্রকাশিত নতুন এক গবেষণায় বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে যে পরিমাণ মানুষ ঝুঁকিতে রয়েছে বলে এতোদিন আশঙ্কা করা হতো বাস্তবে এ সংখ্যা তার প্রায় চার গুণ বেশি। ওই গবেষণায় বলা হয়, ধারণার চেয়েও দ্রুত গতিতে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়তে থাকায় ২০৫০ সাল নাগাদ প্রায় ৩০ কোটি মানুষ বন্যা কবলিত হবে। সোমবার জাতিসংঘ মহাসচিব ওই গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, এই মুহূর্তে যে গতিতে জলবায়ু পরিবর্তিত হচ্ছে তার চেয়ে কম গতিতে তা মোকাবিলায় ব্যবস্থা নিচ্ছে বিভিন্ন দেশের সরকার। জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকানো না গেলে বিশ্বের টিকে থাকা হুমকির মুখে পড়বে বলে সতর্ক করেন তিনি। গুতেরেস বলেন, নাটকীয়ভাবে, সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হলো দক্ষিণ এশিয়ায়, জাপানে, চীনে, বাংলাদেশে, ভারতে।
জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, সরকার, ব্যবসায়ী সম্প্রদায়, নাগরিক সমাজ ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সচেতনতা বৃদ্ধিতে জাতিসংঘ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি বলেন, বিজ্ঞানীদের মত অনুযায়ী এই শতাব্দীর শেষ পর্যন্ত গত তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে ধরে রাখা সম্ভব করতে হলে ২০৫০ সাল নাগাদ আমাদের কার্বন নিরপেক্ষ হতে হবে আর পরবর্তী দশকের মধ্যে নিঃসরণ কমিয়ে আনতে হবে ৪৫ শতাংশ। এসব লক্ষ্য অর্জন করতে ব্যাপক রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতির প্রয়োজন বলে উল্লেখ করে জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের জীবাশ্ম জ্বালানিতে ভর্তুকি বন্ধ করার দরকার। ভবিষ্যতে কয়লা ভিত্তিক নতুন পাওয়ার প্লান্ট বন্ধ করার দরকার’।
এরআগে জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের নতুন প্রতিবেদনে উঠে এসেছে জলবায়ু ঝুঁকিতে থাকা বাংলাদেশি শিশুদের কথা। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবজনিত কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ১ কোটি ৯৪ লাখ শিশুর মধ্যে ১ কোটি ২০ লাখ শিশু নদী ভাঙনের এলাকা কিংবা এর কাছাকাছি থাকে। ৪৫ লাখ শিশুর বসবাস উপকূলীয় এলাকায়, সেখানে ঘূর্ণিঝড়ের হুমকিতে থাকতে হয় তাদেরকে। তাছাড়া খরার ঝুঁকিতে রয়েছে আরও ৩০ লাখ শিশু। এসব ঝুঁকির কারণে গ্রাম এলাকার মানুষেরা শহরের দিকে ধাবিত হতে বাধ্য হচ্ছে। আর সেখানে যাওয়ার পর নতুন ঝুঁকির মুখোমুখি হতে হচ্ছে শিশুদেরকে। তা হলো: জোরপূর্বক শ্রম কিংবা বাল্য বিয়ের ঝুঁকি। অভাবের তাড়নায় অনেককে শিশু শ্রমে লিপ্ত হচ্ছে। ভরণপোষণ চালাতে ব্যর্থ হওয়ায় অনেক মেয়ে শিশুকে অল্প বয়সে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে পরিবার।