বাড়ছে চালের দাম

134

নগরীতে কয়েকমাস ধরে উঠানামা করছে ভোগ্যপণ্যের দাম। বাজারে আদা-রসুন, পেঁয়াজ, চিনি ও তেলসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম কখনও বাড়ছে, কখনও কমছে। এবার পাইকারিতে শ্রেণিভেদে চালের দাম বাড়ছে। এতে চালের বাজারে দেখা দিয়েছে অস্থিরতা।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকার মাঠ পর্যায় থেকে ধান ক্রয় করে গুদামজাত করছে, তাই বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। উত্তরবঙ্গেও কিছু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে বলে জানা গেছে।
এদিকে পাইকারি বাজারে দাম বাড়ার খবর পাওয়ার পরপরই বস্তা প্রতি (৫০ কেজি) ২০০ থেকে ২৫০ টাকা দাম বাড়িয়ে দিয়েছে খুচরা ব্যবসায়ীরা। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, চালের দাম কয়েক সপ্তাহ ধরে বেড়েই চলেছে, সে অনুপাতে আমরা বিক্রি করছি। গতকাল বুধবার নগরীর পাহাড়তলী, চাক্তাই পাইকারি বাজার ঘুরে এসব তথ্য পাওয়া যায়।
সরেজমিনে জানা গেছে, চাক্তাই পাইকারী বাজারে শ্রেণিভেদে চালের দাম কমলেও পাহাড়তলী পাইকারী বাজারে চালের দাম ঊর্ধ্বমুখি।
চাক্তাই বাজারে স্বর্ণা সিদ্ধ চালের ৫০ কেজির বস্তা গত সপ্তাহের তুলনায় ২০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৬০০ টাকায়। আর স্বর্ণা পাইজাম সিদ্ধ ১৫০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ১৬০০ টাকায়। এছাড়া অন্যান্য চালের দামও বস্তাপ্রতি ২০-৫০ টাকা বেড়েছে। এর মধ্যে অটো সিদ্ধ চাল বিক্রি হচ্ছে ১৩৫০ টাকায়, গুটি স্বর্ণা ১৫০০ টাকায়, জিরা সিদ্ধ ২৩৫০ টাকায়, মিনিকেট সিদ্ধ ১৮০০ টাকায়, নাজিরশাইল সিদ্ধ ২৬৫০ টাকায়। একই সাথে ইরি আতপ বিক্রি হচ্ছে ১৩০০ টাকায়, নতুন বেতি আতপ ১৫৫০ টাকায়, আটাশ বেতি আতপ ১৮৫০ টাকায়, মিনিকেট আতপ ১৯২০ টাকায়, পাইজাম আতপ ১৭০০ টাকায়, কাটারি আতপ ২০৫০ টাকায়, ১নং কাটারি আতপ ২৯০০ টাকায় এবং নতুন চিনিগুঁড়া ৪৫০০ টাকায়, পুরাতন চিনিগুঁড়া ৫৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
অপরদিকে পাহাড়তলী পাইকারি বাজারে বস্তাপ্রতি জিরাশাইল চাল গত সপ্তাহের তুলনায় ১৫০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২৪৫০ টাকায়, মিনিকেট সিদ্ধ ১৫০ টাকা বেড়ে ১৮০০ টাকায়। এছাড়া অন্যান্য চালের দামও বস্তাপ্রতি ২০-৫০ টাকা বেড়েছে। এর মধ্যে পাইজাম সিদ্ধ ১৬৫০ টাকায়, স্বর্ণা সিদ্ধ ১৬০০ টাকায় এবং মোটা সিদ্ধ ১৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একই সাথে বস্তাপ্রতি মিনিকেট আতপ ২০০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৯৫০ টাকায়, গুটি স্বর্ণা আতপ ১৭৫০ টাকায়, পাইজাম আতপ ১৮০০ টাকায়, চম্পা কাটারি ২৬০০ থেকে ২৭০০ এবং নতুন চিনিগুঁড়া ৪৫০০ থেকে ৪৭০০ টাকায় ও পুরান চিনিগুঁড়া ৫৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
হঠাৎ দামবৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে চাক্তাই চাল ব্যবসায়ী দোলন মহাজন বলেন, সরকার সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে স্বল্পমূল্যে ধান কিনে গুদামজাত করছে। তাই কৃষকরা সরাসরি বাজারে ধান-চাল বিক্রি করছে না। ফলে পাইকারি বাজারে চালের সংকট সৃষ্টি হওয়ায় দাম একটু বাড়তি। তবে সরকার ধান কেনা বন্ধ করে দিলে আবারও স্বাভাবিক হয়ে উঠবে চালের দাম।
অন্যদিকে উত্তরবঙ্গের মিল-মালিকরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে চালের দাম বাড়াচ্ছেন দাবি করে পাহাড়তলী পাইকারী বাজারের বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এসএম নিজাম উদ্দিন পূর্বদেশকে বলেন, চালের দাম কয়েক সপ্তাহ ধরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে চিকন চালের দাম বেশি বাড়ছে। দ্রæত দাম কমবে বলে মনে হয় না। কারণ উত্তরবঙ্গের মিল মালিকরা সিন্ডিকেট করে চালের দাম বাড়াচ্ছেন। তাছাড়া সরকার চাল রপ্তানির ঘোষণা দেওয়ায় তারা চালের দাম বৃদ্ধি করে। তবে এরমধ্যে সরকার চাল রপ্তানির সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে। এখন দেখার বিষয় মিল মালিকরা কি সিদ্ধান্ত নেন।
চাক্তাই চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওমর আজম পূর্বদেশকে বলেন, কিছুদিন ধরে আমাদের প্রত্যেক ক্যাটাগরির চালের দাম বেড়েই চলছে। তবে কি কারণে দাম বাড়ছে, তা বলা মুশকিল। আর চালের বাজারে বেচা-কেনা আগের তুলনায় কমে গেছে।
খুচরা ব্যবসায়ী মো. মামুন জানান, টানা কয়েক সপ্তাহ ধরে বেড়েই চলেছে চালের দাম। তবে আমরা বস্তা প্রতি পরিবহন অন্যান্য খরচ বাদ দিয়ে ৫০ টাকারও বেশি লাভ করছি না। অর্থাৎ যে দামে কিনছি সে অনুপাতে কিছুটা লাভ করে বিক্রি করছি।