বাস্তবায়নে সেনাবাহিনীর তৎপরতা আশাব্যঞ্জক

94

নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের গৃহীত মেগাপ্রকল্প একনেকের সভায় অনুমোদন লাভ করে ২০১৭ সালের শেষের দিকে। ২০১৮ সালের এপ্রিলে চউক কর্তৃপক্ষ এ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সেনাবাহিনীর সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়। এরপর থেকে সেনা বাহিনী প্রাথমিকভাবে বেশকিছু খাল ড্রেজিং শুরু করে। দৃশ্যমান এ কার্যক্রম দেখে চট্টগ্রামবাসী আশাবাদী হয়েছিল অবশেষে চট্টগ্রাম জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পাবে। সাথে একটি আধুনিক ও উন্নত শহরের রূপ পরিগ্রহ করবে। কিন্তু ২০১৯ সালের শুরু থেকে কাজের গতি কিছুটা মন্থর দেখে জনমনে সন্দেহ ও সংশয়ের উদ্রেক ঘটে আদৌ মেগা প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে কিনা, জলাবদ্ধা থেকে নগরবাসী মুক্তি পাবে কিনা। এতসব জল্পনার মধ্যে চউক কর্তৃপক্ষের নেতৃত্বের পরিবর্তন ঘটে। দীর্ঘ ১০বছর সফলভাবে চউক এর চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থেকে বিদায় নিলেন আবদুচ ছালাম। নতুন দায়িত্বে আসলেন প্রবীণ রাজনীতিক জহিরুল আলম দোভাষ। এর সাথে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের মেগা প্রকল্পটির কাজের গতিও বৃদ্ধি করার আবাস দিলেন সেনা বাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কন্সট্রাকশন ব্রিগেড (ইসিবি) মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভীর মাজহার সিদ্দিকী । গত শনিবার নগরীর দামপাড়াস্থ ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কন্সট্রাকশন ব্রিগেড (ইসিবি) এর সদর দপ্তরে গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে ‘জলাবদ্ধাতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্প নিয়ে এক মতবিনিময় সভায় ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভীর মাজহার সিদ্দিকীর বক্তব্য থেকে ধরে নেয়া যায়, সেনা বাহিনী তাদের নিজস্ব পরিকল্পনা ও চিন্তা দিয়েই এ প্রকল্প বাস্তবায়নে এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি স্পষ্টভাবে বলেছেন, ডিজিটাল ম্যাপ অনুযায়ী খালের ওপর গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান শুরু করবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। মেগা প্রকল্পের সুফল নিশ্চিত করতে শীঘ্রই অভিযানে নামবে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থাটি। এছাড়া প্রকল্পের কাজে গণমাধ্যম কর্মীদের সম্পৃক্ততা বাড়ানো, জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি এবং খাল ও নালায় ময়লা ফেললে শাস্তির আওতায় আনার মতো বিষয়ে চিন্তা করছে সেনাবাহিনী। শুধু তাই নয়, মতবিনিময় সভায় কয়েকজন সাংবাদিকের বক্তব্যের আলোকে জেনারেল আহমেদ তানভীর মাজহার সিদ্দিকী জানান, যত্রতত্র ময়লা ফেললে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া কথা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও বলেছেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের চারটি সভায় জরিমানার বিষয়টি উঠে এসেছে। সচেতনতার জন্য র‌্যালি, মাইকিং কিংবা সমন্বয় করলেও জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে সুফল পাওয়া সম্ভব নয়। বিষয়টি নিয়ে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, সিটি কর্পোরেশন, পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সঙ্গে আলোচনা করা হবে। এরপর যারা এ ধরনের কাজের সঙ্গে জড়িত থাকবে, তাদের বিরুদ্ধে জরিমানা কিংবা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভীর মাজহার সিদ্দিকী আরো জানান, সেনাবাহিনী ৫টি ট্রাইডাল রেগুলেটর করবে। প্রত্যেক খালের ডিজিটাল ম্যাপ করা হয়েছে। রেগুলেটরগুলোর ইমপ্রেক্ট অসেসমেন্ট করা হয়েছে। বিগত ৫০ বছরের গতিবিধি পর্যালোচনা করেই কাজে হাত দেওয়া হচ্ছে। প্রকল্পের অধীনে গতবছর খাল থেকে ১ কোটি ২৫ লাখ ৮৮ হাজার ঘনফুট ও চলতি বছরে ৪২ লাখ ঘনফুট বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে। প্রকল্পে ৩৬টি খাল ছাড়াও আরো ২২টি খালের কাজ করতে হবে। এ মুহূর্তে ১৩টি খালে কাজ চলছে। বেশি জলাবদ্ধতা হয় এমন খালগুলোতে আগে কাজ শুরু করা হয়েছে। আগামীতে ১০টি খালের এবং পরবর্তীতে বাকি খালের কাজ করা হবে। এসময় তিনি জোর দিয়ে বলেন, যতক্ষণ জোয়ারের পানি আটকে দেয়া যাবে না ততক্ষণ জলাবদ্ধতা নিরসন সম্ভব হবে না। জোয়ারের পানি আটকাতে সেনাবাহিনী ৫টি, সিডিএ ১২টি এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড ২৩টি টাইডাল রেগুলেটর স্থাপনের কাজ শুরু করবে। মোট ৪০টি রেগুলেটরের কাজ শেষ হলে জোয়ারের পানির শহরে প্রবেশ বন্ধ হবে। এতে জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধান হবে। আমরা সেনাবাহিনীর এ উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। তবে সকল কিছুর মূলে রয়েছে জনসচেতনতা। মতবিনিময় সভায় যে কথাটি বারবার এসেছে। আমরা আশা করব নগরীর সেবা সংস্থাগুলো এক্ষেত্রে সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা দিবে।
উল্লেখ্য, ডিপিপি অনুযায়ী গৃহীত এ মেগা প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ৫ হাজার ৬১৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা। তিন বছর মেয়াদি এ প্রকল্পে প্রাথমিক পর্যায়ে ২০১৮ সালে ৩৬ খালের মাটি অপসারণসহ ৩০০ কিলোমিটার নতুন ড্রেন নির্মাণ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোর খালের দুপাশে রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ, রাস্তা নির্মাণ ও নিচু ব্রিজগুলো ভেঙে উঁচু করার কাজ শুরু করে। এছাড়া নতুন করে ১০০ কিলোমিটার ড্রেন নির্মাণ, ২০২০ সালের মধ্যে নগরে ৩৬টি খাল খনন, খালের পাশে ১৭৬ কিলোমিটার প্রতিরোধক দেয়াল, ৮৫ কিলোমিটার সড়ক, ৪২টি বালির ফাঁদসহ (সিল্ট ট্র্যাপ) নানা অবকাঠামো নির্মাণ করার কথা রয়েছে।