বাসভাড়া বাড়লো ৬০%

37

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে কম যাত্রী তুলতে হবে বলে মালিকদের ক্ষতি পোষাতে আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লা এবং নগর পরিবহনের বাস ও মিনিবাসের ভাড়া ৬০ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত দিয়েছে সরকার।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ-বিআরটিএ বাসের ভাড়া ৮০ শতাংশ বাড়ানোর সুপারিশ করলেও তা নিয়ে আপত্তি করেছিল ভোক্তা ও নাগরিক অধিকার সংগঠনগুলো।
শেষ পর্যন্ত ভাড়া ৬০ শতাংশ বাড়িয়ে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ রোববার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে, যা সোমবার থেকেই কার্যকর হচ্ছে।
কোভিড-১৯ এর বিস্তার রোধে ৬৬ দিনের লকডাউন শেষে রোববার থেকে সারাদেশে ট্রেন ও লঞ্চ চলাচল শুরু হচ্ছে। তবে ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্তের অপেক্ষা এবং যানবাহন মেরামতের কারণে দূরপাল্লার বাস-মিনিবাস চলাচল শুরু হওয়ার কথা সোমবার থেকেই।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘কোভিড-১৯ এর বিস্তার রোধে শর্তসাপেক্ষে সীমিত পরিসরে নির্দিষ্ট সংখ্যাক যাত্রী নিয়ে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লার চলাচলকারী (ঢাকা মহানগর ও এর পাশ্ববর্তী এলাকা এবং চট্টগ্রাম মহানগর) বাস ও মিনিবাসের ভাড়া পুনঃনির্ধারণ করা হল।
২০১৬ সালের মে মাসের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লার চলাচলকারী বাস ও মিনিবাসের প্রতি কিলোমিটারের সর্বোচ্চ ভাড়া ছিল এক টাকা ৪২ পয়সা। ৬০ শতাংশ বাড়ায় তা ২ টাকা ২৭ পয়সা হচ্ছে।
ঢাকা মহানগরীতে বাস ও মিনিবাসের চলাচলের ক্ষেত্রে ২০১৬ সালের প্রজ্ঞাপনে সর্বোচ্চ ভাড়া নির্ধারণ করা ছিল এক টাকা ৭০ পয়সা এবং চট্টগ্রামে ও এক টাকা ৬০ পয়সা। ৬০ শতাংশ বাড়ায় এখন তা যথাক্রমে ২ টাকা ৭২ পয়সা এবং ২ টাকা ৫৬ পয়সা হচ্ছে।
এছাড়া ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কোঅর্ডিনেশন অথরিটির (ডিটিসিএ) আওতাধীন জেলার (নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, নরসিংদী, গাজীপুর, মানিকগঞ্জ ও ঢাকা জেলা) অভ্যন্তরে চলাচলকারী বাস ও মিনিবাসের ভাড়া আগে ছিল প্রতি কিলোমিটারে এক টাকা ৬০ পয়সা। এখন তা ৬০ শতাংশ বেড়ে ২ টাকা ৫৬ পয়সা হচ্ছে।
ভাড়া বাড়ানোর পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে চারটি শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে প্রজ্ঞাপনে।
>> একজন যাত্রীকে বাস/মিনিবাসের পাশাপাশি দুইটি আসনের একটি আসনে বসিয়ে অন্য আসনটি অবশ্যই ফাঁকা রাখতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি অনুসারে শারীরিক ও সামাজিক দূরুত্ব বজার রাখতে হবে। কোনোভাবেই সংশ্লষ্ট মোটরযানের রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেটে উল্লেখিত মোট আসন সংখ্যার অর্ধেকের বেশি যাত্রী বহন করা যাবে না এবং দাড়িয়ে কোনো যাত্রী বহন করা যাবে না।
>> বিদ্যমান হারে প্রচলিত ভাড়ার চার্টে যে ভাড়া আছে, তার সঙ্গে এবারের বৃদ্ধির হার যোগ করে নতুন ভাড়া নির্ধারিত হবে।
>> স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া নির্দেশনা যথাযথভাবে অনুসরণ করে বাস ও মিনিবাস চালাতে হবে।
>> অনুমোদিত ভাড়ার হার করোনাভাইরাসের এই সংকটের সময়ই প্রযোজ্য হবে। এ সংকট কেটে গেলে আগের ভাড়ার হার প্রযোজ্য হবে।
রোববার সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের কর্মকর্তাদের সাথে ভিডিও কনফারেন্স যুক্ত হয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, এ মুহূর্তে জনগণের আর্থিক সক্ষমতা বিবেচনায় নিয়েই সরকার প্রস্তাবিত ভাড়ার হার কমিয়ে যৌক্তিক পর্যায়ে সমন্বয় করছে।’
যানবাহনে যাত্রী, গাড়িচালক, সহকারী, কাউন্টার কর্মীসহ সবাইকে স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশনা মেনে চলতে এবং মাস্ক পরার আহব্বান জানান তিনি।
বর্ধিত বাসভাড়া প্রত্যাখ্যান, পূর্বের ভাড়া বহাল রাখার দাবি যাত্রী কল্যাণ সমিতির : গণপরিবহনের বর্ধিত বাসভাড়া প্রত্যাখ্যান করে পূর্বের ভাড়া বহাল রাখার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। গতকাল রবিবার (৩১ মে) গণমাধ্যমে প্রেরিত এক বিবৃতিতে সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী এ দাবি জানান।
বিবৃতিতে বলা হয়, সরকার যাত্রী প্রতিনিধি বাদ দিয়ে মালিকদের পাতানো ফাঁদে পা দিয়ে করোনার এই সংকটে দেশের অসহায় জনগণের উপর একচেটিয়াভাবে বাসের ৬০ শতাংশ বর্ধিত ভাড়া অযৌক্তিকভাবে চাপিয়ে দিচ্ছে। এতে যাত্রীস্বার্থ চরমভাবে উপেক্ষিত হবে, ভাড়া নৈরাজ্য ও যাত্রী হয়রানিকে আরো উসকে দেওয়া হয়েছে।
মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, সরকারের এই সিদ্ধান্তের কারণে দেশের সাধারণ জনগণের ভোগান্তি বাড়াবে। সঠিক ব্যয় বিশ্লেষণ না করে, যাত্রীসাধারণকে মালিকদের সাথে দর কষাকষির সুযোগ না দিয়ে, ভুয়া এবং অযৌক্তিক হিসাব দেখিয়ে এভাবে ভাড়া বৃদ্ধি অসহায় জনগণের উপর জুলুমের সামিল। তাই দেশের যাত্রীসাধারণ এই অযৌক্তিক ভাড়া বৃদ্ধি কোনোভাবেই মেনে নেবে না। তাই অনতিবিলম্বে বর্ধিত বাসভাড়া প্রত্যাখ্যান করে পুর্বের ভাড়া বহাল রাখার দাবি যাত্রী কল্যাণ সমিতির। খবর বিডিনিউজের