বাসন্তী চাকমার বিতর্কিত বক্তব্য প্রত্যাহার দাবি

56

সংসদে সংরক্ষিত আসন-৯ (পার্বত্য চট্টগ্রাম) এর সদস্য বাসন্তী চাকমার দেওয়া বিতর্কিত বক্তব্য প্রত্যাহার করে নেয়া সহ তাকে ক্ষমা চাওয়ার আহবান জানিয়েছেন খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটির কয়েকটি সংগঠনের নেতারা। শনিবার সকালে খাগড়াছড়ি প্রেসক্লাবে পার্বত্য অধিকার ফোরাম কেন্দ্রীয় সংসদ ও পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদ এবং রাঙামাটি শহরের সাবরাং রেস্টুরেন্টে সচেতন পার্বত্যবাসীর আয়োজনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।
সম্প্রতি খাগড়াছড়ি জেলা থেকে সংরক্ষিত আসনে সংসদ সদস্য হন জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বাসন্তি চাকমা। ২০০৯ সালে তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী সদস্য ও বাংলাদেশ বৌদ্ধ কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি সদস্য পদেও আছেন তিনি। এর আগে তিনি বিকশিত নারী নেটওয়ার্কের খাগড়াছড়ি জেলা সভাপতি, ২০১৫ সালে দি হাঙ্গার প্রজেক্ট-বাংলাদেশ এর দ্বিতীয় জেলা সভাপতি ছিলেন। গত ৮ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ডের সভায় সংসদ সদস্য হিসেবে তার নাম ঘোষণা করা হয় এবং ১৭ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করা হয়। সাংসদ হিসেবে প্রথমবারের মতো সংসদে দেয়া বক্তব্যে মিথ্যাচার করেছেন জানিয়ে পার্বত্য অধিকার ফোরামের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাঈন উদ্দিন লিখিত বক্তব্যে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত শতকরা ৫১ শতাংশ বাঙালি সম্প্রদায় ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে নিয়ে অপবাদমূলক, মিথ্য ও বানোয়াট কল্পকাহিনী তুলে ধরেছেন বাসন্তী চাকমা। তার বক্তব্যের মূল অংশ ছিলো সাম্প্রদায়িক। ১৯৯৬ সালের ১ মে জেলার পানছড়িতে ‘আল্লাহু আকবর’ স্লোগানে কোনও গণহত্যা হয়নি। ১৯৮৬ সালের ২৯ এপ্রিল দিবাগত রাত আনুমানিক ৯টা থেকে ১টার মধ্যে উপজেলার লোগাং, চেঙ্গী, পানছড়ি, লতিবান ও উল্টাছড়ি ইউনিয়নের বাঙালি অধ্যুষিত গ্রামগুলোতে শান্তিবাহিনীর সদস্যরা অগ্নিসংযোগ, লুটতরাজ চালায় এবং নিরস্ত্র ৮৫৩ জনের অধিক পুরুষ, নারী ও শিশুকে হত্যা করে। নারীদের ওপর গণধর্ষণও চালানো হয়।
মাঈন উদ্দিন বলেন, শান্তিবাহিনীর কোন্দলে সন্তু (জেএসএস) ও প্রসীত (ইউপিডিএফ) গ্রুপের দ্বন্দ্বে বহু উপজাতীর জীবন নাশের কথা বললেও সুকৌশলে বাসন্তি চাকমা বাঙালি গণহত্যার কথা এড়িয়ে গেছেন। তিনি বাঙালিদের বহিরাগত ও সেটেলার বলে পাহাড়ের পরিবেশ অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা করেছেন। তিনি মূলত সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতেই সংসদে ঢুুকেছেন। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ অমান্য করে শান্তিবাহিনী সৃষ্টির ইতিহাস তুলে না ধরে তিনি শান্তিবাহিনীর সদস্যদের ‘নিজের ভাই’ বলেছেন আর সেনাবাহিনীকে নিয়ে কটূক্তি করেছেন। এটা মেনে নেয়া যায় না। সেনাবাহিনী পাহাড়ে শান্তি রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছে। পাহাড়ি-বাঙালির মধ্যে সম্প্রীতির বন্ধন সৃষ্টি করেছে।
সংবাদ সম্মেলন থেকে আজ রবিবার খাগড়াছড়িতে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধনের ডাক দেয়া হয়। সংসদে বাসন্তির দেয়া মিথ্যা বক্তব্য প্রত্যাহার করে ক্ষমা প্রার্থনা ও সংসদ সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ না করলে আরো কঠোর কর্মসূচি দেয়ার ঘোষণাও দেন তারা।
এসময় পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদেও জেলা সভাপতি প্রকৌশলী লোকমান হোসেন, কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মাসুদ, মাটিরাঙা উপজেলা সভাপতি রবিউল হোসেন, পার্বত্য অধিকার ফোরামের জেলা সভাপতি এসএম হেলাল, পার্বত্য নারী অধিকার ফোরামের জেলা আহবায়ক সালমা আহমেদ মৌসহ সংগঠন দুটির জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
রাঙামাটিতে সংবাদ সম্মেলনে সচেতন পার্বত্যবাসী সংগঠনের আহবায়ক জাহাঙ্গীর আলম মুন্না লিখিত বক্তব্যে বলেন, বাসন্তি চাকমা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়েছেন এবং পার্বত্য এলাকার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। তাকে অনতিবিলম্বে জাতির কাছে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন থাকবে, এই বিতর্কিত মহিলার সংসদ সদস্য পদ শূন্য ঘোষণা করে তার স্থানে একজন যোগ্য, সৎ ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত নারীকে নির্বাচিত করা হোক।
বাসন্তি চাকমার বক্তব্যের প্রতিবাদে আজ রবিবার সকালে রাঙামাটি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে সচেতন পার্বত্যবাসীর ব্যানারে মানববন্ধন শেষে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয় সংবাদ সম্মেলনে।
এসময় উপস্থিত ছিলেন সমঅধিকার আন্দোলনের নেতা মো.জাহাঙ্গীর কামাল, কাজী মো. জালোয়া, পার্বত্য নাগরিক পরিষদের নেতা মো.জামাল উদ্দিন মাস্টার, জেলা বাঙালি ছাত্র পরিষদের সভাপতি মো.জাহাঙ্গীর আলম, জুরাছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা রূপ কুমার চাকমা, পল্লব দেওয়ান, বাঙালি ছাত্র পরিষদের সিনিয়র সহ সভাপতি হাবিবুর রহমান হাব্বি প্রমুখ।