বার্মা কলোনির মাদক সাম্রাজ্যে পুলিশের হানা

117

নগরীর অপরাধপ্রবণ বায়েজিদ বোস্তামী থানার বার্মা কলোনির উন্মুক্ত মাদক সাম্রাজ্যে হানা দিয়েছে পুলিশ। কলোনির মাদক সা¤্রাজ্যের প্রধান নিয়ন্ত্রক মো. ইয়াছিন (২৭) ওরফে সজল ওরফে ইয়াবা সজলকে অবশেষে চারশ’ ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করে গত শনিবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ। এর আগে কয়েক দফায় পুলিশের হাতে আটক হলেও রহস্যজনকভাবে ছাড়া পেয়ে যায় বায়েজিদের মাদকের এই শীর্ষ কারবারী।
অভিযোগ রয়েছে, গত বছরের শেষদিকে বার্মা কলোনি সংলগ্ন সিটি কর্পোরেশন স্কুলের বাউন্ডারির ভেতরে দ্বিতল হাসপাতাল ভবনের সব কক্ষের দরজায় লাগানো তালা ভেঙে নিজে ব্যক্তিগত তালা লাগিয়ে দেন ইয়াবা সজল। এরপর কক্ষগুলোতে ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য মজুদ ও বেচাকেনার পাশাপাশি সেবনের আখড়া গড়ে তোলা হয়। পুলিশের কতিপয় কর্মকর্তার সাথে সখ্যতা বা আর্থিক লেনদেনের সম্পর্ক থাকায় একাধিক দফায় ধরা পড়ার পরও ছাড়া পেয়ে যান ইয়াবা কারবারি সজল।
বায়েজিদ বোস্তামী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) প্রিটন সরকার পূর্বদেশকে বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে বার্মা কলোনি স্কুলের সামনে অভিযান চালিয়ে ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী ইয়াছিন সজলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। থানার এসআই মো. সালাউদ্দিন খান নোমান বাদী হয়ে তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে। এসআই আফতাবউদ্দিন মজুমদারকে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তদন্তকারী কর্মকর্তা নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করে আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দখিল করবেন।’
চলতি বছরের ১০ মার্চ বার্মা কলোনির স্থানীয় বাসিন্দাদের পক্ষ থেকে সিএমপি কমিশনার ও পাঁচলাইশ অঞ্চলের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনারের দপ্তরে ইয়াবা সজলের মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপরাধের তথ্য তুলে ধরে লিখিত অভিযোগ করা হয়।
এতে উল্লেখ করা হয়েছে, কলোনির আমিন উল্লাহ সওদাগরের ছেলে ইয়াছিন সজল জহুর আহম্মদ চৌধুরী সিটি কর্পোরেশন স্কুলের বাউন্ডারির ভেতরে দ্বিতল হাসপাতাল ভবনের সব কক্ষের দরজায় লাগানো তালা ভেঙে নিজে ব্যক্তিগত তালা লাগিয়ে দেয়।
এরপর কক্ষগুলোতে ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য মজুদ ও বেচাকেনার পাশাপাশি সেবনের আখড়া গড়ে তোলে। এলাকায় মাদক বিক্রি, চুরি-ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধ সংঘটনে অনুগত রাসেল ও পারভেজসহ কয়েকজনকে নিয়ে স্কুল এলাকায় একক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। গত বছরের অর্থাৎ ২০১৮ সালের ১৩ নভেম্বর আখড়া থেকে ইয়াবা সজলকে একজন নারী ও দুই পুরুষ সহযোগীসহ বায়েজিদ বোস্তামী থানা পুলিশ আটক করে।
কিন্তু সহযোগীদের মাদক মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হলেও ইয়াবা সজলকে রহস্যজনক কারণে ৮৮ ধারায় আদালতে চালান দেয় পুলিশ। এভাবে কয়েক দফায় সহযোগীসহ পুলিশের হাতে আটক হলেও অর্থের বিনিময়ে ছাড়া পেয়ে যাওয়ার বিবরণও এলাকাবাসীর লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
সিএমপির পাঁচলাইশ জোনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার দেবদূত মজুমদার বলেন, ‘মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান খুবই স্পষ্ট। যে কোনও পর্যায়ের মাদক বিক্রেতা ও তাদের সহযোগীদের ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নিতে কমিশনার স্যারের নির্দেশনা রয়েছে। এলাকায় মাদকের কারবারে যারাই জড়িত থাকবেন, তাদের প্রত্যেককেই পর্যায়ক্রমে আইনের আওতায় আনা হবে।’
উল্লেখ্য, নগর পুলিশের তলিকায় থাকা মাদকের স্পটগুলোর মধ্যে বায়েজিদ বোস্তামী থানার বার্মা কলোনি অন্যতম।
স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবশালী মহলের প্রশ্রয়ে সেখানে মাদক সাম্রাজ্যসহ অপরাধী চক্রের নিরাপদ আস্তানা গড়ে তোলা হয়। একেক সময় একেক গ্রূপ ওই আস্তানায় মাদক ব্যবসাসহ নানা অপকর্মের নিয়ন্ত্রণ নেয়। এ নিয়ে অতীতে হামলা-পাল্টা হামলায় হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে।