বারইপাড়া খাল খনন প্রকল্প ‘লেজেগোবরে’

193

নগরীতে জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে বহদ্দারহাট বারইপাড়া থেকে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত প্রায় ৩ কিলোমিটার খাল খনন করবে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখার আগেই ‘লেজেগোবরে’ অবস্থা তৈরি হয়েছে। ‘প্রোজেক্ট স্টিয়ারিং কমিটির’ অনুমোদন ছাড়াই প্রকল্পে থাকা ‘স্লুইস গেট’ চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (সিডিএ) দিয়ে নির্মাণ করাতে চায় চসিক। এইজন্য সিডিএ’র প্রকল্পের অধীনে গেটটি নির্মাণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চিঠিও দিয়েছে সংস্থাটি। অন্যদিকে স্লুইস গেটটি ডিজাইনের জন্য অর্ধকোটি টাকা ব্যয়ে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দিয়েছে চসিক। তবে যে গেটটি সিডিএকে দিয়ে নির্মাণ করাতে চায়, সেই গেট ‘ডিজাইন’ বাবদ অর্থের অপচয় কেন করছে- এমন প্রশ্নের উত্তর অনুসন্ধানে প্রকল্প পরিচালকের অদক্ষতা ও পছন্দের পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়ার অভিযোগ উঠে এসেছে।
জানা গেছে, অনুমোদিত প্রকল্পের কোন অংশ সংযোজন, বিয়োজন বা উপযোজন করতে হলে ‘প্রোজেক্ট স্টিয়ারিং কমিটির’ অনুমোদন নিতে হয়। তারপর অনুমোদিত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরু করতে পারে বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান। কিন্তু কোনো ধরনের অনুমোদন ছাড়াই বহদ্দারহাট বারইপাড়া খাল খনন থেকে স্লুইস গেট বাদ দিয়ে সিডিএকে দিয়ে করানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে চসিক। এজন্য গত ১ সেপ্টেম্বর সিডিএকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে অনুরোধ করেছে চসিক। এছাড়াও প্রতি তিন থেকে ছয় মাস অন্তর অন্তর স্টিয়ারিং কমিটির সভা হওয়ার কথা থাকলেও প্রকল্পটি নিয়ে পাঁচ বছরে একবারও সভা হয়নি বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।
সিডিএকে পাঠানো চসিকের প্রধান নির্বাহী মো. সামসুদ্দোহা স্বাক্ষরিত সেই চিঠিতে বলা হয়, চট্টগ্রাম ড্রেনেজ মাস্টার প্লানের আলোকে চট্টগ্রাম মহানগর জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন কর্তৃক গৃহীত বর্ণিত প্রকল্পটি একনেক সভায় অনুমোদনের পর বর্তমানে জমি অধিগ্রহণের কার্যক্রম চলমান। জমি অধিগ্রহণের পর খাল খনন কাজ শুরু করা হবে। উল্লেখ্য, প্রস্তাবিত ৬৫ ফুট প্রশস্ত খালটি বহদ্দারহাট বারইপাড়া হতে শুরু হয়ে প্রায় ৩ কি.মি. পথ অতিক্রম করে বলিরহাটের পাশে কর্ণফুলী নদীতে পতিত হবে। উল্লেখ্য, আপনার সংস্থা কর্তৃক ‘কর্ণফুলী নদীর তীর বরাবর কালুরঘাট সেতু হতে চাক্তাই খাল পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় নির্মাণাধীন বেড়িবাঁধের বলিরহাট অংশে আমাদের প্রস্তাবিত খালটি অতিক্রম করবে বিধায় উক্ত অংশের স্লুইচ গেটটি আপনাদের প্রকল্পের অর্থায়নে সিডিএ কর্তৃক নির্মাণ করার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হল। যদিও চিঠিতে সিডিএ কর্তৃক গেটটি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে অনুরোধ করা হয়েছে। তবে বিষয়টি কেবলই প্রস্তাব বলে দাবি করেছেন চসিকের প্রধান নির্বাহী মো. সামসুদ্দোহা। এই বিষয়ে সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী হাসান বিন শামস্ পূর্বদেশকে বলেন, স্লুইস গেটটি ইতোমধ্যে আমাদের ‘কর্ণফুলী নদীর তীর বরাবর কালুরঘাট সেতু হতে চাক্তাই খাল পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পে রয়েছে। তাই আমরা স্লুইস গেটটি নির্মাণ করবো।
তবে গত এপ্রিলে এই স্লুইস গেটটির ‘নকশা’ তৈরি করার জন্য ‘প্রফেশনাল কনসাল্টিং এন্ড কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ার্স’ নামক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দিয়েছে সিটি করপোরেশন। একইসাথে প্রস্তাবিত খালের নকশা করছে প্রতিষ্ঠানটি। যার জন্য প্রায় অর্ধকোটি টাকা প্রতিষ্ঠানকে প্রদান করবে করপোরেশন। তবে প্রতিষ্ঠানটি প্রকল্প পরিচালক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলামের পছন্দের প্রতিষ্ঠান বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাদের কাছে মূলত কোনো পরিকল্পনা ছাড়া ‘নকশা’ তৈরির কাজের চাহিদা তৈরি করেছেন। এই নিয়ে সংশ্লিষ্টরা প্রশ্ন তুলছেন, যে স্লুইস গেট সিডিএকে দিয়ে করানোর পরিকল্পনা সিটি করপোরেশনের, সেই গেটের ডিজাইন বাবদ কেন এত টাকা অপচয় করা হবে?
এই গেল স্লুইস গেট কান্ড! অন্যদিকে প্রকল্পটির অধীনে ৫ হাজার ৫শ মিটার রিটেইনিং ওয়াল ও সিঁড়ি নির্মাণ করা হবে। যার ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৬ কোটি টাকা। যা রীতিমত অবাস্তব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। কেননা, জাইকার অর্থায়নে মহেশখালে সিটি করপোরেশনের করা প্রতি মিটার রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণে খরচ পড়েছে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকার উপরে। সে হিসেবে এই পরিমাণ রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ করতে প্রায় ৪০ কোটি টাকার বেশি খরচ পড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা। তাহলে বাকি টাকা আসবে কোত্তেকে?
অন্যদিকে প্রকল্পের অধীনে ৯ লাখ টাকার মোটরসাইকেল কেনার খরচ দেখিয়েছেন আরও বছর আগে। কাগজে কলমে সব নথি অনুমোদন হলেও মোটরসাইকেলের দেখা মেলেনি করপোরেশনে। এই নিয়ে ৯ বার বিভাগীয় তাগাদা প্রদান করা হলেও প্রকল্প পরিচালকের কোনো পাত্তা নেই! আবার খালটি খনন করা হলে ১৮নং পূর্ব বাকলিয়া ওয়ার্ডে তিনটি ব্রিজ নির্মাণ করতে হবে। এমনটাই অনুভব করছেন প্রকল্প পরিচালক। তবে তা খাল খনন প্রকল্পের ডিপিপিতে নেই। এই জন্য প্রকল্পটি সংশোধন করে একনেকের অনুমোদন নেওয়ার কথা ভাবছে সিটি করপোরেশন। অন্যদিকে ৫ বছর ধরে অধিগ্রহণ জটিলতায় আটকে থাকা এই প্রকল্পের একটি এলএ মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। যে পরিমাণ ভূমিতে পাঁচটি লটে টেন্ডার করার জন্য নথি অনুমোদন প্রক্রিয়া শুরু করেছেন প্রকল্প পরিচালক। তবে এখনও খালের নকশা অনুমোদন হয়নি। নকশা ছাড়া কিভাবে খাল খনন করবেন? এসব অসংঙ্গতি নিয়ে জানার জন্য প্রকল্প পরিচালক রফিকুল ইসলাকে বেশ কয়েকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ ও ক্ষুদেবার্তা পাঠানো হলেও কোনো সাড়া দেননি।
এসব বিষয় নিয়ে চসিকের প্রধান নির্বাহী মো. সামসুদ্দোহা পূর্বদেশকে বলেন, আমরা প্রকল্পটি সংশোধন করে মন্ত্রণালয়ে আবার পাঠাবো। তখন যত অসংগতি রয়েছে তা ঠিক করে নেওয়া হবে। অন্যদিকে স্টিয়ারিং কমিটির অনুমোদন ছাড়া স্লুইস গেট বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত কিভাবে নিলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি সিডিএকে চিঠি দেওয়াকে কেবলই প্রস্তাব বলে দাবি করেন। অন্যদিকে সিডিএ রাজি হলে স্টিয়ারিং কমিটির অনুমোদন নেওয়া হবে বলে জানান।
নগরীর জলাবদ্ধতা গত কয়েক বছরে সমস্যার চাইতে আবেগে পরিণত হয়েছে বেশি। এই সমস্যা নিরসনে সিডিএ সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকার মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। অন্যদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডও দেড় হাজার কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। একইসাথে সিটি করপোরেশন বহদ্দারহাট বারইপাড়া থেকে কর্ণফুলী পর্যন্ত খাল খনন করবে। বাকি প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি হলেও সিটি করপোরেশনের এই প্রকল্প নিয়ে তৈরি হয়েছে ‘লেজেগোবরে’ অবস্থা।
উল্লেখ্য, সিডিএ ১৯৯৫ সালে যে ড্রেনেজ মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করেছিল তাতে তিনটি খাল নতুন খননের প্রস্তাব ছিল। এর মধ্যে একটি বারইপাড়া থেকে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত। অপর দুটি হলো নয়াখাল থেকে শীতলঝর্ণা এবং মুরাদপুর থেকে বহদ্দারহাট। পরবর্তী ২০ বছরের মধ্যে ওই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের কথা থাকলেও তা আলোর মুখ দেখেনি। ২০১৪ সালে নগরের বহদ্দারহাটসহ আশপাশে প্রধান সড়ক-উপসড়ক ও এলাকা ভয়াবহ জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হলে চসিক বারইপাড়া থেকে কর্ণফুলী নদী পর্ষন্ত একটি নতুন খাল খননের উদ্যোগ নেয়। এজন্য সরকার (ভ‚মি অধিগ্রহণের ২২৪ কোটি টাকাসহ) ৩২৬ কোটি ৮৪ লাখ ৮১ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়। প্রকল্পে ২৪৫ কোটি ১৩ লক্ষ টাকা সরকার এবং ৮১ কোটি টাকা চসিকের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় করা হবে। ২০১৪ সালের ২৪ জুন প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন পেয়েছিল। তবে প্রশাসনিক অনুমোদন দেয় ২০১৫ সালের ১৩ আগস্ট। ওই সময় প্রকল্পের সময়সীমা ধরা হয়েছে ২০১৪ সালের ১ জুলাই থেকে ২০১৭ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। এই প্রকল্পের প্রধান অংশ ভ‚মি অধিগ্রহণ। এই অধিগ্রহণ কার্যক্রম শুরু হয়েছিল ২০১৫ সালের ১৮ অক্টোবর থেকে। ওইদিন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বরাবর ভূমি অধিগ্রহণের অনাপত্তি ছাড়পত্রের আবেদন করেছিল চসিক। পরবর্তীতে বিভিন্ন প্রক্রিয়া শেষে ২০১৬ সালের ৩ জানুয়ারি জেলা প্রশাসনের কাছে ভূমি অধিগ্রহণ কার্যক্রমের জন্য পত্র দিয়েছিল চসিক। ওই সময় জেলা প্রশাসনের ভ‚মি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু করলে পড়ে ‘এলাইনমেন্ট’ জটিলতায়। ফলে শুরু করা যায়নি ভূমি অধিগ্রহণের কাজ। যার কারণে আটকে যায় মন্ত্রণালয়ের অর্থছাড়। ফলে মাঝের সময়টায় বেড়ে যায় অধিগ্রহণকৃত ভূমির মৌজা মূল্যের তিনগুণ। যার কারণে ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে প্রকল্পের ব্যয় শুরুর থেকে চারগুণ বাড়িয়ে সংশোধনীয় প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়। অবশেষে ২০১৮ সালের ৭ নভেম্বর একনেকে অনুমোদিত হয়। প্রকল্প ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ২৫৬ কোটি ১৫ লক্ষ ৫৬ হাজার টাকা। যা প্রথমবারের তুলনায় চারগুণের বেশি। দ্বিতীয় দফা প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ ধরা হয় ২০২০ সালের জুন মাস পর্যন্ত। আর বাকি রয়েছে মাত্র ৯ মাস। এখনও আলোর মুখ দেখেনি প্রকল্পটি। এরই মধ্যে আবারও প্রকল্পটি সংশোধন করে একনেক থেকে অনুমোদন নিতে চায় করপোরেশন। যার কারণে সময় লাগতে পারে আরও দুইবছর। এরপরই শুরু হবে প্রকল্পের মূল কাজ। তবে আবারও সংশোধনী দিয়ে প্রকল্পের অনুমোদন নিতে গেলে, অনুমোদন পাওয়া নিয়ে জটিলতা তৈরি হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এই মুহূর্তে করণীয় কি? এমন প্রশ্ন নিয়ে কথা হয় নগরপরিকল্পনাবিদ প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদারের সাথে। তিনি পূর্বদেশকে বলেন, প্রতিটি প্রকল্প স্বার্থকভাবে বাস্তবায়ন করতে পারাই প্রকল্প পরিচালকের কাজ। তারজন্য নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম রয়েছে। যেমন, সময়মত স্টিয়ারিং কমিটির সভা করা। তবে প্রকল্প পরিচালকরা কেন এসব নিয়ম মানতে চান না। তাই নিয়ে আমার বোধগম্য হয় না। কোনো অসৎ উদ্দেশ্য না থাকলে নিয়ম মানতে সমস্যা হওয়ার কথা না। এখন যদি প্রকল্পটি দ্বিতীয়বার সংশোধনী দিয়ে একনেকের অনুমোদন নিয়ে যায়, তাহলে প্রথমত সময় লাগবে অনেক এবং নতুন করে জটিলতাও তৈরি হতে পারে। তাই প্রতিটি প্রকল্পের মোট টাকা ঠিক রেখে খাতওয়ারি ২৫ শতাংশ অর্থের উপযোজন করা যায়। তাহলে প্রকল্পের মূল কাজগুলো সহজে করা যাবে। যেগুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না, সেগুলো অন্য একটি সৌন্দর্য্য বর্ধন প্রকল্প নিয়ে সহজে করে ফেলা যাবে। অতদিনে কাজও শেষ হয়ে যাবে। তাই এই মুহূর্তে জনগণের স্বার্থে দ্বিতীয়বার সংশোধনে যাওয়া ঠিক হবে না। কেননা ইতোমধ্যে অনেক দেরি হয়ে গেছে, আর দেরি করা উচিত হবে না।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, নতুন খালটি নগরীর বারইপাড়াস্থ চাক্তাই খাল থেকে শুরু করে শাহ্ আমানত রোড হয়ে নুর নগর হাউজিং সোসাইটির মাইজপাড়া দিয়ে পূর্ব বাকলিয়া হয়ে বলিরহাটের পার্শ্বে কর্ণফুলী নদীতে গিয়ে পড়বে। খালটির দৈর্ঘ্য হবে আনুমানিক ২ দশমিক ৯ কিলোমিটার এবং প্রশস্থ ৬৫ ফুট। খালটির মাটি উত্তোলন, সংস্কার ও নতুন যোগাযোগ ব্যবস্থা সৃষ্টির লক্ষ্যে খালের উভয় পাশে ২০ ফুট করে ২টি রাস্তা ও ওয়াকওয়ে নির্মাণ করার কথা রয়েছে।