বান্দরবানে স্বামীর পক্ষে মাঠে স্ত্রীরাও

37

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের শেষ মুহূর্তে প্রচার-প্রচারণায় জমে উঠেছে বান্দরবানে। জেলার সাত উপজেলা, দুই পৌরসভা ও ৩৩ ইউনিয়নে সকাল থেকেই প্রার্থীরা ছুটছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। কর্মী-সমর্থকরাও চালাচ্ছেন ব্যাপক প্রচারণা। ভোটারদের মন জয় করতে নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন প্রার্থীরা। নির্বাচনের মাঠে প্রার্থীর স্ত্রীরাও রাত-দিন এক করে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। ছুটছেন ভোটারদের কাছে। অংশ নিচ্ছেন বিভিন্ন সমাবেশে। শীত উপেক্ষা করে ভোর থেকে রাত পর্যন্ত প্রচারণার মাঠে আছেন বীর বাহাদুর উশৈসিং এর স্ত্রী মে হ্লা প্রু। প্রতীক বরাদ্দের পরপরই পাঁচবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য বীর বাহাদুর উশৈসিং এর পক্ষে প্রথমেই মাঠে নামেন তার স্ত্রী ও পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লার বোন মে হ্লা প্রু। দলীয় নেতা কর্মীদের সাথে নিয়ে রাত-দিন সমান তালে প্রচারণা চালাচ্ছেন। সীমান্ত উপজেলা নাইক্ষ্যংছড়ি থেকে শুরু করে রুমা, লামা, আলীকদম এমনকি দুর্গম থানছির প্রত্যন্ত জনপদে গিয়েও স্বামীর পক্ষে ভোটারদের দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। এরই মধ্যে তিনি শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডের পাড়ায় পাড়ায় মহিলাদের নিয়ে সমাবেশ করেছেন।
এবিষয়ে বীর বাহাদুর উশৈসিং পত্নী মে হ্লা প্রু বলেন, নারী ভোটারদের কাছে টানতে নারীরা সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখেন। ফলে তিনি বান্দরবানের দুর্গম জনপদের প্রতিটি মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে নৌকার পক্ষে ভোট প্রার্থনা করছেন। সাধারণ ভোটারদের মতে, বান্দরবানে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রার্থীর মধ্যেই মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। তবে প্রার্থী যে দলেরই হোক না কেন ভোটাররা চান যোগ্য প্রার্থী, যিনি মাটি-মানুষের কল্যাণ এবং এলাকার উন্নয়ন করবেন, সাধারণ লোকজনের প্রত্যাশা পাহাড়ে সাম্প্রদায়িক-সম্প্রীতির বন্ধন মজবুত করতে পারবেন এমন নেতৃত্বকেই চান তারা। তবে সংসদ নির্বাচন নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু, সুন্দরের প্রত্যাশায় সাধারণ ভোটাররা।
এদিকে বোমাং রাজা ক্যজসাইন এর নাতনি ও ১৫তম বোমাং রাজপুত্র অংশৈ প্রু চৌধুরীর ছেলে বিএনপির প্রার্থী সাচিং প্রু জেরীর স্ত্রী মমচিং মারমাও নির্বাচনী প্রচারণায় কম যাচ্ছেন না। মহিলাদলের নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে প্রত্যন্ত এলাকা ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ধানের শীষের পক্ষে তিনি চষে বেড়াচ্ছেন ভোটের মাঠ। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন প্রচারণা। ভোটারদের কাছে গিয়ে স্বামীর পক্ষে নানা প্রতিশ্রুতিও দিচ্ছেন। এবিষয়ে জেরী পত্নী মমচিং মারমা বলেন, আমি রাজনীতির মানুষ না হলেও স্বামীর কারণে বান্দরবানের রাজনীতিটা খুব কাছ থেকে দেখেছি। মানুষের কাছ থেকে আশানুরূপ সাড়া পাচ্ছি বলে কষ্ট হলেও সাধারণ ভোটারদের সমর্থন চেয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিচ্ছি। আমার প্রচারণায় আমি নারীদের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত, বাল্য বিয়ে, যৌতুকবিরোধী কর্মকান্ডকে গুরুত্ব দিয়ে ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। তবে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী বিএনপির প্রার্থী সাচিং প্রু জেরী ও আ.লীগের প্রার্থী বীর বাহাদুর দুইজনেই। ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মুফতি শওকতুল ইসলাম এবং ইসলামী ঐক্যজোট প্রার্থী মো. বাবুল হোসেন জেলার বিভিন্ন স্থানে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন এবং ভোটারদের কাছে ভোট চাচ্ছেন।
অপরদিকে বান্দরবানের চলমান উন্নয়ন অগ্রগতির ধারা বজায় রাখার স্বার্থে আওয়ামী লীগকে পুনরায় নির্বাচিত করার আহব্বান জানিয়ে জেলার বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্চেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী বীর বাহাদুর। তিনি জেলার রুমা, রোয়াংছড়ি, থানচি, লামা, আলীকদম, নাইক্ষ্যংছড়ি এবং জেলা সদরসহ ৭টি উপজেলায় সকাল থেকে রাত পর্যন্ত প্রতিটি মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে নৌকার পক্ষে ভোট প্রার্থনা চাচ্ছেন। বীর বাহাদুর বিগত ২৫ বছরের উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরে বলেন, বর্তমান সরকারের সময়ে বান্দরবানে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পর্যটন, কৃষি, এবং যোগাযোগ খাতসহ ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। এখনো অনেক উন্নয়ন প্রকল্প চলমান রয়েছে। তবে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে তিনি আবারও নৌকায় ভোট দেওয়ার আহবান জানান।
জেলা বিএনপির প্রার্থী সাচিং প্রু জেরী নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু এবং জনগণ স্বচ্ছভাবে যাতে ভোট দিতে পারেন প্রশাসনের প্রতি এই আহবান জানিয়ে বলেন, এই মহুর্তে আমাদের সবচেয়ে বড় কাজ হলো দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি আর গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা। আমরা ধানের শীষের প্রতীক নিয়ে প্রতিটি জনগণের দুয়ারে দুয়ারে যাচ্ছি এবং আশা করি বিপুল ভোটে বান্দরবানে বিএনপির ধানের শীষের বিজয় হবে। তিনি জেলার ৭টি উপজেলা ২টি পৌরসভা এবং ৩৩ ইউনিয়নে গণসংযোগ, পথসভা ও নির্বাচনী জনসভা করে যাচ্ছেন। তবে তিনি ভোটের মাধ্যমে দেশের গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং জনগণের ভোটের অধিকার রক্ষা করা হবে। সকল শ্রেণিপেশার মানুষকে জাতীয়তাবাদী দল ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পতাকাতলে এসে ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিত করার আহব্বান জানান।