বান্দরবানে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি

36

গত শনিবার থেকে টানা ভারী বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে বান্দরবানে। টানা এই বর্ষণের ফলে পাহাড়ি এই অঞ্চলের মানুষের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ভোররাত থেকে পাহাড়ি ঢল ও নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে নতুন করে জেলার বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। টানা তিনদিনের মতো গতকালও সড়ক যোগাযোগ বন্ধ ছিল বান্দরবানে। সড়কের বিভিন্ন জায়গা পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় আলীকদম এবং পাহাড় ধসে থানচি উপজেলায় সড়ক যোগাযোগ বন্ধ ছিল।
বিরূপ আবহাওয়ায় নাইক্ষ্যংছড়িতে পাহাড় থেকে পড়ে মারা গেছে এক উপজাতী নারী।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টানা বর্ষণ ও সাঙ্গু নদীতে উজানের পানি বৃদ্ধি পেয়ে জেলা শহরের আর্মিপাড়া, ইসলামপুর, উজানীপাড়া, শেরে বাংলা নগরে কোথাও হাঁটু আবার কোথাও কোমর পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়াও সাঙ্গু নদীর তীরবর্তী পাড়াগুলো নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে ডুবে গেছে। এতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
এদিকে জেলা সদর ছাড়াও বিভিন্ন উপজেলায় নদী, ঝিরি এবং পাহাড়ি ঢলের পানিতে নীচু এলাকাগুলো প্লাবিত হয়েছে। লামা পৌরসভার নুনারবিল, বাজারপাড়া, লাইনঝিরি, শিলেরতোয়া, চেয়ারম্যান পাড়া, বাস স্টেশন নয়াপাড়া পানিতে তলিয়ে গেছে। নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা সদরের ধুংরী হেডম্যান পাড়া, বড়–য়া পাড়া ও ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু কোণারপাড়া, বাইশারীর নারিচবুনিয়া এলাকায় নদী ও পাহাড়ি ঢলের পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বিরূপ আবহাওয়ার মাঝে পাহাড় থেকে পড়ে মারা গেছেন মাচিং চাক নামে এক নারী। তিনি নতুন চাকপাড়ার ক্রাথোয়াই চাকের স্ত্রী।
থানচি উপজেলা সদরের নতুনপাড়া এলাকায় নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়াও বাগানপাড়া বৈক্ষনঝিরি এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এছাড়াও থানচি বাজারের পূর্ব পাশে টিএন্ডটি পাড়া এলাকাটিতে পাহাড় ধসের সম্ভাবনা রয়েছে।
আলীকদম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম জানান, রেফারফাড়ি ইউপি সংলগ্ন এলাকা, লাইনঝিরি ও শিবাতলীপাড়া এলাকায় পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় আলীকদমের সাথে চকরিয়ার মূল সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। উপজেলা সদরের খুইল্লামিয়াপাড়ায় বেশ কয়েকটি বাড়ি পানিতে তলিয়ে গেলেও এখন পানি কমতে শুরু করেছে। তবে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে নি¤œাঞ্চলগুলো প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে টানা তৃতীয় দিনের মতো বৃহস্পতিবারও বান্দরবান জেলা সদরের সাথে সারাদেশের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল। বান্দরবান-কেরাণীহাট সড়কের বাজালিয়া বড় দুয়ারায় গত বুধবার পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার সড়ক পানিতে তলিয়ে থাকায় বিচ্ছিন্ন ছিল সড়ক যোগাযোগ। গতকাল বৃহস্পতিবার সাতকানিয়ার বাজালিয়া অংশে শঙ্খ নদীর বাধ ভেঙে আরো প্রায় ১ কিলোমিটার সড়ক নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। ফলে এ পথে যাতায়াতকারীদের দুর্ভোগ বেড়েছে। মূল সড়কে পানির পরিমাণ কোথাও হাঁটু সমান, কোথাও কোমর সমান। ফলে এ পথের যাত্রীদের কাছ থেকে বেপোরোয়া ভাড়া আদায় করছে বান্দরবান-বাজালিয়া, বাজালিয়া-কেরাণীহাট পথে চলাচলকারী সিএনজি অটোরিক্সা, রিক্সা, ব্যাটারি চালিত রিক্সা, ভ্যান এবং মাহেদ্রগুলো। গত বুধবার যেখানে ভাড়া নেয়া হয়েছে ২০ টাকা, সেখানে আজ ভাড়া আদায় করা হচ্ছে ৩০ টাকা। গত দুই-তিনদিন ধরে ১৫ কিলোমিটারের বান্দরবান থেকে বাজালিয়া (পানিরগোড়া হিসেবে পরিচিতি পাওয়া) পর্যন্ত ৫০ টাকা নেয়া হলেও বৃহস্পতিবার থেকে নেয়া হচ্ছে ৭০ টাকা পর্যন্ত। অন্যদিকে পানির অংশ থেকে কেরাণীহাট পর্যন্ত ৭ কিলোমিটার দূরত্বের এই সড়কটিতে গত কয়েকদিন ২৫ টাকা নেয়া হলেও গতকাল বৃহস্পতিবার যাত্রীদের বাধ্য করে অনেকটাই সিন্ডিকেট করে ৬০ টাকা ভাড়া আদায় করছে সিএনজি অটোরিক্সাগুলো। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন যাত্রীরা। প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে প্লাবিত হওয়ায় জেলা সদরের বড় পরিবহনগুলো চলাচল করেনি। এছাড়াও গতকাল বান্দরবান সদরের পুরাতন বাস স্টেশন এলাকা সাঙ্গু নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় কোমর সমান পানিতে তলিয়ে গেছে।
বান্দরবান জেলা প্রশাসক মো. দাউদুল ইসলাম জানান, বন্যা ও দুর্যোগে যেকোনো ঝুঁকি মোকাবেলার জন্য জেলা ও উপজেলা প্রশাসনসহ অন্যান্য সংস্থাগুলো সার্বক্ষণিক কাজ করছে। এছাড়াও পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে বসবাসকারীদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে মাইকিং অব্যাহত রয়েছে। আশ্রয় নেওয়া মানুষের মাঝে ত্রাণ তৎপরতা চালানো হচ্ছে।