বাদ পড়াদের ভবিষ্যৎ কী?

37

ভারতের আসামে শনিবার প্রকাশিত চূড়ান্ত নাগরিকপঞ্জি থেকে বাদ পড়েছেন ১৯ লাখ ৬ হাজার ৬৫৭ জন। রাষ্ট্রহীন হয়ে পড়ার ঝুঁকিতে পড়া এ মানুষগুলোর সামনে কী ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে? যদিও রাজ্য সরকার বলেছে, ন্যাশনাল রেজিস্টার অব সিটিজেন্স (এনআরসি) তালিকা থেকে বাদ পড়া ব্যক্তিরা এখনই বিদেশি বলে গণ্য হবেন না। বরং তাদের সামনে এখনো নাগরিকত্ব প্রমাণের সুযোগ আছে।
এজন্য আগামী ১২০ দিনের মধ্যে তাদের ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে আবেদন করতে বলা হয়েছে। এই বিষয়ে শুনানির জন্য রাজ্যজুড়ে ১ হাজার ট্রাইব্যুনাল গড়ে তোলা হবে বলেও জানানো হয়েছে। খবর বিডিনিউজের
ট্রাইব্যুনালে হেরে গেলেও সব আশা শেষ হয়ে যাচ্ছে না। কারণ, তারপর হাই কোর্ট এবং সেখান থেকে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার সুযোগ থাকছে। কিন্তু ভারতে বিচার ব্যবস্থা এমনিতেই দীর্ঘমেয়াদী। তার উপর প্রতিটি আদালতেই সাধ্যের অতিরিক্ত মামলার বোঝা রয়েছে। এ অবস্থায় নাগরিকত্ব প্রমাণের সম্ভাব্য দীর্ঘ এবং জটিল আপিল আবেদন প্রক্রিয়া দেশটির আদালতকে আরো ভারাক্রান্ত করবে।
এতো গেলে আদালতের অবস্থা। এবার দেখা যাক বাদ পড়াদের তালিকা কারা। নাগরিকপঞ্জি থেকে যাদের নাম বাদ পড়েছে তারা মূলত অতি দরিদ্র এবং বেশিরভাগই মুসলমান বলে ধারণা করা হচ্ছিল। তবে তালিকা প্রকাশের পর কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপির রাজ্য নেতারা বলছেন, বাঙালি অনেক হিন্দুর নামও তালিকা থেকে বাদ পড়েছে।
দুটি ক্ষেত্রেও দেখা যাবে গরিব লোকজনই আসলে বাদ পড়েছেন। দরিদ্র এ মানুষগুলো আদালতের দ্বারে দ্বারে ঘোরার এবং মামলা লড়ার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ কোথা থেকে পাবে সেটাও বড় প্রশ্ন।
আসামের লেখিকা সঙ্গীতা বড়ুয়া পিশারতি বলেন, “যাদের নাম তালিকায় নেই তারা এরই মধ্যে নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আতঙ্কিত। তার অন্যতম প্রধান কারণ ফরেইনার্স ট্রাইব্যুনালের অসহযোগিতাপূর্ণ আচরণ। অনেকেই এটা নিয়ে অভিযোগ করছেন। ফলে তাদের ট্রাইব্যুনালে যেতে হবে এটা ভেবেই অনেকে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।”
যাবতীয় আইনী প্রক্রিয়া শেষে যারা বিদেশি বলে ঘোষিত হবেন তাদের নিয়ে কী করবে রাজ্য বা কেন্দ্রীয় সরকার। ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার এর আগে বেশ জোর দিয়েই ‘অবৈধ মুসলমান অভিবাসীদের’ বাংলাদেশে বিতাড়নের কথা বলেছিল। কিন্তু প্রতিবেশী বাংলাদেশ নিশ্চিতভাবেই তাদের গ্রহণ করবে না। যদিও বাংলাদেশ সরকার চূড়ান্ত নাগরিকপঞ্জি নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করেনি।
নাগরিকপঞ্জিতে বাদ পড়াদের ‘অবৈধ বাংলাদেশি’ হিসেবে চিহ্নিত করে ভারত থেকে বের করে দেওয়া হতে পারে বলে যে আলোচনা তা নিয়ে বাংলাদেশের ভেতরেও উদ্বেগ রয়েছে। কারণ, ইতোমধ্যেই প্রতিবেশী আরেক দেশ মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা মুসলমান বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। নতুন আরো শরণার্থীর বোঝা তারা নিতে চাইছে না।
তবে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর তার সাম্প্রতিক ঢাকা সফরে বাংলাদেশকে আশ্বস্ত করে বলেন, “এটা একান্তই ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়।”
বিদেশি ঘোষিত হওয়া লোকজনকে যদি বিতাড়ন করা নাও করা হয় সেক্ষেত্রে তারা নিজেদের সম্পত্তির দখল পাবে কিনা বা একজন নাগরিক যেসব সামাজিক সুবিধা পান সেগুলো পাবেন কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন আছে।
হতে পারে বন্দিশিবির থেকে ছাড়া পাওয়ার পর তাদের মৌলিক কিছু সুযোগ সুবিধাসহ কাজ করার অনুমতি দেওয়া হবে। কিন্তু তারা আর ভোট দিতে পারবেন না।