বাণিজ্যে ঘাটতি ৯৭ কোটি ৯০ লাখ ডলার

19

গত জুলাই মাসে বিভিন্ন পণ্য আমদানিতে বাংলাদেশ ব্যয় করেছে ৪৮০ কোটি ৬০ লাখ ডলার। একই সময়ে বাংলাদেশ বিভিন্ন দেশে পণ্য রফতানি করে আয় করেছে ৩৮৭ কোটি ৭০ লাখ ডলার। এই হিসাবেই গত জুলাই মাসে সামগ্রিক বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৭ কোটি ৯০ লাখ ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত বছরের জুলাই মাসে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ১১৬ কোটি ডলার। এই হিসাবে এক বছরে বাণিজ্য ঘাটতি কমেছে ২০ কোটি ডলার। অবশ্য ২০১৮-১৯ অর্থবছরের পুরো সময়ে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৫৪৯ কোটি ডলার। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ঘাটতি ছিল ১ হাজার ৮১৭ কোটি ডলার।
এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবে (কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স) ২৪ কোটি ডলার উদ্বৃত্ত রয়েছে। যদিও গত অর্থবছরের জুলাই মাসে ১৭ কোটি ৯০ লাখ ডলারের ঘাটতি (ঋণাত্মক) ছিল।
বাণিজ্য ঘাটতি কমে আসার পাশাপাশি কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স উদ্বৃত্ত হওয়াকে দেশের অর্থনীতির জন্য স্বস্তিদায়ক বলে মনে করেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষক ড. জায়েদ বখত। তিনি বলেন, ‘তবে এক মাসের তথ্যের ওপর মন্তব্য করা ঠিক হবে না। আগামী দিনগুলোতে যদি আমদানি ব্যয় কমিয়ে আনা সম্ভব হয়, তাহলে দেশ আরও সুফল পাবে। রেমিট্যান্স ও রফতানি আয়ের প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা গেলে এই অর্থবছর শেষে লেনদেন ভারসাম্যে উদ্বৃত্ত ধরে রাখা সম্ভব হবে’। তিনি উল্লেখ করেন, খাদ্যশস্য উৎপাদনে গত কয়েক বছরের সাফল্যের ধারা অব্যাহত থাকলে আমদানি ব্যয় কমানো সম্ভব হবে।গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে চলতি হিসাবের ভারসাম্য বা ব্যালেন্স অফ পেমেন্টে ৫২৫ কোটি ৪০ লাখ ডলারের ঘাটতি (ঋণাত্মক) নিয়ে শেষ হয়। আগের অর্থবছরে অর্থাৎ ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ঘাটতি ছিল ৯৫৬ কোটি ৭০ লাখ ডলার। খবর বাংলা ট্রিবিউনের
প্রসঙ্গত, নিয়মিত আমদানি-রফতানিসহ অন্যান্য আয়-ব্যয় চলতি হিসাবের অন্তর্ভুক্ত। এই হিসাব উদ্বৃত্ত থাকার অর্থ- নিয়মিত লেনদেনে দেশকে কোনো ঋণ নিতে হচ্ছে না। আর ঘাটতি থাকার মানে হলো- সরকারকে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, আর্থিক হিসাবে (ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট) ২৪ কোটি ৯০ লাখ ডলার ঘাটতি দেখা দিয়েছে। গত বছরের জুলাই মাসে এই অ্যাকাউন্টে ১৪ কোটি ডলার উদ্বৃত্ত ছিল। অবশ্য জুলাই মাসে সামগ্রিক লেনদেনের ভারসাম্যে (ওভারঅল ব্যালান্স) উদ্বৃত্ত হয়েছে ১২ কোটি ৪০ লাখ ডলার। গত বছরের জুলাইতে এক্ষেত্রে ১৯ কোটি ৯০ লাখ ডলারের ঘাটতি ছিল।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব মতে, সামগ্রিকভাবে জুলাই মাসে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) বেড়েছে। এই বছরের জুলাই মাসে বাংলাদেশে এফডিআই এসেছে ৩৪ কোটি ৪০ লাখ ডলার। গত বছরের জুলাই মাসে এসেছিল ৩৬ কোটি ৮০ লাখ ডলার। এই হিসাবে গত জুলাইয়ের তুলনায় এই বছরের জুলাইতে এফডিআই বেড়েছে ৬ দশমিক ৯৮ শতাংশ। এছাড়া, বাংলাদেশে নিট এফডিআই এসেছে ২১ কোটি ৪০ ডলার। আগের বছরে একই মাসে এসেছিল ২০ কোটি ডলার। এই হিসাবে নিট এফডিআইতেও ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান মুনাফার অর্থ দেশে নিয়ে যাওয়ার পর যেটা অবশিষ্ট থাকে, সেটাকেই নিট এফডিআই বলা হয়। তবে পুঁজিবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ (পোর্টফোলিও ইনভেস্টমেন্ট) কমে এসেছে। গত বছরের জুলাই মাসে পুঁজিবাজারে ১ কোটি ৭০ লাখ ডলারের নিট এফডিআই এসেছিল। এই বছরের জুলাইয়ে এসেছে ৭০ লাখ ডলার। এই বছরের জুলাইতে প্রবাসীদের বিনিয়োগ (ইনভেস্টমেন্ট বাই এনআরবি) এসেছে ২ কোটি ১০ লাখ ডলার। গত বছরের জুলাইতে এসেছিল ২ কোটি ৬০ লাখ ডলার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, জুলাই মাসে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ বাবদ বাংলাদেশে এসেছে ৩৮ কোটি ৮০ লাখ ডলার। গত বছরের জুলাইতে এসেছিল ২৬ কোটি ৫০ লাখ ডলার।
এদিকে, সেবাখাতে বেতনভাতা বাবদ বিদেশিদের পরিশোধ করা হয়েছে ৮৭ কোটি ৮০ লাখ ডলার। আর বাংলাদেশ এ খাতে আয় করেছে ৬৩ কোটি ১০ লাখ ডলার। জুলাইয়ে প্রবাসীদের আয় থেকে রেমিট্যান্স এসেছে ১৫৯ কোটি ৮০ লাখ ডলার, যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ১৩১ কোটি ৮০ লাখ ডলার। রেমিট্যান্সে ২১ দশমিক ২৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।