বাঘাইছড়ির সন্ত্রাসী হামলার ঘটনাস্থল পরিদর্শনে চট্টগ্রামের জিওসি

86

রাঙামাটির বাঘাইছড়ির সন্ত্রাসী হামলার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন, চট্টগ্রাম ২৪ পদাতিক ডিভিশনের এরিয়া কমান্ডার (জিওসি) মেজর জেনারেল মতিউর রহমান। বুধবার সকালে পরিদর্শনকালে তার সফরসঙ্গী ছিলেন, খাগড়াছড়ি রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হামিদুল হক, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক, রাঙামাটির জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশিদ ও পুলিশ সুপার মো. আলমগীর কবিরসহ প্রশাসনিক ও সামরিক বেসামরিক কর্মকর্তারা। ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে মারিশ্যা জোনে স্থানীয়দের সঙ্গে মতবিনিময় করেন জিওসি।
এ সময় জিওসি বলেন, সন্ত্রাসীরা যেখানে থাকুক- তাদের খুঁজে বের করা হবেই। সরকারি দায়িত্ব পালনকারীদের ওপর সন্ত্রাসী হামলা করে তারা শান্তিচুক্তি ভঙ্গ করেছে। সন্ত্রাসীরা কারও জাত বা গোষ্ঠীর নয়। তাদেরকে এবার কঠোর হস্তে দমন করা হবে। পাহাড়ে সন্ত্রাসীদের নির্মূল করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রস্তুত। মতবিনিময় শেষে নিহত পরিবার প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা অনুদান প্রদান করেন জিওসি।
১৮ মার্চ দ্বিতীয় ধাপে অনুষ্ঠিত বাঘাইছড়ি উপজেলা পরিষদের ভোট শেষে সন্ধ্যার দিকে গাড়িবহরে উপজেলা সদরে ফিরছিলেন, নির্বাচন কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্মীরা। পথে দীঘিনালা-মারিশ্যা সড়কের ৯ কিলোমিটারে তাদের গাড়িবহরে ব্রাশফায়ার করে অজ্ঞাত বন্দুকধারীরা। এতে প্রাণ হারান ৭ জন। গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন ১৭ জন।
নিহতরা হলেন- আনসার-ভিডিপি সদস্য ও বাঘাইছড়ি উপজেলা সদরের করেঙ্গাতলীর বাসিন্দা মৃত মানিক দত্তের ছেলে মিহির কান্তি দত্ত, পশ্চিম লাইল্যাঘোনার বাসিন্দা মৃত নুর আলীর মেয়ে ও রহমত উল্ল্যার স্ত্রী বিলকিস আক্তার, কাচালং বাজারের বাসিন্দা মো. সেলিমের ছেলে আল-আমিন, একই এলাকার বাসিন্দা তসলীম আহম্মদের স্ত্রী জাহানারা বেগম, উপজেলা সদরের পূর্ব লাইল্যাঘোনার বাসিন্দা আবদুল কুদ্দুসের ছেলে মো. আবু তৈয়ব (সহকারী শিক্ষক,নিউ লাইল্যাঘোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়), বাঘাইছড়ি উপজেলা সদরের আবু তাহেরের ছেলে আমির হোসেন (সহকারী শিক্ষক, কিশলয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়) এবং খাগড়াছড়ির দীঘিনালার মেরুন এলাকার বাসিন্দা তপতি চাকমার ছেলে মন্টু চাকমা। নির্বাচনে আবু তৈয়ব ও আমির হোসেন পোলিং অফিসার এবং মন্টু চাকমা নির্বাচিত চেয়ারম্যান প্রার্থী সুদর্শন চাকমার পোলিং এজেন্ট হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন। ঘটনার প্রায় তিন দিনের মাথায় ২০ মার্চ ৪০-৫০ জনকে অজ্ঞাত আসামি দিয়ে পুলিশ বাদী হয়ে থানায় মামলা হয়। থানার এসআই মো. আক্তার বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। পুলিশ মামলার তদন্ত চলছে বললেও এ পর্যন্ত কোনো আসামিকে গ্রেফতার করতে পারেনি।
বাঘাইছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমএ মঞ্জুর বলেন, মামলার তদন্ত শুরু হয়েছে। বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে যাচাই বাছাই ও তদন্ত চলছে। এসব প্রক্রিয়া শেষ হলেই হয়তো আপনারা সুখবর শুনতে পাবেন। তাই দ্রুত অগ্রগতি আশা করছি। তা ছাড়া তদন্ত কাজ তো দ্রæত শেষ করা যাবে না। প্রকৃত আসামিদের গ্রেফতার করা হবে। আসামি ধরতে বিভিন্ন স্থানে তল্লাশি অভিযানও চালানো হচ্ছে। এর আগে ২১ মার্চ বাঘাইছড়ির ৭ খুনের ঘটনার তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। কমিটিতে রয়েছেন, স্থানীয় সরকার বিভাগের চট্টগ্রামের পরিচালক দীপক চক্রবর্তী, রাঙামাটির অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. নজরুল ইসলাম, চট্টগ্রাম অঞ্চলের অতিরিক্ত ডিআইজি ফয়েজ আহমেদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সদস্য (যুগ্ম সচিব) আশীষ কুমার বড়–য়া, চট্টগ্রাম ৩০ আনসার ব্যাটালিয়নের পরিচালক ও অধিনায়ক মো. নুরুল আমিন, বিজিবি রাঙামাটি সেক্টরের বাঘাইহাট জোনের মেজর আশরাফ ও রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের মুখ্যনির্বাহী কর্মকর্তা মো. ছাদেক আহমদ। কমিটিকে গঠনের পরবর্তী ১০ কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন, বাংলাদেশ জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের একটি দল।
অন্যদিকে প্রশাসনিক, সামরিক ও বেসামরিক পদস্থ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করলেও এ পর্যন্ত সরকারের কোনো মন্ত্রী, স্থানীয় এমপি, উন্নয়ন বোর্ড বা পার্বত্য জেলা পরিষদের কোনো চেয়ারম্যান নিহতদের পরিবারের সদস্যদেরও দেখতে যাননি।