বাঘাইছড়িতে ৮জন নিহতের ঘটনায় ১বছরেও শুরু হয়নি বিচার প্রক্রিয়া উপজেলা পরিষদের তহবিল গঠন

43

রাঙামাটি প্রতিনিধি

জেলার প্রত্যন্ত দুর্গম বাঘাইছড়ি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ২০১৯ সালের ১৮ মার্চ নির্বাচনী গাড়ি বহরে পাহাড়ে বসবাসরত আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের সন্ত্রাসীদের হামলায় ৮জন নির্বাচনী কর্মকর্তা নিহত হয় এবং ৩৩জন আহত হয়েছিল। তাদের মধ্যে শিক্ষক ফুলকুমারির অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। পঙ্গু হয়ে জীবনযাপন করছেন ফুলকুমারি চাকমা। অন্যান্য আহতরাও পার করছেন মানবেতর জীবন। গতকাল বুধবার এই উপজেলার নির্বাচনী সহিংসতার ১বছর অতিবাহিত হয়েছে। কিন্ত বুকভরা হতাশা আর নিহতদের শোকে জর্জরিত ৮পরিবারের স্বজনেরা। সহিংসতার দীর্ঘ ১বছর পর গুরুতর আহত শিক্ষক ফুলকুমারিসহ উপজেলা পরিষদ আহতদের চিকিৎসার জন্য উপজেলার সকল দপ্তর মিলে একটি চিকিৎসা তহবিল গঠন করেছে।
২০১৯ সালের ১৮ মার্চ রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনী দায়িত্ব পালন শেষ করে দুর্গম সাজেক থেকে নির্বাচনী সরঞ্জাম নিয়ে ফেরার পথে দীঘিনালা- মারিশ্যা সড়কের ১১মাইল নামক স্থানে এই সন্ত্রাসী হামলার শিকার হন নির্বাচনী দায়িত্বপালনকারী কর্মকর্তারা। ওই সন্ত্রাসী হামলায় ঘটনাস্থলেই ৭জন নিহত হন। পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আরেক জন নিহত হন। ওই সহিংসতায় সর্বমোট ৮জন নিহত হয়েছিলেন। বাকি ৩৩জন আহত হয়েছিলেন। ওই ঘটনায় ১বছর অতিবাহিত হলেও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারেননি অনেকে। এখনো কেউ কেউ পঙ্গু হয়ে জীবনযাপন করছেন আবার কেউ টাকার অভাবে চিকিৎসা করতে পারছেন না। দুঃখ কষ্টে অতিবাহিত হচ্ছে আহতদের জীবন। নিহত ৮ নির্বাচনী কর্মকর্তার উপর সন্ত্রাসী হামলার দীর্ঘ দিন পরে সাজেকের নির্বাচনী ডিউটিতে অবস্থানরত বাঘাইছড়ি থানার এসঅই আকতার আলী বাদি হয়ে ওই সময়ে অজ্ঞাতনামা ৪০-৫০ জন সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলার প্রধান আসামি ছিলেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেএসএস সাধারণ সম্পাদক বড়ঋষি চাকমা। ওই ঘটনার পর থেকে বড়ঋষি চাকমাসহ তার অনুসারীরা পলাতক রয়েছেন। আসলে এ সহিংসতা কেন হলো কে বা কারা সহিংসতা ঘটিয়েছে তার কোন সুর্নিদিষ্ট তথ্য বা আলামত ১বছরেও বের করতে পারেনি আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। গত ১বছরে এ ঘটনায় সন্দেহজনক পুলিশ ১৪জনকে আটক করে জেলহাজতে প্রেরণ করে। তবে মূল হোতারা ধরাছোঁয়ার বাইরে এমন অভিযোগ নিহতদের স্বজনদের।
নিহতের স্বজনরা বলেন, নির্বাচনের দিন সুস্থ মানুষ নির্বাচনী দায়িত্বে বের হয়ে লাশ হয়ে ঘরে ফিরলো এ পরিস্থিতির কথা কাকে বুঝাবো। ওই দিন আমরা এতই ভয়ভীতিতে ছিলাম তাই মামলা করার সাহস পায়নি। সন্ত্রাসী ধরতে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি। নিহতের স্বজনদের দাবি- ন্যায় বিচার ও আহত-নিহতদের পরিবার- পরিজনকে প্রশাসনিকভাবে সহায়তা করা। তারা বলেন, সন্ত্রাসী কারা আর এঘটনা কারা ঘটাতে পারে সেটা প্রশাসনও ভাল জানে। কিন্তু সন্ত্রাসী হামলার ১বছরেও সঠিক এবং উপযুক্ত বিচার থেকে বঞ্চিত নিহতের স্বজনরা।
এ ব্যাপারে বাঙালি নেতা আবদুল কাইয়ুম বলেন, এসব সন্ত্রাসীদের সঠিক বিচার না হওয়ার কারণে ওই দিন ৮জন নির্বাচনী কর্মকর্তাকে ব্রাশ ফায়ার করে হত্যা করা হয়েছে। পাহাড়ের অবৈধ অস্ত্রধালী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যুগযুগ ধরে আন্দোলন সংগ্রাম করে আসছি। কিন্তু সরকার অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করলে পাহাড়ে একজন সন্ত্রাসীও খুঁজে পাওয়া যাবেনা। ইতিমধ্যে উপজেলা প্রশাসনের তত্ত¡াবধানে নিহত ও আহতদের জন্য একটি তহবিল কমিটি গঠন করা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আহসান হাবিব জিতু বলেন, ওই দিন নির্বাচনী সহিংসতা হামলায় সাজেকের বেটলিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ফুলকুমারির চিকিৎসার ভার নিয়েছেন উপজেলা প্রশাসন। তার চিকিৎসার জন্য দেওয়া হবে ২০লক্ষ টাকা। এ ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে একটি আর্থিক তহবিল কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই তহবিল কমিটির আহবায়ক কাচালং সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ দেব প্রসাদ চাকমা ও সদস্য সচিব উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি। তিনি নিহত ও আহতদের স্বজনদের সকল প্রকার সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন। তিনি আরো বলেন, নিহত স্বজনদের মধ্যে পায়েল দত্তকে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে সরকারি চাকরি দেওয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে যোগ্যতা অনুসারে নিহত স্বজনদের সহায়তা করা হবে। গত সপ্তাহে জেলা প্রশাসক মহোদয় বাঘাইছড়ি পরিদর্শনে এসে নিহত ৮ স্বজনদের মধ্যে একটি করে সেলাই মেশিন ও ১শ’ ওয়ার্ডের সোলার বিতরণ করা হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিহত শিক্ষক তৈয়বের স্ত্রীকে আগামীতে সরকারি চাকরি দেওয়ার ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে চিন্তাভাবনা করা হবে। পঙ্গু ফুলকুমারির চিকিৎসার ব্যয়ভার এবং তার খোঁজ খবর নিতে গ্রামের বাড়িতে ছুটে যান বাঘাইছড়ি উপজেলার নির্বাহী অফিসার মোঃ আহসান হাবিব জিতু।
বাঘাইছড়ি থানার ওসি বলেন-ওই দিনের সন্ত্রাসী ঘটনায় এই থানার একজন এসআই বাদি হয়ে অজ্ঞাতনামা ৪০-৫০ জন সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। বিগত ১ বছরে ১৪জন সন্ত্রাসীকে আটক করে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। বর্তমানে মামলাটি চলমান রয়েছে।