বাংলাদেশ-ভারত যান চলাচল বন্ধ

123

ভারতের সাথে বাংলাদেশের সকল প্রকার যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইটও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তবে বেসরকারি তিনটি সংস্থার ফ্লাইট চলবে মঙ্গলবার পর্যন্ত। একই সাথে বাংলাদেশিদের ভারতে প্রবেশও বন্ধ হয়ে গেছে। এদিকে বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি কোলকাতাসহ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে অবস্থান করছেন। তারা ফিরতে না পেরে বিপাকে পড়েছেন। কোলকাতার হাসপাতালগুলো প্রায় বাংলাদেশি রোগী শূন্য হয়ে গেছে। করোনা আতংকে পশ্চিমবঙ্গের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৩১ মার্চ পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
জানা যায়, ভারত সরকার বাংলাদেশিদের সকল প্রকার ভিসা স্থগিত করেছে। নতুন ভিসা ইস্যুও বন্ধ করে দিয়েছে। যাদের আগের ভিসা রয়েছে তাদের ভিসাও ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত স্থগিত থাকায় কেউ ভারতে যেতে পারছেন না। শুক্রবার বিকাল ৫টার পর থেকে এ নির্দেশ কার্যকর হয়েছে। তবে কোন কোন সীমান্ত দিয়ে ৫টার আগেও বাংলাদেশিদের প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। তাদের ফের দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
সূত্র জানায়, শুক্রবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত সময়সীমা থাকলেও এদিন দিনের বেলায়ও আখাউড়া চেকপোস্ট দিয়ে ভারতে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। করোনা ভাইরাস আতঙ্কে অন্তত ৪৫ জন বাংলাদেশিকে আটকে দিয়েছে ইমিগ্রেশন। তাদের ফের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, শুক্রবার ৪০ থেকে ৪৫ জনের বাংলাদেশির একটি দল ভারতে প্রবেশের জন্যে আখাউড়া সীমান্তে যায়। ভারতের সীমান্ত রক্ষা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, সেই দলের অনেকেই জ্বর, কাশি এবং শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যায় ভুগছেন।
ফলে ত্রিপুরার আখাউড়া চেকপোস্টে ভারতে প্রবেশের জন্য হাজির হওয়া বাংলাদেশের ওই দলটির বৈধ পাসপোর্ট থাকলেও তাদের ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
পশ্চিম ত্রিপুরার জেলা নজরদারি কর্মকর্তা সংগীতা চক্রবর্তী গণমাধ্যমকে বলেন, মোট ৪০-৪৫ জন বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। দেখা গেছে তাদের মধ্যে অনেকেই জ্বর, সর্দি, কাশিসহ নানা উপসর্গে আক্রান্ত। এই ধরনের লক্ষণগুলির সবকটিই কভিড-১৯ এর লক্ষণের সঙ্গে মিলে যায়। সুতরাং, কোনও রকম ঝুঁকি না নিয়ে তাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
জানা যায়, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বিমান, রেল ও বাস যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে ভারত সমস্ত রকম ভিসা স্থগিত করায় শুক্রবার থেকেই দু’দেশের মধ্যে যাতায়াত কমে গিয়েছিল।
জানা যায়, শুক্রবার চট্টগ্রাম থেকে কোনও বাস বেনাাপোলের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়নি। এসি-নন এসি কোনও ধরনের বাস ছাড়েনি। কাউন্টারগুলো খোলা থাকলেও টিকিট বিক্রি হয়নি। অনেকে অগ্রিম নেয়া টিকিট ফেরত দিয়ে টাকা নিয়ে নিচ্ছেন।
শুক্রবার থেকে ভারতের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে বাংলাদেশ বিমান। তবে বেসরকারি কয়েকটি বিমান ফেরত যাত্রীদের আনতে দিল্লি, কলকাতা ও চেন্নাই গিয়েছে। কিন্তু মঙ্গলবার থেকে আর কোনও বিমান যাতায়াত করবে না। ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত এই পরিস্থিতি চলতে পারে। বিমান, রিজেন্ট, নভোএয়ার ও ইউএস বাংলা মিলে ভারতের তিনটি গন্তব্যে সপ্তাহে ৩৭টি বিমান চালায়। ভারত থেকে এয়ার ইন্ডিয়া এবং ইন্ডিগো-ও ঢাকায় আসে। ভারতে ইতিমধ্যেই যাওয়া যাত্রীদের ফিরিয়ে আনতে সোমবার পর্যন্ত কয়েকটি বিমান চালানো হবে।
৫১ জন ভারতীয় নাগরিক নিয়ে শনিবার সকালে ঢাকা থেকে ছেড়ে গেছে ঢাকা-কলকাতা মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেন। এটি ছিলো এই ট্রেনের শেষ ট্রিপ। আগামী ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত ট্রেনের যাত্রা বাতিল করা হয়েছে। তবে তারা সকলে ভারতীয় নাগরিক ও জাতিসংঘের কর্মকর্তা।
জানা গেছে, কোলকাতার হাসপাতাগুলোতে বাংলাদেশি রোগী কমে গেছে। ভিসা স্থগিত করার কথা শুনে অনেকে চলে এসেছেন আবার অনেকে চলে আসার চেষ্টা করছেন। জটিল রোগ না হলে তারা হাসপাতাল ত্যাগ করছেন।
কোলকাতায় অবস্থানকারি সুপ্রিত ধর বাবু জানান, হাসপাতাগুলোতে তিন-চার দিন আগেও ছিল বাংলাদেশি রোগীদের প্রচন্ড ভিড়। কিন্তু দু’দিন ধরে তা দেখা যাচ্ছে না। খুব জটিল রোগী, অপারেশন রোগী ছাড়া বাকিরা হাসপাতালে নেই। তারা দেশে ফেরার চেষ্টা করছেন।
কোলকাতার আরএনটেগর, এ্যাপোলো, কোটারি, ঠাকুর পুকুর ক্যান্সার হাসপাতাল, মেডিকা এএমআরআই, রুবি, উডল্যান্ডসহ কয়েকটি হাসপাতাল ঘুরে কোলকাতায় পড়ুয়া বাংলাদেশি পরাগ দেব জানান, ক’দিদন আগেও হাসপাতালগুলোতে বাংলাদেশি রোগীর ছিল প্রচন্ড ভিড়। এমন কয়েকটি হাসপাতালে সকালে গেলে মনে হত যেন মিনি বাংলাদেশ। কিন্তু শনিবার তেমনটা দেখা যায়নি। খুব কম সংখ্যক বাংলাদেশি রোগী দেখা গেছে। রোগীরা দেশে ফেরার চেষ্টা করছেন।
বাংলাদেশ থেকে প্রতিদিন প্রায় তিন হাজার মানুষ যান ভারতে। এর মধ্যে অর্ধেকই চিকিৎসার জন্য যান। ভিজিট ভিসা নিয়েও চিকিৎসা করতে যান এখান থেকে।
জানা যায়, ভারতে গিয়ে আটকা পড়েছেন হাজার হাজার বাংলাদেশি। হঠাৎ করে ভিসা স্থগিত করায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন তারা। অনেকে বেশি ভাড়া দিয়ে ফ্লাইটে আসলেও বেশিরভাগই আটকে আছেন। কারণ বাস ও ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। কোলকাতায়ও রয়েছেন কয়েক হাজার লোক। যান চলাচল বন্ধ হওয়ায় তারা ফিরতে পারছেন না।
কোলকাতায় যোগাযোগ হয় সাইফুল আলম নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে। তিনি বলেন, হঠাৎ করেই আটকে গেলাম। টাকা পযসাও তেমন নেই। কি করব বুঝতে পারছি না।
গত বছর ১৫ লাখেরও বেশি বাংলাদেশিকে ভারতীয় ভিসা দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে ভারতে বিদেশি পর্যটকের ৬৫.৬১ শতাংশই বাংলাদেশি। ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত ১ কোটি ৩৭ লাখ ৩০ হাজার ২৮২ জন বিদেশি ভারত ভ্রমণ করেছেন। এর মধ্যে বাংলাদেশির সংখ্যা ছিল ২৮ লাখ ৭৬ হাজার। ভারতে মোট বিদেশি পর্যটকের ৬৫ দশমিক ৬১ শতাংশ বাংলাদেশি। ভারতে ভ্রমণকারী বিদেশি নাগরিকের সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশ শীর্ষে আসে ২০১৫ সালে।
এদিকে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কায় পশ্চিমবঙ্গের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার। আগামি ৩১ মার্চ পর্যন্ত আপাতত রাজ্যের সব সরকারি এবং বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার নির্দেশ জারি করেছে মুখ্যমন্ত্রীর দফতর।
আনন্দবাজার পত্রিকার খবরে বলা হয়, সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ পরীক্ষাও স্থগিত রাখা হয়েছে। তবে উচ্চ মাধ্যমিকসহ সিবিএসই এবং আইএসই-র যে সব পরীক্ষা চলছে তা চলবে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শনিবার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, আগামী ৩০ মার্চ ফের পরিস্থিতি বিবেচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।