বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারকে আরও ঋণ দেওয়া হবে

46

বেসরকারি খাতের ঋণ না বাড়িয়ে বরং সরকারের ঋণ আরও বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। যদিও সরকার ইতোমধ্যে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ঋণ নিয়ে ফেলেছে। আগামী ৬ মাসে যেন সরকারের ঋণ ৩৭ দশমিক ৭ শতাংশ বাড়ে, সে ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
গতকাল রবিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রজ্ঞাপনে এই ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এর আগে, গত ১৬ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে মনিটারি পলিসি কমিটি (এমপিসি)-এর ৪৫তম সভায় সরকারকে আরও ব্যাংক ঋণ দেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের সভাপতিত্ব অনুষ্ঠিত এই সভায় বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ অর্থনীতির গতি-প্রকৃতির ওপর আলোচনা করা হয়। এরপর চলতি (২০১৯-২০১০) অর্থবছরের মুদ্রা ও ঋণ কর্মসূচিতে কিছুটা পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। খবর বাংলা ট্রিবিউনের
বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এই অর্থবছরের জুন পর্যন্ত সময়ে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ। গত জুলাইয়ের মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ। তবে, এই সময়ে বেসরকারি খাতে ঋণ বেড়েছে মাত্র ১০ শতাংশ। ডিসেম্বর পর্যন্ত ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৩ দশমিক ২০ শতাংশ।
এদিকে, সরকার যেন ব্যাংক থেকে আগের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আরও ২২ শতাংশ বেশি ঋণ নিতে পারে, সেই ব্যবস্থা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৫ দশমিক ২০ শতাংশ। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে সরকারের ঋণ প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫৯ দশমিক ৪ শতাংশ। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী জুন পর্যন্ত সরকারের ঋণের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৩৭ দশমিক ৭ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, ব্যাংক-বহিভর্‚ত খাত (প্রধানত সঞ্চয়পত্র) থেকে সরকারের ঋণ সংগ্রহের পরিমাণ কমায় সরকার ব্যাংক থেকে টার্গেটের চেয়ে বেশি ঋণ নিয়েছে।
জানা গেছে, ব্যাংকিং খাত থেকে পুরো অর্থবছরের জন্য ঋণ নেওয়ার যে লক্ষ্য ঠিক করেছিল সরকার, গত ছয় মাসেই তার চেয়ে বেশি নিয়েছে। চলতি (২০১৯-২০) অর্থবছরে ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার কথা ছিল ৪৭ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা। অথচ প্রথম ছয় মাসেই (জুলাই-ডিসেম্বর) সরকার ৪৮ হাজার ১৫ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে গভর্নর বলছেন, চলমান বাণিজ্যযুদ্ধ ও সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্যে সৃষ্ট রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বৈশ্বিক উৎপাদন প্রবৃদ্ধির গতি কমে যাওয়ায় ২০১৯ সালের জুলাই-ডিসেম্বরে বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এতে ম্যানুফ্যাকচারিং খাতের প্রবৃদ্ধিও প্রত্যাশার তুলনায় কম হয়েছে। তবে, দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে সেবা খাতের শেয়ার বেশি হওয়ার পাশাপাশি রেমিট্যান্সের প্রবাহ বাড়ার ফলে চলতি অর্থবছরে এ খাতের সাফল্য ইতিবাচক রয়েছে।
ফজলে কবির আরও বলেন, সার্বিকভাবে জিডিপি প্রবৃদ্ধি সরকারের লক্ষ্যমাত্রা ৮ দশমিক ২ শতাংশের কাছাকাছিই থাকবে। তার মতে, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলসহ অন্যান্য পণ্যের মূল্যে কিছুটা ঊর্ধ্বগতি থাকায় গড় সাধারণ মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে সীমিত রাখা কিছুটা চ্যালেঞ্জিং হবে। তবে, অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে পণ্যসামগ্রীর সরবরাহ পরিস্থিতির কাক্সিক্ষত উন্নতির ফলে অর্থবছর শেষে তা লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছিই থাকবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংক খাত থেকে বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তাদের ঋণের প্রবৃদ্ধি সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমেছে। অথচ একই সময়ে রেকর্ড পরিমাণ ঋণ নিয়েছে সরকার। যদিও গত ১০ বছরের মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের সবচেয়ে বেশি ধার করার রেকর্ডটি ছিল গত (২০১৮-১৯) অর্থবছরে। ওই বছর ঋণের পরিমাণ ছিল ৩০ হাজার ৮৯৫ কোটি টাকা। এবার প্রথম ছয় মাসেই সেই রেকর্ড ভেঙে ফেলেছে সরকার। ব্যাংক থেকে নেওয়া সরকারের ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৫৬ হাজার ১১১ কোটি টাকা। অথচ, গত জুনে এর পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৮ হাজার ৯৫ কোটি টাকা।
সার্বিক বিষয়ে তত্ত¡াবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, সরকারের এভাবে ঋণ নেওয়া অব্যাহত থাকলে বেসরকারি বিনিয়োগ ব্যাহত হবে। এমনিতেই বেসরকারি ঋণ অনেক কমে গেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।